ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

সালতামামি

সালতামামি ২০২৩

সমুদ্র নগরী আর পদ্মা সেতুতে ট্রেন চালু, ২৪ সালের চমক বঙ্গবন্ধু রেলসেতু

নিশাত বিজয়, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২৩
সমুদ্র নগরী আর পদ্মা সেতুতে ট্রেন চালু, ২৪ সালের চমক বঙ্গবন্ধু রেলসেতু

ঢাকা: উনিশ শতকে ব্রিটিশ শাসকেরা বাংলার পাট, চাসহ অন্যান্য পণ্যসামগ্রী আমদানি-রপ্তানি কাজে ভারতবর্ষজুড়ে রেল নেটওয়ার্ক তৈরি শুরু করে। এরপর ব্রিটিশ শাসনের পতন ঘটলে রেলের সম্প্রসারণ থেমে যায়।

আর বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে ১৯৯২-৯৩ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের সিদ্ধান্তে সাড়ে ১০ হাজার রেল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অবসরে পাঠালে পরে পুরো রেল ব্যবস্থার ওপরও নেমে আসে দুর্যোগ।

পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালের ৪ ডিসেম্বর রেলপথ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করেন। নতুন মন্ত্রণালয় গঠিত হওয়ার পর রেলখাতে একের পর এক মেগাপ্রকল্প হাতে নেয় সরকার। এরপর গত এক যুগে এ খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রায় দেড় লক্ষ কোটি টাকা।

সেজন্য মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ১২ বছর পরে ২০২৩ সালে এসে সুফল পেতে শুরু করে দেশবাসী। এ বছর চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রেলপথ সম্প্রসারণের মাধ্যমে প্রথমবার ট্রেন যায় সমুদ্র নগরীতে।  

উদ্বোধন করা হয়েছে আরও গুরুত্বপূর্ণ চার মেগাপ্রকল্প ঢাকা-চট্টগ্রামের ডাবল রেলপথ নির্মাণ, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প, খুলনা-মোংলা রেলপথ এবং আখাউড়া- আগরতলা রেল সংযোগ প্রকল্পের।  

খুলনা- মোংলা রেলপথ চালুর মধ্যে দিয়ে রেল নেটওয়ার্কে যুক্ত হচ্ছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর মোংলা। ১৯৫০ সালে মোংলা বন্দর প্রতিষ্ঠা হলেও এতদিন বন্দরটি পিছিয়ে ছিল রেল সংযোগ না থাকায়।  

আর আখাউড়া-আগরতলা রেল সংযোগ প্রকল্পের উদ্বোধনের মাধ্যমে ভারতের উত্তর-পূর্বের সাত রাজ্যের সংযোগ ঘটেছে। একইসঙ্গে এই সাত রাজ্য থেকে বাংলাদেশের রেলপথ করিডোর হিসেবে ব্যবহার করে ভারতীয় ট্রেন কলকাতা যেতে লাগতে পারে মাত্র ৫ ঘণ্টায়। এখন যে পথ যেতে সময় লাগে ৩৬ ঘণ্টা।  

পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের পুরো কাজ চলতি বছর উদ্বোধন হলেই শুরু হবে এ পথে যাত্রী চলাচল।  

স্বাধীনতার ৫২ বছরে যেখানে রেলখাতে বড় প্রকল্প ছিল বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুতে রেল সংযোগ প্রতিষ্ঠা সেখানে এক বছরেই উদ্বোধন হয়েছে ৫ টি মেগা প্রকল্পের।  

এছাড়াও চলতি বছরে আংশিক উদ্বোধন হয়েছে টঙ্গী-জয়দেবপুর ডাবল লাইন রেলপথ প্রকল্পের।  

এ প্রসঙ্গে গত ১১ নভেম্বর কক্সবাজার রেলপথ উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী সামরিক স্বৈরশাসকরা এ দেশের কোনো উন্নতি চায়নি। যার কারণে সাধারণ মানুষের যাত্রী পরিবহনের যে কয়টা মাধ্যম ছিল, একে একে তা সবই ধ্বংস করার চেষ্টা করে। এমনকি রেল লাভজনক নয়, এ অজুহাত তুলে রেলকেও বন্ধ করে দেওয়ার অপচেষ্টা চালানো হয়। রেলের লোকবল গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে বিদায় করে দেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, অনেক রেললাইনও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সর্বশেষ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে খালেদা জিয়া যখন প্রধানমন্ত্রী, তখনই এটা করা হয়।

২৪ সালের চমক বঙ্গবন্ধু রেলসেতু 

যমুনা নদীতে বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার উজানে নির্মিত দেশের বৃহত্তম বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতুর কাজ ২০২৪ সালের অগাস্টে শেষ হবে। ট্রান্স এশিয়ান রেলরুটের অন্যতম এ রেলসেতু কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৮০ শতাংশের বেশি।

বঙ্গবন্ধু সেতুতে ট্রেন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে নেওয়া হয় বঙ্গবন্ধু রেল সেতু প্রকল্প। প্রথমে দেশের বৃহত্তম এ রেল সেতুর নির্মাণব্যয় ৭ হাজার ৪৭ কোটি টাকা থাকলেও পরে বেড়ে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) এ প্রকল্পে ঋণ দিচ্ছে।  

বর্তমানে ৪৮টি ট্রেন বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু দিয়ে চললেও ২০২৪ সালে যখন বঙ্গবন্ধু রেলসেতু উদ্বোধন হলে ৮৮ টি ট্রেন চলাচল করবে, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় পণ্যবাহী ট্রেন থাকবে। যার মাধ্যমে উত্তরবঙ্গ থেকে সহজে পণ্য পরিবহন করা যাবে রাজধানী ঢাকাতে।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু দিয়ে সাধারণ ট্রেন ছাড়াও দ্রুতগতির (হাইস্পিড) ট্রেনও চালানোর উপযুক্ত করে নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলে সেতুতে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৫০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানো যাবে। তবে শুরুতে (উদ্বোধনের এক বছর) সাধারণত ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করবে।

বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরাল ডুয়েলগেজ ডাবল ট্র্যাকসহ প্রায় ৪ দশমিক ৮০ কিলোমিটার এই রেলসেতুর দুইপাশে ০.০৫ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট, ৭ দশমিক ৬শ ৬৭ কিলোমিটার রেলওয়ে অ্যাপ্রোচ এমব্যাংকমেন্ট এবং লুপ ও সাইডিংসহ মোট ৩০ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করা হবে।  

একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু রেলসেতুতে পাশাপাশি ৩টি স্টেশন বিল্ডিং, ৩ টি প্লাটফর্ম ও শেড, ৩টি লেভেল ক্রসিং গেট ও ৬ টি কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। রেল সেতুর পূর্ব পাশে লুপ লাইনসহ প্রায় সাড়ে ১৩ কিলোমিটার, ১৩টি কালভার্ট ও ২টি সংযোগ স্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে।

৬৪ জেলায় রেলপথ নিতে মহাপরিকল্পনা

বাংলাদেশের ৬৪ জেলার মধ্যে এতদিন ৪৩টি জেলায় রেলপথ চালু ছিল। ২০২৩ সালে দেশের রেল নেটওয়ার্কে নতুন ৫ জেলা যুক্ত হয়ে সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৮ টিতে।

এরমধ্যে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের ঢাকা-ভাঙ্গা অংশের উদ্বোধনের মাধ্যমে তিন জেলা যুক্ত হল- মুন্সিগঞ্জ, মাদারীপুর ও শরীয়তপুর।  

আর খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্প ও দোহাজারী-কক্সবাজার রেল প্রকল্পে যুক্ত হয়েছে- বাগেরহাট ও কক্সবাজার।  

আর ২০২৪ সালে আরও দুই নতুন জেলা যুক্ত হলে রেল সংযোগে প্রবেশ করবে ৫০ জেলা। এরমধ্যে পদ্মা রেল সংযোগের পুরো প্রকল্পের উদ্বোধন নড়াইল জেলা আর মধুখালী-মাগুরা রেলপথের উদ্বোধন যুক্ত হবে মাগুরা জেলা।  

তারপর ধীরে ধীরে রেলওয়ের বেশ কয়েকটি প্রকল্পের মাধ্যমে যুক্ত হবে বাকি জেলাসমূহ। এর মধ্যে প্রথম ধাপে যুক্ত হবে সাতক্ষীরা, বরিশাল, রাঙামাটি, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর ও মেহেরপুর রেলপথের আওতায় আসবে।  

আর ২০৪৫ সালের মধ্যে সর্বশেষ ধাপে লক্ষ্মীপুর, শেরপুর, মানিকগঞ্জ, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলা রেল সংযোগে যুক্ত হবে।

রেলকে প্রত্যেকটি জেলার সঙ্গে সম্প্রসারিত করা প্রসঙ্গে নূরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, আমরা আমাদের রেলকে প্রত্যেকটি জেলার সঙ্গে সম্প্রসারিত করব। আমাদের পোর্টগুলোতে (বন্দরগুলো) সম্প্রসারিত করব। আমাদের রেলগুলোকে ইলেকট্রনিক ট্রেকে রূপান্তরিত করব। আমাদের যে সিঙ্গেল লাইন আছে সেগুলো ধীরে ধীরে ডাবল লাইনে রূপান্তর করব।

 

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২৩

এনবি/এমএম 
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।