ফেনী: ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট। ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরামে ঝরছিল ভারী বর্ষণ, উজানের পানি ভাসিয়ে নিচ্ছিল জনপদ।
২৪’র জুলাই-আগস্ট ছিল বাংলাদেশের অন্যতম ইতিহাস লেখনের মাস। এ দুই মাসে দেশ দেখেছে অদম্য তারুণ্যের শক্তি। তাদের হাতে লেখা হয় লাল বিপ্লব। কিন্তু তার আগে সারা দেশে শহীদ হন শত শত মানুষ। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে দেশের আনাচে-কানাচে নিজাম উদ্দিন হাজারীর রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলো চালিয়েছিল তাণ্ডবলীলা। ফেনীও বাদ যায়নি এ ন্যক্কারজনক পরিস্থিতি থেকে।
ছাত্র-জনতাকে নারকীয় হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষভাবে নির্দেশনা দিয়েছিলেন সদর আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী। ঢাকার বাইরে জায়গায় পতিত সরকারদলীয়রা সবচেয়ে বেশি হত্যাকাণ্ড চালায় মহিপালে। ফেনীর রাজপথ রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল। নিস্তব্ধ হয়ে পড়েছিলো পুরো জনপদ। শেষকালে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগে অর্জিত হয়ে ইতিহাসের অন্যতম বিজয়। স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ ও ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার হাত থেকে মুক্তি পায় দেশ।
একটা সময় ফেনীর গডফাদার হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জয়নাল হাজারী। বীর মুক্তিযোদ্ধা হলেও হেন অপরাধ ছিল না যা তিনি ফেনীর মানুষের সঙ্গে করেননি। অপরাধ করেছিলেন পাহাড়সম, যে কারণে তাকে পালিয়ে যেতে হয়েছিল। দিন গড়িয়ে মাস, মাস পেরিয়ে বছর শেষ হলে জয়নালের অপরাধের খড়ি হাতে নেন নিজাম হাজারী। গড়েছিলেন নিজের সাম্রাজ্য। যেখানে ছিল গুম, হত্যা, সন্ত্রাস, অর্থ লোপাটের মতো হাজারো অপরাধ। আওয়ামী লীগের বড় নেতা হওয়ার আগে নিজাম উদ্দিন হাজারী গাড়ি চালকের কাজ করতেন। আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার হাতে হাত রেখে চড়েন ফ্যাসিবাদের সিঁড়িতে। হয়ে ওঠেন ভয়ংকর গণহত্যাকারী।
ফেনী শহরের লামী হাজারী বাড়ির মরহুম জয়নাল আবেদীনের ছোট ছেলে নিজাম উদ্দিন। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার চূড়ান্ত বিজয় অর্জন হওয়ার পর নিজ এলাকা থেকে পালান তিনি। ফেনীতে অবসান হয় হাজারী যুগের। তার হাজার কোটি টাকার বাড়ি জ্বালিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা।
আশির দশকের শেষ দিকে নিজাম হাজারী ছিলেন চট্টগ্রামের একজন অস্ত্রধারী ক্যাডার। ওই সময় তিনি চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের নেতা আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী ছিলেন। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে তিনি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হন। তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে ছিনতাইসহ অন্তত আটটি মামলা ছিল। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ফেনীর তৎকালীন গডফাদার হিসেবে পরিচিত জয়নাল হাজারীর দলে যোগ দেন নিজাম। ১৯৯৬ সাল পরবর্তী সময়ে তিনি ফেনীর তৎকালীন সংসদ সদস্য ও দেশের আলোচিত গডফাদার জয়নাল হাজারীর গাড়ি চালক-গানম্যান হন। তখন জয়নাল হাজারী তাকে দিয়ে সোনাগাজী উপজেলা বিএনপিমুক্ত করেন। সময়ের পরিক্রমায় চালক ও গানম্যান থেকে নিজাম হয়ে ওঠেন জয়নালের গুরুত্বপূর্ণ ক্যাডার।
২০০১ সালে ফেনীর তৎকালীন জেলা প্রশাসক সোলাইমান বাদশার নেতৃত্বে যৌথ বাহিনীর অভিযানের মুখে এলাকা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান তৎকালীন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সাংসদ জয়নাল হাজারী। অভিভাবক শূন্য হয়ে পড়ে ফেনী আওয়ামী লীগ। ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণের কিছুদিন পরেই ফুলগাজী উপজেলার একরামুল হক একরামের সহযোগিতায় আওয়ামী রাজনীতির হাল ধরতে চট্টগ্রাম থেকে ফেনী আসেন নিজাম হাজারী। তৈরি করেন নিজের ক্যাডার বাহিনী।
একপর্যায়ে কোণঠাসা করে দেন গুরু জয়নাল হাজারীকেও। এরপর নিজামের প্রভাব এমন পর্যায়ে পৌঁছায়, তাকে চাঁদা না দিয়ে ফেনীতে থাকার উপায় ছিল না সিএনজি চালক থেকে শিল্পপতি পর্যন্ত কারোরই। তারপর থেকে নিজাম হাজারীর নামে ফেনীতে দৈনিক ওঠানো হতো কোটি টাকার বেশি চাঁদা। তাকে কমিশন না দিয়ে কোনো উন্নয়ন কাজ হতো না। অগ্রিম কাজের টাকা দেওয়া এমন অনেক ঠিকাদার এখনও বিপাকে পড়েছেন।
আমজাদ হোসেন নামে এক ঠিকাদার জানান, সড়কের দুই কোটি ৭৮ লাখ টাকার একটি কাজের জন্য নিজাম হাজারীকে অগ্রিম ৪০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন তিনি। নিজাম পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে তিনিও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
২০০০ সালে দুটি অস্ত্র মামলার একটিতে ১০ বছর, অন্যটিতে সাত বছর সাজা হয়েছিল নিজাম হাজারীর। এই দুটি অস্ত্র মামলায় তাকে ১০ বছর সাজা খাটতে হতো। জালিয়াতি করে ২ বছর ১০ মাসের সাজা কম খেটে তিনি ২০০৫ সালে কারাগার থেকে মুক্ত হন। এ ঘটনা নিয়ে ২০১৪ সালের ১০ মে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেটি যুক্ত করে তখন নিজাম হাজারীর সংসদ সদস্যপদে থাকার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন ফেনী জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া। হাইকোর্টের নির্দেশে কারা কর্তৃপক্ষ একটি প্রতিবেদন দেয়। তাতে উল্লেখ ছিল, নিজাম হাজারী ২ বছর ৬ মাস ১৬ দিন সাজা কম খেটে বেরিয়ে যান।
এ ব্যাপারে ফেনী জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন নিজাম হাজারী। এ ধরনের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে কমপক্ষে দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত ব্যক্তি সাজা খেটে মুক্তিলাভের পর পাঁচ বছর অতিবাহিত না হলে সংসদ সদস্য হতে পারেন না। নিজাম হাজারী জালিয়াতি করে দুই বছরের বেশি সময়ের সাজা না খেটে বেরিয়ে যান। জালিয়াতি ধরা পড়ার পরও নিজাম হাজারীর সংসদ সদস্য পদ বহাল ছিল।
ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে নিজামের। গত ১০ বছরে ওবায়দুল কাদের যতবার ফেনীতে এসেছেন, নিজাম হাজারীর আতিথেয়তা নিয়েছেন।
২০১২ সাল পর্যন্ত নিজাম হাজারী দলীয় কোনো পদে ছিলেন না। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরপর জয়নাল হাজারী দেশ ছেড়ে পালান। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগ দিয়ে নিজাম হাজারী ফেনীতে দলীয় ক্যাডারদের সংগঠিত করেন। ২০১১ সালে তিনি দলীয় মনোনয়নে ফেনী পৌরসভার মেয়র হন। ওই নির্বাচনে জালভোট, কেন্দ্র দখলসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। এর এক বছর পর ২০১২ সালের ডিসেম্বরে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন। ২০১৪ সালে বিনা ভোটের নির্বাচনে তিনি ফেনী-২ আসন থেকে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, নিজাম হাজারীর এ উত্থানের পেছনে শুরুতে শেখ হাসিনার সাবেক প্রটোকল কর্মকর্তা আলাউদ্দিন আহম্মদ চৌধুরীর (নাসিম) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। পরে দলের সাধারণ সম্পাদক ও তৎকালীন সড়ক সেতু এবং সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের আশীর্বাদে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেন নিজাম হাজারী। স্থানীয়রা জানান, ফেনী সদর থেকে ওবায়দুল কাদেরের বাড়ি ও নির্বাচনী এলাকা কোম্পানীগঞ্জের দূরত্ব ২৩ কিলোমিটার। সেখানে এলেই তিনি রাত্রিযাপন করতেন ফেনীতে। ফেনীতে তার সব ধরনের আমোদ ও বিলাসের ব্যবস্থা করতেন নিজাম হাজারী। ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগে আরও বেশি অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠেন নিজাম হাজারী।
এ ব্যাপারে ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে ফেনী পৌরসভার সাবেক মেয়র নজরুল ইসলাম ওরফে স্বপন মিয়াজীর দীর্ঘদিনের সখ্য। নজরুল ইসলামের মাধ্যমেই ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে নিজামের। আগে ফেনী সার্কিট হাউস ও শহরের কুসুমবাগে এক ব্যবসায়ীর বাগানবাড়িতে উঠতেন ওবায়দুল কাদের। তবে সর্বশেষ দুই বছর ধরে মাস্টারপাড়ায় নিজাম হাজারীর বাগানবাড়িতে রাত যাপন করতেন তিনি।
রাজনৈতিক বলয় শক্ত করতে নিজাম হাজারী বেছে নেন ২০১১ সালে ফেনীর পৌর মেয়র নির্বাচন। নির্বাচিতও হন। ২০১৪ সালে মেয়র পদ ছেড়ে দশম সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচনে ফেনী-২ আসনের এমপি নির্বাচিত হন। হলফনামায় নিজাম হাজারী ও তার স্ত্রী নূরজাহান বেগমের সম্পদ দেখিয়েছিলেন ৪ কোটি ১৩ লাখ ৬০ হাজার ৪৬৮ টাকার। এমপি হওয়ার পর ২০১৮ সালের নভেম্বরে তাদের সম্পদের পরিমাণ হয় ৩১ কোটি ৯৫ লাখ ৫৭ হাজার ২০২ টাকা। আর গত পাঁচ বছরে তাদের সম্পদ বেড়ে হয় ১২৪ কোটি ৬২ লাখ ৭৬ হাজার ২৪৩ টাকা।
জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে নিজাম হাজারীর নামে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি টাকা আসা শুরু হতো সকাল ৭টা থেকে। ২০২২ সালের আগে এসব অর্থ তুলতেন সাদেক নামে একজন। তিনি জানান, টাকার ভার বহন করতে করতে তার কোমর বাঁকা হয়ে যেত। এক সময় তাকে বাদ দেওয়া হয়। পরে দায়িত্ব পান শরীফ ও আদর নামে দুই তরুণ। নিজাম হাজারীর এখনও বহু সম্পত্তি আদর ও শরীফের নামে রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে। শরীফ, আদরও পলাতক।
ফেনী শহরের মাস্টারপাড়া এলাকায় রয়েছে নিজাম হাজারীর আলিশান বাগানবাড়ি। সেখানে আছে দৃষ্টিনন্দন লেক, হ্যালিপ্যাড, সুইমিংপুল, মদের বার। বিশাল আয়তনের এই বাড়িতে সাধারণ মানুষ প্রবেশ করতে পারত না। জাতীয় নির্বাচনে হলফনামায় বাগানবাড়ির তথ্য উল্লেখ করেননি তিনি। প্রায়শই ঢাকা থেকে শো-বিজ তারকা ও প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতারা এই বাগানবাড়িতে আসতেন। সরকার পতনের পর ক্ষুব্ধ জনতা এতে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।
ফেনী সদরের মডেল মসজিদের কাজ শুরু হয় চৌধুরী বাড়ির দরজায়। কাজের জন্য প্রাথমিকভাবে বরাদ্দ হয় ১৫ কোটি টাকা। সে টাকা থেকে কমিশন হিসেবে ৮৪ লাখ টাকা নেন নিজাম হাজারী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, কাজের জন্য নিজাম হাজারীর কাছে গেলে ১০ শতাংশ দাবি করেন। সে জন্য আমরা কাজটি নিইনি। পরে ৭ শতাংশ হারে অগ্রিম নিয়ে রাজু নামে একজনকে দেওয়া হয়। তিনিও পালিয়েছেন। বর্তামানে কাজ বন্ধ।
ফেনী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহার জানান, মাস্টারপাড়ার হিন্দুদের জায়গা দখল করে নিজাম হাজারী হাজার কোটি টাকার বাগানবাড়ি তৈরি করেছেন। ফেনী শহরতলি সহদেবপুরের বাসিন্দা সম্ভু চক্রবর্তী বলেন, প্রথমে জায়গা দিতে রাজি হচ্ছিলাম না। পরে দুজন এসে বলে, জায়গা বিক্রি করে টাকা না নিলে জোর করে নিয়ে যাবে। ভয়ে রেজিস্ট্রি করে দিই। পরে নামমাত্র টাকা দিয়েছে।
ফেনী সদর উপজেলার বালিগাঁও ইউনিয়নে নিজাম হাজারী কয়েক হাজার একর জায়গা দখল করেছেন মসজিদ-মাদরাসার নামে। তার এই সাম্রাজ্য দখলের নেপথ্যে ছিলেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শুসেন চন্দ্র শীল। নামমাত্র টাকায় এসব জমি দখল করা হয়।
নিজের ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে নিজাম বাগিয়ে নেন ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ। ধীর পায়ে হাটতে হাটতে শেখ হাসিনার চোখে পড়েন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সিঁড়ি বেয়ে দখলে নেন ফেনী পৌরসভার মেয়র পদ। এরপর ভোটার শূন্য কেন্দ্রে রাষ্ট্রীয় নগ্ন হস্তক্ষেপে আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার ২০১৪ সালে হয়ে যান সংসদ সদস্য। যে সময় তিনি নির্বাচনী হলফনামায় যেসব সম্পত্তির কথা উল্লেখ করেছিলেন, তার বাইরে গড়েছিলেন হাজার কোটি টাকার সম্পদ। নির্বাচনী হলফনামায় তিনি তার কয়েকশ কোটি টাকা মূল্যের বাগানবাড়ি ও বালিগাঁওতে থাকা শতকোটি টাকার সম্পদ কখনোই দেখাননি। ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জায়গা, ফ্ল্যাট, প্লটের হিসাবও গোপন করেছেন। তার মালিকানার জাহাজের কথাও হলফনামায় আসেনি।
২০১৪ সালের ২০ মে ফেনীতে দিনদুপুরে গুলি ও গাড়িতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান একরামকে হত্যার ঘটনা ঘটে। যেটি করা হয় এমপি নিজামের ইশারায়। এভাবে আরও অনেক লাশ পড়ে। কিন্তু সব সময় নিজামী হাজারী ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। গত ৪ আগস্ট শহরের (ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের) মহিপালে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবীতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিজাম হাজারীর নির্দেশে তার ক্যাডার বাহিনী নির্বিচারে গুলি করে। তার পক্ষে বিশ্বস্ত ক্যাডার শুসেন গুলির নির্দেশ দেন। আর শুসেনের অনুসারী জিয়া উদ্দিন বাবলুর গুলিতে অধিকাংশ ছাত্র-জনতা মারা যায়।
গত ৪ আগস্ট তার নির্দেশে ফেনীর মহিপালসহ শহরের একধিক স্থানে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি করা হয়। নিহত হন ৯ জন। ৫ আগস্টও নিজামের নির্দেশে গুলি চলে। নিজাম ও আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের হামলা-গুলিতে আহত হন অন্তত তিন শতাধিক ছাত্র-জনতা। এসব ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। হত্যা মামলা হয় আটটি। হতাহতদের পরিবার নিজাম হাজারীর সুষ্ঠু বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
পরোক্ষভাবে নিজাম হাজারীর হত্যার নির্দেশের কথা প্রকাশ করেছেন ফেনী জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি হাফেজ আহম্মদ। কথা হলে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ করলেও অন্যায়, অত্যাচার, মানুষ হত্যা করিনি। ‘একজন ব্যক্তির’ নির্দেশে ফেনীতে ১০ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এর বিচার হওয়া উচিৎ।
মোবাইল ফোনে কথা হলে নাম না প্রকাশ করার শর্তে পৌর আওয়ামী লীগের এক নেতা বাংলানিউজকে বলেন, এমপিকে বারবার বলেছি মহিপালে আন্দোলনরতরা কিছুক্ষণ পর চলে যাবে। হামলার নির্দেশের দরকার নাই। কথা অগ্রাহ্য করে শুসেনকে দায়িত্ব দেন নিজাম হাজারী। শুসেন তার বাহিনী নিয়ে নির্বিচারে গুলি করে। এমপির কারণে আজ দলের সবাই ক্ষতিগ্রস্ত। সেদিনের ১০ হত্যা না হলে আমরা এলাকায় থাকতে পারতাম। এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছি।
ফেনীর পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত নিজাম হাজারীর নামে ৮টি হত্যা মামলাসহ নয়টি মামলা হয়েছে। তার নামে নানা অপকর্মের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। তাকে গ্রেপ্তারের জন্য সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০২৫
এসএইচডি/এমজে