ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

সালতামামি

বছরজুড়ে কূটনীতিকদের সৌজন্য সাক্ষাৎ

তৌহিদুর রহমান, ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০২৪
বছরজুড়ে কূটনীতিকদের সৌজন্য সাক্ষাৎ

ঢাকা: চলতি বছর ১১ জানুয়ারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন ড. হাছান মাহমুদ। আর একই বছরে গত ৮ আগস্ট দ্বিতীয় দফায় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেন এম তৌহিদ হোসেন।

এক বছরে দুজন মন্ত্রী ও উপদেষ্টার সঙ্গে কূটনীতিকদের সৌজন্য সাক্ষাতেই বছর পার হয়ে গেছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা উপদেষ্টা নতুন দায়িত্ব গ্রহণ করলে ঢাকার বিদেশিকূটনীতিকরা তার সঙ্গে সৌজন্যসাক্ষাৎ করে থাকেন। এটাই দীর্ঘদিনের রেওয়াজ। হাছান মাহমুদ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর ঢাকার বিদেশি  রাষ্ট্রদূত ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষিতে শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়। পরবর্তীতে অন্তর্বর্তী সরকারের পর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেন এম তৌহিদ হোসেন। তার সঙ্গে নতুন করে আবার সৌজন্য সাক্ষাতেই ব্যস্ত ছিলেন কূটনীতিকরা। এছাড়া গত ৮ সেপ্টেম্বর পররাষ্ট্রসচিব হিসেবে দায়িত্ব নেন এম জসীম উদ্দিন। তার সঙ্গেও ঢাকার বিদেশি কূটনীতিকরা সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন—সৌজন্য সাক্ষাতেইবছর পার হয়ে গেছে!

ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কে টানাপোড়েন
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন ইস্যুতে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়। পরে সেই টানাপোড়েন থেকেদুই দেশের মধ্যে তিক্ততাও তৈরি হয়।

বিশেষ করে বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর গ্রেপ্তারের ঘটনায় কলকাতা ও আগরতলায় বাংলাদেশ মিশনে উগ্রবাদীরাহামলা চালায়ও বাংলাদেশেরপতাকা পুড়িয়ে দেয়। এই ঘটনায় বাংলাদেশ সরকার তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে। ভারতে বাংলাদেশ মিশনে হামলার ঘটনার জেরেঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে গত ৩ ডিসেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়। তবে এরপরেও ঢাকায় বাংলাদেশ-ভারত ফরেন অফিস কনসালটেশনে (এফওসি) যোগ দেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি। তার সফরের পর দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে কিছুটা গতি পায়।

শীর্ষ নেতার ঢাকা সফর
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পরমালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দাতো সেরি আনোয়ার ইব্রাহিম ৪ আগস্ট ঢাকা সফর করেন। এই সরকারের আমলে সেটাই ছিল কোনো সরকারপ্রধানের প্রথম ঢাকা সফর। এছাড়া গত ১৪ ডিসেম্বর পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট জোসে রামোস হোর্তা চারদিনের সফরে ঢাকায় আসেন। তিনি বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানেও যোগ দেন।

জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিয়ে চমক
অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান হিসেবে জাতিসংঘের ৭৯তম অধিবেশনে যোগ দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মাদ ইউনূস। তবে এই সফরে তিনি রীতিমতো চমক দেখান। কারণ, প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে প্রতিনিধি দলে যোগ দেন মাত্র ৫৭জন। অথচ অতীতে শেখ হাসিনার সময়ে কখনো কখনো সফরসঙ্গী  ছিলেন ৩ শতাধিক। এছাড়া প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মাদ ইউনূসজাতিসংঘ অধিবেশনে যোগদানকালে তৎকালীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠককরে সবাইকে চমক দেন।

প্রধান উপদেষ্টার সফর
অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান হিসেবেপ্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মাদ ইউনূস সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘের ৭৯তম অধিবেশনে যোগ দেন। এরপর নভেম্বরে  আজারবাইজানের বাকুতে জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে অংশ নেন। সর্বশেষ ১৮-২০ ডিসেম্বর মিশরে ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেন। এসব সম্মেলনে যোগ দিয়ে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে সাইডলাইনে বৈঠক করেন তিনি।  এছাড়া পররাষ্ট্র উপদেষ্টামো. তৌহিদ হোসেন যুক্তরাষ্ট্র, থাইল্যান্ড, কুয়েত, সৌদি আরব, পর্তুগাল, সামোয়া প্রভৃতি দেশে বিভিন্ন সম্মেলন ও বৈঠকে যোগ দেন।

ইউরোপের ২৭ দেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে গত ৯ ডিসেম্বরবৈঠক করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠকেসমসাময়িক ইস্যু ও অর্থনৈতিক খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশের সঙ্গে  অংশীদারত্ব ও সহযোগিতাসহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। এছাড়াধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়ে অপপ্রচার নিয়ে গত২ ডিসেম্বর  ঢাকায় বিভিন্ন মিশনে দায়িত্বরত বিদেশি কূটনীতিকদের ব্রিফ করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। এর আগে গত ১২ আগস্ট চলমানপরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নিয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের ব্রিফ করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।

বিশ্বনেতাদের অভিনন্দন
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা। ভারত, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মাদ ইউনূসকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এছাড়া ১৯৮ জন বিশ্বনেতা যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় পুরো পৃষ্ঠাজুড়েএকবিবৃতিতে ড. ইউনূসকে সমর্থন দেন। এদের মধ্যেনোবেলজয়ীই ছিলেন ৯২ জন।

বিবৃতি দাতাদেরমধ্যেছিলেননরওয়ের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গ্রো ব্রুন্ডল্যান্ড, রোমানিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট এমিল কনস্টান্টিনেস্কু, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন। এ ছাড়াও ছিলেন বারাক ওবামা, শিরিন এবাদি, হুয়ান ম্যানুয়েল সান্তোস, রামোস-হোর্তা, হিরোশি আমানো, মার্টিন কার্প্লাস, জোসেফ স্টিগলিৎজ, হার্টা মুলার, চার্লস রাইস প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ০৭১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০২৪
টিআর/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।