ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সালতামামি

আলোচনায় ছিল ‘বঙ্গবাহাদুর’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৬
আলোচনায় ছিল ‘বঙ্গবাহাদুর’ বন্যার পানিতে ভারত থেকে ভেসে আসা বন্য হাতি ‘বঙ্গবাহাদুর’

জামালপুর: ২০১৬ সালের জুলাই-আগস্ট মাস ছিল ‘বঙ্গবাহাদুরে’র দখলে। দেশের শীর্ষ আলোচনায় ছিল বন্যার পানিতে ভারত থেকে ভেসে আসা এই বন্য হাতি। বাংলাদেশে (বঙ্গে) এসে ৪৯ দিনে প্রায় ১৭শ’ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে জীবন-যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ায় তার নাম দেওয়া হয়েছিল বঙ্গবাহাদুর।

বাংলাদেশ নেচার কনজারভেটিভ সোসাইটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. তপন কুমার দে এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পরামর্শক্রমে হাতির এই নাম রাখা হয়।

ফলে দেশের মিডিয়ার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় বঙ্গবাহাদুর।

এই বঙ্গবাহাদুর নিয়ে বাংলানিউজে প্রায় অর্ধশতাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

টানা ৪৯ দিন বাংলাদেশে অবস্থানের পর অবশেষে ১৬ আগস্ট বঙ্গবাহাদুরের জীবনের অবসান ঘটে।

এর মধ্যে ঘটে যায় নানা ঘটনা। এ সময় হাতি উদ্ধারের জন্য অসীম কুমার মল্লিকের নেতৃত্বে ১৭ সদস্যের একটি দল গঠন করা হয়। এর সঙ্গে রিতেশ ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে যোগ দেয় তিন সদস্যের ভারতীয় হাতি উদ্ধারকারী দল।
বন্যার পানিতে ভারত থেকে ভেসে আসা বন্য হাতি ‘বঙ্গবাহাদুর’
বাংলাদেশ ও ভারতীয় হাতি উদ্ধারকারী দল টানা চারদিন হাতি উদ্ধারের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়।

এর আগে (২৬ জুন) ভারতের আসাম রাজ্যের শিশুমারা পাহাড়ি এলাকা থেকে কুড়িগ্রামের রৌমারী সীমান্ত দিয়ে বন্যার পানিতে ভাসতে ভাসতে ব্রহ্মপুত্র নদের বড়বেড় কীর্তনতারি চরে আটকা পড়ে এই হাতি। সেখান থেকেই বঙ্গ যাত্রা শুরু হয় বঙ্গবাহাদুরের।

কুড়িগ্রামের কীর্তনতারি চর থেকে জামালপুরের সরিষাবাড়ী। ২৬ জুন থেকে শুরু হওয়া টানা ৪৯ দিনের যাত্রায় প্রায় ১৭শ’ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয় বঙ্গবাহাদুর। কুড়িগ্রাম, জামালপুর এর পর সিরাজগঞ্জ, বগুড়া ও গাইবান্ধার প্রায় ১৭শ’ কিলোমিটার যাত্রা শেষে আবারও জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার কামরাবাদ ইউনিয়নের কয়রা গ্রামে ফিরে আসে হাতিটি।

১১ আগস্ট ট্রেঙ্গুলাইজিং করে হাতিটিকে অচেতন করে ডাঙ্গায় তোলা হয়। পায়ে শিকল ও রশি দিয়ে একটি আমগাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে শুরু হয় উদ্ধার চেষ্টা।
হাতি উদ্ধারকারী দলের পরিকল্পনা ছিল, একে সাফারি পার্কে নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার। কিন্তু বিশাল আকৃতির বঙ্গবাহাদুরকে কীভাবে স্থানান্তর করা হবে, তা নিয়ে চিন্তায় ছিলেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা। এরই মধ্যে হাতিটি পায়ের শিকল ছিঁড়ে ছুট দিলে আবারও একই ভাবে অচেতন করা হয়। কয়েক ঘণ্টা পর হুঁশ ফিরলেও অবস্থা খারাপের দিকে যেতে থাকে হাতিটির।

রোদের তাপমাত্রা বেশি থাকায় ‘বঙ্গবাহাদুর’ অসুস্থ হয়ে কাদাপানিতে পড়ে যায়। তার শরীরে ১২টি স্যালাইন দেওয়া হয়, সুস্থ করে তুলতে চলে চিকিৎসা ও সেবা। শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে হাতির গায়ে পানি ছিটানোরও ব্যবস্থা করা হয়।
বন্যার পানিতে ভারত থেকে ভেসে আসা বন্য হাতি ‘বঙ্গবাহাদুর’
একের পর এক ট্রেঙ্গুলাইজিং (অচেতন করার ওষুধ প্রয়োগকারী যন্ত্র) করার পর ১৬ আগস্ট সকালে মৃত্যুর কোলে ঢেলে পড়ে ‘বঙ্গবাহাদুর’।

প্রসঙ্গত, জামালপুর ও শেরপুর জেলার প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ বছরের প্রায় ছয় মাস বন্য হাতির আতঙ্কে থাকে। শেরপুরের নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতি, শ্রীবরদী, জামালপুরের বকশীগঞ্জ ও দেওয়ানগঞ্জ সীমান্তে বন্য হাতির দল খাদ্যের অভাবে লোকালয়ে চলে আসে প্রায়ই।

২০১৬ সালেই শেরপুরে বন্য হাতির আক্রমণে একদিনই পাঁচজনসহ ১৭ জনের মৃত্যু হয়। এছাড়া জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় তিনজন ও বকশীগঞ্জে একজন হাতির আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছেন। পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন প্রায় শতাধিক। ধ্বংস হয়েছে অসংখ্য বসতভিটা, ফসল।
 
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত পাঁচ বছরে বন্য হাতির তাণ্ডবে জামালপুর ও শেরপুরে ১১৩ জন প্রাণহানি ঘটেছে। পুঙ্গত্ব বরণ করে মানবেতর জীবনযাপন করছে সহস্রাধিক মানুষ।

স্থানীয়দের দাবি, বনে হাতির খাদ্যের সংকট দেখা দিলেই দলবেঁধে লোকালয়ে এসে তাণ্ডব চালায় বন্য হাতির দল। আবার স্থানীয়দের পাতা ফাঁদে পড়ে  প্রাণ যায় অনেক হাতির।

বাংলাদেশ সময়: ০০২১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০১৭
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।