ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সালতামামি

বছরজুড়েই উত্তপ্ত ছিল সংসদ

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৭
বছরজুড়েই উত্তপ্ত ছিল সংসদ জাতীয় সংসদের অধিবেশন। ফাইল ফটো

.ঢাকা: নানামুখী আলোচনা-সমালোচনার মধ্য দিয়ে আরো একটি ঘটনাবহুল বছর পার করছে দশম জাতীয় সংসদ। বছরজুড়েই সংসদ ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। কখনও সফলতার প্রচার, কখনও নিজেদের মর্যাদার লড়াইয়ে সরব ছিলেন মন্ত্রী-এমপিরা। 

সংসদের বাইরে থেকে সরকারের  প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি সারাবছরই সরকারের নানান সমালোচনায়  ব্যস্ত ছিল। তথাপি বছরের উল্লেখযোগ্য নানা ইতিবাচক ঘটনার বেশিরভাগই ছিল সরকারের সাফল্যগাঁথার অংশ।


 
বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের নতুন পরিচয়
বর্তমান সংসদ ও সরকার গঠনের পর থেকে দেশের বৃহৎ একটি রাজনৈতিক পক্ষ এবং সুশীল সমাজ সংসদের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাদের সেই সমালোচনার মোক্ষম জবাব ছিল দুটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সফল আয়োজন।  

বাংলাদেশও যে বড় আকারের আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করতে সক্ষম তার প্রমাণ মেলে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন-আইপিইউ ও কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন-সিপিএ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে।  

এই দুই সম্মেলনে অংশ নেওয়া বিভিন্ন দেশের সংসদ সদস্যরা বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করে গেছেন। শুধু তাই নয়, সরকারের অর্জনের কথাও শোনা গেছে তাদের ভাষ্যে। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশ নতুন পরিচয়ে পরিচিত হয়েছে।  
 
ষোড়শ সংশোধনীর রায় বাতিলে উত্তপ্ত ছিল সংসদ
বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছ থেকে আদালতের কাছে ফিরিয়ে নিতে ষোড়শ সংশোধনীর রায় বাতিল করে উচ্চ আদালত। সেই রায়ের জের ধরে সংসদে উত্তাপ ছড়ায়।

তখন ওঠে সংসদ বড়, নাকি আদালত বড়-এই অস্বস্তিকর প্রশ্নটা সামনে চলে আসে। অবশ্য শেষ পর্যন্ত সংসদের কাছে এক প্রকার হার মানতে হয় উচ্চ আদালতকে।
 
সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা প্রসঙ্গে সরব ছিল সংসদ

ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে দেওয়া রায়ের পর্যবেক্ষণে ‘অযাচিতভাবে’ সংসদ সদস্যগণ ও বর্তমান সংসদ নিয়ে কথা বলায় তোপের মুখে পড়েন এস কে সিনহা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে সরকারি দল ও বিরোধী দলের এমপিরা তার পদত্যাগ চান।  

এমনকি সংসদের কাছে ক্ষমা চাইতেও বলেন এমপিরা। এই ইস্যুতে রাজনীতির মাঠও বেশ সরব ছিল বছরের অনেকটা সময়জুড়ে। অবশেষে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে এই আলোচনার ইতি ঘটে।
 
বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি 
এবছরই বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কোর স্বীকৃতি লাভ করে। যে ভাষণের মধ্য স্বাধীনতা সংগ্রামের সূত্রপাত ঘটে। ইউনেস্কো ভাষণটিকে ‘ডকুমেন্টারি হেরিটেজ’ (প্রামাণ্য ঐতিহ্য) হিসেবে ঘোষণা করায় সরকারের তথা গোটা জাতির অর্জনের ভাণ্ডারে একটি বিশাল সাফল্য যুক্ত হয়। এই বিষয়টি নিয়েও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল সংসদ।
 
প্রথম বারেরমতো বিরোধী দলের ভূমিকায় সরকারি দল
সংসদে সাধারণত সরকারের সমালোচনা করেন বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা। এবারই প্রথম বাজেট অধিবেশনে সরকারি দলের মন্ত্রী-এমপিরা অর্থমন্ত্রীকে সমালোচনায় তুলোধুনো করেন। বাজেটে সঞ্চয়পত্রের উপর বাড়তি কর আরোপ করায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।  

এবারই প্রথম ব্যাংক আমানতের উপর অতিরিক্ত করে বোঝা চাপিয়ে দেন অর্থমন্ত্রী। সরকারি দলের মন্ত্রী-এমপি ও বিরোধী দলের এমপিদের যুগপৎ সমালোচনার মুখে শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত বদলাতে বাধ্য হন আবুল মাল আবদুল মুহিত।  
 
রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত সরকার
রাজপথে বিরোধী দল বিএনপি যখন দেশ পরিচালনায় সরকারের নানা ত্রুটি নির্দেশ করে ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে মরিয়া, তখন সরকারের জন্য প্রকারান্তরে নতুন এক চ্যালেঞ্জ এবং একইসঙ্গে আশির্বাদ হয়ে আসে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের স্রোত।  

রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং বিশ্বের বড় বড় দেশের নেতাদের আগ্রহের কেন্দ্রে আসে বাংলাদেশ। বিভিন্ন বিশ্বসংস্থা, বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবতাবোধের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
 
বিদায়ী বছরে ৫ অধিবেশন
বিদায়ী বছরে ৫টি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। এসবের মধ্যে ২০১৭ সালের প্রথম এবং দশম সংসদের ১৪তম অধিবেশন শুরু হয় ২২ জানুয়ারি। শেষ হয় ১১ মার্চ। প্রথম অধিবেশনে মোট কর্মদিবস ছিল ৩২টি। এরপর ২ মে শুরু হয় দ্বিতীয় অধিবেশন যা শেষ হয় ৮ মে।  

দ্বিতীয় অধিবেশনের মোট কর্মদিবস ছিল ৫ দিন। বিদায়ী বছরের বাজেট অধিবেশন শুরু হয় ৩০ মে, শেষ হয় ১৩ জুলাই। মোট কর্মদিবস ছিল ২৬ দিন।  

এরপর চতুর্থ অধিবেশন শুরু হয় ১০ সেপ্টেম্বর, শেষ হয় ১৪ সেপ্টেম্বর। মোট কর্মদিবস ৫দিন। বছরের শেষ অধিবেশন ছিল ১২ নভেম্বর থেকে ২৩ নভেম্বর পর্যন্ত। মোট কর্মদিবস ১০টি। বিদায়ী বছরে ৫টি অধিবেশনে মোট ৭৮ কর্ম দিবস।

সব মিলিয়ে ২০১৭ সালটি দশম জাতীয় সংসদের জন্য ঘটনাবহুল। এখন অপেক্ষা নতুন বছরের নতুন সূর্যোদয়ের হাতছানির।

বাংলাদেশ সময়: ০১৩৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৭
এসএম/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।