ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সালতামামি

প্রবৃদ্ধি ও অগ্রগতি, ৩২৪ প্রকল্প অনুমোদনের বছর

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৪৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৭
প্রবৃদ্ধি ও অগ্রগতি, ৩২৪ প্রকল্প অনুমোদনের বছর উন্নয়ন প্রকল্প

.ঢাকা: দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয়ের ধারাবাহিকতায় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মোট ৩২৪টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। প্রকল্পগুলোর ধার্য মোট ব্যয় ৪ লাখ ৭০ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা।

৩২৪টি প্রকল্পের মধ্যে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ৮৭টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন। কারণ এই ৮৭ প্রকল্পের প্রতিটির ব্যয় ৫০ কোটি টাকার কম।

বাকি ২৩৭টি প্রকল্প অনুমোদন করেছে একনেক।  

একনেক সভায় আলোচনায় ছিলো ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট, পদ্মাসেতু রেল সংযোগ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ও মাতারবাড়িতে দুটি ৬০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রজেক্ট।

দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিশেষ করে প্রবৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি, সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ চাহিদা, সম্পদের লভ্যতা, স্থানীয় সম্পদ সংগ্রহ, বৈদেশিক সাহায্য প্রাপ্তির কথা চিন্তা করেই ৩২৪টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

একনেক সূত্র জানায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রকল্পের উপর ভিত্তি করে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮৪ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

চলতি অর্থবছরের এডিপিতে পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও পদ্মাসেতুর গুরুত্ব দিয়ে পরিবহন খাতে সর্বোচ্চ মোট ৪১ হাজার ৫৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা অনুমোদন দেয়া হয়েছে।  

অগ্রাধিকার বিবেচনায় বিদ্যুৎ খাতে মোট ১৮ হাজার ৮৫৮ কোটি, শিক্ষায় ১৬ হাজার ৬৭৩ কোটি, গৃহায়ণে ১৪ হাজার ৯৪৯ কোটি টাকা, বিজ্ঞান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে ১৪ হাজার ৪৫০, পল্লী উন্নয়নে ১৩ হাজার ১৫৪, স্বাস্থ্যে  ১০ হাজার ২০১ ও কৃষি খাতে ৬ হাজার ৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

এছাড়াও উপজেলা উন্নয়ন সহায়তা, ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন, পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়ন খাতে ৩ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে।

চলতি বছরে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে রোহিঙ্গাদের আবাসন সংকট নিরসনে ‘আশ্রয়ন-৩’ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মিয়ানমার থেকে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত এক লাখ বিপন্ন মানুষের জন্য নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলাধীন চরঈশ্বর ইউনিয়নের ভাসানচরে আবাসন নির্মাণসহ দ্বীপের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৩১২ কোটি ১৫ লাখ টাকা। ডিসেম্বর ২০১৭ থেকে নভেম্বর ২০১৯ মেয়াদে রোহিঙ্গাদের জন্য আবাসন নির্মাণ করা হবে।

স্বপ্নপূরণ হতে যাচ্ছে দেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষের। প্রতীক্ষিত বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাশে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল, রংপুরের বুড়িমারী পর্যন্ত ১৯০ দশমিক ৪০ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পটিও একনেক সভা অনুমোদন দিয়েছে।

ঢাকা মহানগরীর বহু সমস্যার মধ্যে বড় এক সমস্যা হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষের আবাসন সংকট। এই সমস্যা নিরসনে উত্তরায় নির্মিত হবে ১৫ হাজার ৩৬টি ফ্ল্যাট। একনেক সভা সংশোধিত আকারে প্রকল্পটির অনুমোদন দিয়েছে। । ফ্ল্যাটগুলো নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৯০২ কোটি টাকা। উত্তরার ১৮ নং সেক্টরে ২১৪ দশমিক ৪৪ একর জমিতে ডিসেম্বর ২০২০ মেয়াদে নির্মিত হবে।

 রেকর্ড প্রবৃদ্ধি অর্জন
 চলতি বছরে সবার আলোচনার কেন্দ্রে ছিল মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি ও প্রবৃদ্ধি অর্জন। বৃত্ত ভেঙ্গে রেকর্ড পরিমাণে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে বাংলাদেশে। ফলে দেশবাসীর মাথাপিছু আয়ও বেড়েছে। বর্তমানে দেশবাসীর মাথাপিছু আয় বেড়ে  হয়েছে ১ হাজার ৬১০ মার্কিন ডলার, প্রতি ডলার সমান ৮০ টাকা ধরে বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ১ লাখ ২৮ হাজার ৮০০ টাকা।
জাতীয় আয় বাড়ার পাশাপাশি মানুষের ক্রয়ক্ষমতাও বেড়েছে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেড়ে হয়েছে ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ।
 
২০১৬-১৭ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ৮ ডলার বেড়েছে। গত অর্থবছরে দেশবাসীর মাথাপিছু আয় ছিল ১ হাজার ৬০২ ডলার বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ লাখ ২৮ হাজার ১৬০ টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ১৩১৬ ডলার ছিল।
    
মূলত জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির কারণেই মানুষের গড় মাথাপিছু আয়ও বেড়েছে। গুরুত্বপূর্ণ তিনটা খাতের মধ্যে কৃষিখাতে ২ দশমিক ৯৭, শিল্পখাতে ১০ দশমিক ২২ ও সেবাখাতে ৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।
 
পরিকল্পনামন্ত্রীর আশাবাদ
পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা বলেন, আমরা নতুন নতুন প্রকল্প অনুমোদন দিয়ে থাকি মূলত দেশবাসীর কল্যাণে। মাথাপিছু আয় ও প্রবৃদ্ধি অর্জনের কথাও মাথায় থাকে প্রকল্প অনুমোদন করার সময়। জিডিপি প্রবৃদ্ধি এখন রেকর্ড পরিমাণ ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। আমাদের মাথাপিছু আয়ও বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৬১০ মার্কিন ডলার। ২০১৯ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশের ওপরে যাবে।

আশা করছি, ২০৩০ সালের মধ্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৯ থেকে ১০ শতাংশের কাছাকাছি হবে। তাহলেই আমরা আমাদের ২০৪১ সালের প্রকৃত লক্ষ্য অর্জন করতে পারবো। এগুলো অর্জন করা সম্ভব হবে নতুন নতুন প্রকল্প অনুমোদন ও বাস্তবায়ন করা গেলে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৭
এমআইএস/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।