দিনাজপুর: গাছটির পাতা আর কাঁটা দেখতে সাধারণ খেজুর গাছের মতো হলেও গাছটির আকার আর ফল দেখে কিছুটা দ্বিধা দ্বন্দ্বে পড়তে হবে। প্রায় কাণ্ডবিহীন এ গাছে সাধারণ খেজুর গাছের মত সব বৈশিষ্ট্য থাকলেও এটি বন খেজুর বা খুদি খেজুর।
যেটি এখন বিপন্ন প্রায় বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ। এ গাছের দেখা মিলেছে দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ধর্মপুর শালবনে। উদ্ভিদটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে বনবিভাগ।
খুদি খেজুর বা বন খেজুর ছোট অবস্থায় সবুজ রঙের হয়। আর একটু বড় হলে লালচে এবং পরিপক্ক অবস্থায় জামের মতো কালচে রঙের হয়। অনেক মিষ্টি ও সুস্বাদু খুদি খেজুর গাছের গোড়ায় ফল ধরে। দেশি জাতের খেজুরের মতো চার থেকে পাঁচ সেন্টিমিটার আকৃতির হয়। সাধারণত বৈশাখ- জ্যৈষ্ঠ মাসে এটি পাকে।
স্থানীয়রা দীর্ঘদিন ধরে এ খেজুর খেলেও গাছটি সম্পর্কে তেমন ধারণা ছিল না তাদের। সম্প্রতি বনবিভাগ ও উদ্ভিদ গবেষকরা দেখার পর গাছটি সম্পর্কে ধারণা পান স্থানীয়রা।
স্থানীয় বাসিন্দা মুন্না বলেন, ছোট থাকতে গরু চরানোর সময় এ গাছ অনেকবার দেখেছি, ফলও খেয়েছি। সাধারণত এ খেজুরটাকে কুঁজি খেজুর নামে ডাকা হতো। আমরা এ গাছের গুরুত্ব তেমন বুঝতাম না। যখন বনবিভাগ ও ঢাকা থেকে লোকজন এলো এবং বলল যে এটা বিপন্ন প্রজাতির একটা গাছ, তখন বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি।
বর্তমানে আমরা গাছটি সংরক্ষণের জন্য স্থানীয়দের পক্ষ থেকে চেষ্টা করছি। যাতে করে কেউ গাছটি না ছিঁড়ে বা গরু-ছাগলে না খায়, যোগ করেন তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা সুমন আহমেদ বলেন, এ খেজুর ফলটি খাওয়া যেত এমনটা আমার বাবার কাছে শুনেছি। কিন্তু এ ফল কেমন, কি উপকারিতা বা এর গুরুত্ব কি এটা আমরা জানতাম না। এখন তো অনেকে এ গাছ দেখতে আসতেছে। বনবিভাগ বলেছে, এ গাছটা দেশ থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে। আমাদের এখানে শালবনে এ গাছটা পাওয়া গেছে। আমরাও খুব খুশি যে এটি আমাদের এলাকায় বনের মধ্যে পাওয়া গেছে। এখন এ খেজুরটি পাকতে শুরু করেছে। আমি অনেকবার খেয়েছি। খেতে অনেক সুস্বাদু এবং কোনো ক্ষতি হয় না খেলে। আমরা চাই গাছটি যেন হারিয়ে না যায় সেজন্য কর্তৃপক্ষ যেন যথাযথ ব্যবস্থা নেয়।
রিয়াজুল ইসলাম নামে অপর এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, গাছটি সম্পর্কে জানার পর থেকে আমরা গাছটি রক্ষায় সবাইকে সচেতন থাকতে বলেছি। কেউ যেন এ গাছটি না ছিঁড়ে এবং গরু-ছাগল যেন খেতে না পারে। এটি একটি মূল্যবান গাছ। সারাদেশের মধ্যে শুধু আমাদের এলাকায় রয়েছে। এ গাছের জন্য আমাদের এলাকার নাম এখন অনেক জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে। এতে আমাদের ভালো লাগছে।
বিপন্ন প্রায় উদ্ভিদটিকে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শালবনের ধর্মপুর বিটের কর্মকর্তা মহসীন আলী। তিনি বলেন, ধর্মপুর ইউনিয়নের ধর্মপুর শালবনে যে খেজুর গাছটি পাওয়া গেছে, সেটিকে খুদি খেজুর বা বন খেজুর বলে। ভারত, পাকিস্তান, ভুটান ও বাংলাদেশ পৃথিবীর চারটি দেশ এ খেজুর গাছের আদিনিবাস। বর্তমানে বাংলাদেশের কোথাও আর এ খেজুর গাছটি নেই। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ও দিনাজপুর বনবিভাগের কর্মকর্তারা এ গাছটি দেখতে এসেছিলেন এবং তারা এটি শনাক্ত করেছেন। বর্তমানে এটি বিলুপ্তির পথে। এটি যেন আর বিলুপ্ত না হয়, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ গাছ থেকে যে বীজ হচ্ছে, তা থেকে আমাদের নার্সারিতে চারা উৎপাদন করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ধর্মপুর শালবনে দেড় শতাধিক খুদি খেজুর বা বন খেজুরের গাছ খুঁজে পেয়েছি। এর মধ্যে অনেকগুলোতে ফল ধরেছে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখতেও এ ক্ষুদি খেজুর গাছ ভূমিকা রাখবে।
বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিরল উপজেলার ২১টি মৌজায় দুই হাজার ৮৩৬ একর জমির শালবনে শাল, সেগুন, কড়াইসহ শতাধিক প্রজাতির গাছ আছে। আর এখন নতুন করে যোগ হয়েছে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা কিছু খুদি গাছ। বনবিভাগের উদ্যোগে এ গাছগুলো বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পাবে এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে তা ছড়িয়ে পড়বে এমনটাই প্রত্যাশা সবার।
এসআই