ঢাকা, শনিবার, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০৭ জুন ২০২৫, ১০ জিলহজ ১৪৪৬

সারাদেশ

নীল দিয়ে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার অনুমতি চান ব্যবসায়ীরা

মো. মামুনুর রশীদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩:০৭, জুন ৭, ২০২৫
নীল দিয়ে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার অনুমতি চান ব্যবসায়ীরা

নাটোর: দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চামড়ার আড়ত নাটোরের চকবৈদ্যনাথে শনিবার (৭ জুন) বিকেল থেকেই শুরু হবে চামড়া কেনাবেচা। প্রাথমিক পর্যায়ে জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে স্থানীয় মৌসুমি ব্যবসায়ী ও ফড়িয়াদের মাধ্যমে আসবে এসব চামড়া।

এরপর এখানকার প্রায় শতাধিক আড়তে লবণ দিয়ে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে ঢাকার ব্যবসায়ী ও ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রির জন্য প্রস্তুত রাখবেন ব্যবসায়ীরা। তবে ক্রেতা পর্যায়ে চামড়া কেনাবেচা সহজ ও লাভজনক করতে সংগ্রহ করা চামড়া আগের মতো নীল বা ব্লু দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করার জন্য সরকারের কাছে অনুমতি চেয়েছেন ব্যবসায়ীরা।  

সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, নাটোরের চকবৈদ্যনাথে বৃহত্তম চামড়ার আড়তে এবার প্রায় সাড়ে ১০ লাখ পিস বিভিন্ন পশুর চামড়া কেনাবেচার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিবছরের মতো এবারও উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের ২৫ থেকে ৩০টি জেলার কাঁচা চামড়া এই আড়তে আসবে বলে আশা প্রকাশ করা হচ্ছে। তবে এবার নানা কারণে কোরবানির সংখ্যাও কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি লবণের মূল্য বৃদ্ধি ও চামড়ায় লাম্পি স্ক্রিন ভাইরাসের আক্রমণ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মনে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সারা বছরজুড়ে এখানকার প্রায় শতাধিক আড়তে কেনাবেচা চললেও ব্যবসায়ীদের মূল লক্ষ্য থাকে কোরবানির ঈদ। আর বাৎসরিক মোট চামড়ার অর্ধেক সংগ্রহ হয় কোরবানির ঈদে। বর্তমানে এই মোকামে সিন্ডিকেট ভেঙে নতুনভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল ব্যবসায়ীরা। কিন্তু হঠাৎ করে মৌসুমের শুরুতেই আবার লবণ সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছে চামড়ার বাজার। এক সপ্তাহ আগেও যে লবণের দাম ছিল ৭০০ টাকা বস্তা, সেই লবণের দাম এখন দাঁড়িয়েছে ১০৫০ টাকা থেকে ১১০০ টাকায়।

শুধু লবণের দাম বৃদ্ধি নয়, অন্যদিকে গরুর চামড়ায় লাম্পি স্ক্রিন ভাইরাসের আক্রমণ ব্যবসায়ীদের এ চিন্তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। আগে চামড়া ব্যবসায়ীরা নীল দিয়ে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতেন। তাতে ক্রেতা পর্যায়ে চামড়া কেনাবেচা করা যেত। কিন্তু এখন ট্যানারি মালিকদের হাতে এই শিল্প পুরোপুরি জিম্মি হয়ে পড়েছে বলে দাবি নাটোরের চামড়া ব্যবসায়ী আর শিল্প সংশ্লিষ্ট অন্যদের। তাই নাটোরের ব্যবসায়ীরা সরকারের কাছে পুনরায় চামড়া নীল দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করার অনুমতির দাবি জানিয়েছেন।

এদিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, কোরবানির পশুর চামড়া কিনতে নাটোরে সব আড়তে প্রস্তুতি নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। নাটোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপ সূত্রে জানা যায়, এবার জেলার আড়তে গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া মিলে প্রায় সাড়ে ১০ লাখ পিস চামড়া কেনাবেচার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে গরুর চামড়া ৩ লাখ পিস, খাসির চামড়া ৭ লাখ পিস, মহিষের চামড়া ১০ হাজার পিস, ভেড়ার চামড়া ২০ থেকে ৩০ হাজার পিস লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৫০ টাকা থেকে ৫৫ টাকা, ছাগল ২০ টাকা ২২ টাকা ও খাসির চামড়া ২৫ টাকা ২৭ টাকা দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার।

ঈদের দিন বিকেল থেকে আশপাশের জেলা ও উপজেলা থেকে আসতে শুরু করে কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া। পর্যায়ক্রমে উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের ২৫ থেকে ৩০টি জেলার কাঁচা চামড়া আসে এই আড়তে। এরপর আড়তগুলোয় চলে চামড়া লবণজাতের প্রক্রিয়া। এ কাজের সঙ্গে কয়েক হাজার যুবকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়। সপ্তাহ খানেক পর থেকে ঢাকা থেকে ট্যানারি মালিকরা এখানে চামড়া কিনতে আসেন। নগদ-বাকিতেই চামড়া কেনাবেচা হয়। তবে বাকিতেই বেশি বিক্রি হয় চামড়া। বিগত বছরগুলোয় ভারতে চামড়া পাচারের শঙ্কা থাকলেও এবার সেটি নেই।

স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ী মো. নান্নু বলেন, ১৫ দিন আগে লবণের দাম ছিল ৭২০ টাকা বস্তা। সেই লবণের দাম বেড়ে এখন ১ হাজার টাকা থেকে ১১০০ টাকা হয়েছে। ফলে একটি বড় চামড়ায় ১০০ টাকার লবণ বেশি পড়বে। যার কারণে চামড়ায় দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তিনি।  

ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন বলেন, গত ৪০ বছর ধরে চামড়ার ব্যবসার সঙ্গে রয়েছি। চামড়া কেনাবেচার লক্ষ্যমাত্রা যাই থাকুক না কেন এ বছর চামড়ার আমদানি কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ দেশে এবার কোরবানির সংখ্যা কম হবে। চামড়া পাচারের কোনো আশঙ্কা দেখছি না।  

একই অভিব্যক্তি প্রকাশ করে ব্যবসায়ী রকিব উদ্দিন কমল বলেন, এবার চামড়ায় লাম্পি স্ক্রিন ভাইরাসের আক্রমণের আশঙ্কা বেশি। এ রোগে আক্রান্ত গরুর চামড়া কেউ কিনতে চায় না। ফলে চামড়া পানির দামে বিক্রি করতে হয়।

নাটোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হালিম সিদ্দিকী বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কাঁচা চামড়া বাজার নাটোর। এখানে প্রতিবছর ২৫ থেকে ৩০ জেলার চামড়া কোরবানির ঈদে আসে। এ বছর জেলায় ১০ থেকে ১২ লাখ পশুর চামড়া বেচাকেনা হবে। আনুমানিক প্রায় ৫০০ কোটি টাকার চামড়া বিক্রির আশা করছি। সীমান্ত এলাকা দিয়ে যেন চামড়া পাচার না হয় সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছি।

তিনি বলেন, এখনও ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে বকেয়া টাকা পায়নি নাটোরের ব্যবসায়ীরা। এরপর এ বছর কোরবানি কম হলে চামড়া উৎপাদন কম হবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। তবে এখানকার ব্যবসায়ীদের দাবি আগের মতো নীল দিয়ে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার অনুমতি দিক সরকার। তাতে চামড়া শিল্পের সুদিন ফিরবে।

নাটোরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন বাংলানিউজকে বলেন, চামড়ার আড়তে যাতে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে সেজন্য সেখানে একটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করেছি। পাশাপাশি চামড়া কেনাবেচায় টাকা লেনদেন, ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাদা পোশাকধারী পুলিশ নিয়োজিত থাকবে।  

তিনি চামড়া পাচারের আশঙ্কার বিষয়টি নাকচ করে দিয়ে বলেন, সরকার ও পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে বিশেষ নির্দেশনা মোতাবেক চামড়া বহনকারী ট্রাক বা যানবাহন নির্দিষ্ট রুট ছাড়া অন্য কোনো রুটে চলতে দেওয়া হবে না। এ ব্যাপারে চামড়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের জানানো হয়েছে। দেশের চামড়া অন্যদেশে পাচার রোধে পুলিশ তৎপর রয়েছে।

আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।