ঢাকা, রবিবার, ২৭ আশ্বিন ১৪৩২, ১২ অক্টোবর ২০২৫, ১৯ রবিউস সানি ১৪৪৭

সারাদেশ

পদ্মাপাড়ে ‘নিষিদ্ধ’ ইলিশ বিক্রির হিড়িক, সানন্দে কিনছেন ক্রেতারা

ইমতিয়াজ আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:৪৯, অক্টোবর ১২, ২০২৫
পদ্মাপাড়ে ‘নিষিদ্ধ’ ইলিশ বিক্রির হিড়িক, সানন্দে কিনছেন ক্রেতারা পদ্মার পাড়ে দেদার বিক্রি হচ্ছে ইলিশ।

মাদারীপুর: ইলিশ শিকার, সংরক্ষণ, পরিবহন ও বিপণন নিষিদ্ধ হলেও অসাধু জেলেদের কাছ থেকে সানন্দে ইলিশ কিনছেন সাধারণ ক্রেতারা। ইলিশের এ প্রজনন মৌসুমে ইলিশ কিনতে অনেকটাই মরিয়া যেন সাধারণ ক্রেতারা! ব্যাগভর্তি করে ইলিশ নিয়ে বাড়ি ফিরছেন অনেকে।

মাদারীপুর জেলার শিবচরের পদ্মাপাড়ের একাধিক স্থানে চলছে ‘নিষিদ্ধ’ ইলিশ বিক্রির হিড়িক।

সরেজমিনে পদ্মাপাড়ের একাধিক এলাকা ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র।  

শিবচর উপজেলার পদ্মার তীরবর্তী বন্দরখোলা, মাদবরেরচর, চরজানাজাত এবং কাঁঠালবাড়ী ইউনিয়নের একাধিক স্থানে বিক্রি হচ্ছে পদ্মার ডিমওয়ালা তাজা ইলিশ। এর মধ্যে বন্দরখোলার ইউনিয়নের কাজিরসূরা এলাকার বাজারটি বেশ বড়। যোগাযোগ ব্যবস্থা কিছুটা ভালো থাকায় সহজেই দূর-দূরান্তের মানুষ এসে মাছ কিনছে এখান থেকে।  

স্থানীয়রা জানান, প্রতি বছরই এ মৌসুমে ব্যাগভর্তি করে ইলিশ কিনতে আসে দূর-দূরান্ত থেকে। পুরুষের চেয়ে নারীদের আনাগোনা বেশি থাকে। বিশেষ করে প্রবাসীদের স্ত্রী-সন্তানেরা বেশি আসে মাছ কিনতে। ১০-২০ হাজার টাকার মাছ কিনেন তারা। যেহেতু সহজেই বিক্রি করা যায়, সেক্ষেত্রে জেলেরা উৎসাহ নিয়ে মাছ ধরে। লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য হয় এই সময়ে! অথচ প্রজনন বাড়াতে অল্প কয়েকদিন মাছ ধরা নিষিদ্ধ। কিন্তু জেলে থেকে শুরু করে শিক্ষিত মানুষেরাও এ নিষেধ মানছে না।

স্থানীয়রা আরও জানান,চর এলাকায় আসা-যাওয়ার নির্দিষ্ট পথ রয়েছে। এসব পথে যদি চেকপোস্ট বসানো হয়, তবে ক্রেতারা মাছ কিনতে আসতে পারবে না। অন্যদিকে নদীতে তো অভিযান চলছেই। এভাবে ব্যবস্থা নিলে মাছ কিছুটা রক্ষা করা সহজ হতো।

সরেজমিনে কাজিরসূরা পদ্মার পাড় ঘুরে দেখা গেছে, দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতেই ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ ধরার ট্রলার এসে ভিড়ছে ঘাটে। ঝুড়ি ভরে মাছ নিয়ে পাড়ে নামছেন জেলেরা। কেউ আবার ট্রলারে থাকা অবস্থাতেই বিক্রি করে দিচ্ছেন পাইকারি বিক্রেতাদের কাছে। তারা আবার নদীর পাড়ে পসরা সাজিয়ে বসেছেন মাছ নিয়ে। সাধারণ ক্রেতারা দর-দাম করে কিনছেন ইলিশ। ইলিশ কিনতে শিবচরসহ আশপাশের এলাকা থেকে আয়োজন করে পদ্মার পাড়ে আসছেন ক্রেতারা। পুরুষের পাশাপাশি রয়েছে মহিলারাও। কেউ আবার পরিবার-পরিজন নিয়ে এসেছেন মাছ কিনতে! ব্যাগ ভর্তি করে মাছ কিনছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পদ্মার পাড়ের কাজিরসূরা, হীরাখাঁর বাজারসহ ৩-৪ টি স্পটে দেদার ইলিশ বিক্রি করা হয়। এদিকে শিবচরের মূল ভূখণ্ড থেকে চরাঞ্চলে প্রশাসন বা সেনাবাহিনীর প্রবেশ দেখলেই খবর পৌছে যায় অস্থায়ী হাটের বিক্রেতাদের কাছে। অভিযান পরিচালনার আগেই চরাচঞ্চলের কাশবনে লুকিয়ে পড়ে বিক্রেতারা! দুর্গম চরের নিরাপদ স্থানে সটকে পড়ে তারা। অন্যদিকে পাড়ে থাকা জেলেরাও ট্রলার নিয়ে মাঝ নদীতে সরে পড়ে!

ইলিশের প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরা থেকে ক্রয় পর্যন্ত নিষিদ্ধ থাকলেও জেনে-শুনে কেন মাছ কিনতে এসেছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে পরিবার-পরিজন নিয়ে আসা এক ব্যক্তি বলেন,দাম কমে পাওয়া যায়। তাছাড়া পদ্মা থেকে ধরা একদম তাজা মাছ সবার কাছেই লোভনীয়। আমি না কিনলেও কেউ না কেউ তো কিনবেই, সমস্যা কোথায়?

শিবচর থেকে মাছ কিনতে আসা আফরোজা আক্তার বলেন, ১০ কেজি ইলিশ কিনেছি। বাচ্চারা মাছের ডিম খেতে চায়।

প্রবাস থেকে বাড়িতে আসা মো.আবুল হাসান বলেন, বন্ধুরা নিয়ে এসেছে মাছ কিনতে। অন্যরাও কিনেছে। আমিও পরিবার, আত্মীয়-স্বজনের জন্য মাছ কিনেছি। প্রায় ৩০ কেজির মতো হবে। দাম তুলনামূলক একটু কম। মাছও তাজা।

এদিকে স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করলে তারা জানান, এ বছর সরাসরি জেলেরা ভোক্তাদের কাছে মাছ বিক্রি করছে না। আলাদা বিক্রেতা আছে। তারা জেলেদের কাছ থেকে মাছ কিনে তারপর বিক্রি করছে। মাছের দাম তুলনামূলক বেশি থাকা সত্ত্বেও প্রতিদিন প্রচুর সংখ্যক মানুষ আসেন, মাছ কিনতে। একারণেই জেলেরা মাছ ধরা বন্ধ তো করেইনি, বরং নতুন জাল তৈরি করে সংঘবদ্ধ হয়ে নদীতে নামে। দাদনে (ঋণ) টাকা এনেও এবার মাছের ব্যবসায় নেমেছে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

একাধিক জেলেরা জানান, মাছের বাজার ভালো। তবে প্রশাসনের তৎপরতা বাড়লে দাম কিছুটা কমে। বেশির ভাগ মাছেই ডিম আছে। মানুষ কিনছেও বেশি। ১০ কেজি থেকে ১৫ কেজি করে মাছ কিনে সাধারণ মানুষ। বন্ধের মৌসুমে মাছ না বিক্রি করলে খামু কী? জেলেদের সরকারিভাবে যা দেয়, তাতে সংসার চলে না। অনেকে পায়ও না।

উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ৪৮ ঘণ্টায় পদ্মা থেকে ৩৩ জেলেকে আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। এর আগে অন্যান্য দিন আটকদের মোটা অংকের জরিমানা করা হয়। জব্দকৃত লাখ লাখ মিটার জাল পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়। এদিকে শুক্রবার বিকেলে কাজিরসূরা সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে বাজার ভেঙে দেয়।

শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এইচ এম ইবনে মিজান বলেন,আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। তবে পদ্মার পাড়ের বাজারগুলোতে আমরা বড় অভিযান চালাবো। এ বিষয়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। ওখানে জেলে এবং স্থানীয় বিক্রেতারা সংঘবদ্ধ এবং প্রচুর সংখ্যক লোকজন। আমরা লোকবল কম থাকায় নদীতে জেলেদের হামলার শিকারও হতে হচ্ছে। তবে হাটগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে বড় ধরনের অভিযান চালানো হবে শিগগিরই।

জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।