সহপাঠী ও বন্ধু আমির হামজার (১৩) কাছ থেকে প্রায়ই টাকা ধার নিত ফরহাদ রেজা (১৬)। সর্বশেষ সে ৫০ টাকা ধার নিয়েছিল।
এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের চান্দড়া তা’লিমুল কুরআন মাদরাসা ও এতিমখানায়।
এ ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওই কিশোরের (হত্যাকারী) ব্যবহৃত একটি কাঁথার সূত্র ধরে এ হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফরিদপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (মধুখালী সার্কেল) মো. আজম খান।
জানা যায়, নিহত মাদরাসাছাত্র আমির হামজা আলফাডাঙ্গা সদর ইউনিয়নের শুকুরহাটা গ্রামের সায়েমউদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে ও উপজেলার চান্দড়া তা’লিমুল কুরআন মাদরাসা ও এতিমখানার জামাতখানা বিভাগের দ্বিতীয় জামাতের ছাত্র ছিল।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তার কিশোর ফরহাদ রেজা (১৬) উপজেলার চর চান্দড়া গ্রামের জাহিদুল ইসলাম ফকিরের ছেলে। আসামি ফরহাদও একই মাদরাসার শিক্ষার্থী। তারা দুজন একই ক্লাসের পড়ালেখা করে এবং দুজন ভালো বন্ধুও।
আলফাডাঙ্গা থানা সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ অক্টোবর মাদরাসা থেকে নিখোঁজ হয় আমির হামজা। দীর্ঘ খোঁজাখুঁজির পর গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে মাদরাসার পার্শ্ববর্তী একটি ডোবায় বস্তাবন্দি অবস্থায় তার লাশ ভাসতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে পরদিন বুধবার ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। এরপর ক্লুলেস হত্যা মামলায় তদন্তে শুরু করে মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করে এবং হত্যাকারী কিশোরকে গ্রেপ্তার করে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে সহকারী পুলিশ সুপার (মধুখালী সার্কেল) আজম খান বলেন, এটি একটি ক্লুলেস হত্যাকাণ্ড ছিল। এ হত্যা রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য চারটি আলাদা টিম গঠন করা হয়। আমির হামজা ওইদিন বিকেলে কারও সঙ্গে সাইকেলে উঠেছিল। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা ওই কিশোরের ব্যবহৃত কাঁথার মাধ্যমে হত্যাকারীকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয় পুলিশ।
তিনি বলেন, মাদরাসার পাশে একটি বাগান থেকে গ্রেপ্তার কিশোরের বাড়ি প্রায় ৫০০ গজ দূরে। ওই বাগানে টাকা ফেরত চাওয়া নিয়ে দুই কিশোরের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ওই কিশোর হামজার গলা টিপে ধরে। এতে শ্বাস বন্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই হামজার মৃত্যু হয়। ঘটনার পর সন্ধ্যা হয়ে গেলে ওই কিশোর লাশ বাগানে ফেলে রেখে মাদরাসায় ফিরে আসে। সন্ধ্যার হাজিরা দিয়ে মাদরাসা থেকে একটি কাঁথা নিয়ে আবার বাগানে যায়। এরপর নিজের বাড়ি থেকে একটি প্লাস্টিকের বস্তা এনে হামজার লাশ বস্তার মধ্যে ঢুকিয়ে পাঁচটি ইট ভরে দেয়, যাতে সেটি পানিতে না ভাসে। পরে বস্তাটি বাগানের পাশের পুকুরে ফেলে দেয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর পুকুর থেকে দুর্গন্ধ পেয়ে এলাকাবাসী বস্তাটি দেখতে পায়। পরে পুলিশ গিয়ে বস্তাবন্দী অবস্থায় অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে।
হত্যাকারী কিশোরের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী এএসপি বলেন, আমির হামজার কাছ থেকে মাঝে মধ্যেই কিছু টাকা ধার নিত আসামি কিশোর। সর্বশেষ ৫০ টাকা ধার নেওয়ার পর অনেক দিন ধরে তা ফেরত দেয়নি। এদিকে হামজা বারবার টাকা ফেরত চাইতে থাকায় বিরক্ত হয়ে ফরহাদ এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই কিশোর হত্যার সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে। তবে এ হত্যার পেছনে অন্য কেউ জড়িত আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে আলফাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ জালাল আলম বলেন, এ ঘটনায় হামজার বাবা সায়েমউদ্দিন বিশ্বাস বাদী হয়ে বুধবার রাতে আলফাডাঙ্গা থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় ওই কিশোরকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এসআরএস