ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

‘পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ছাড় দিলে আরও এগিয়ে আসবো’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০২২
‘পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ছাড় দিলে আরও এগিয়ে আসবো’

কলকাতা: এবারে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশের চারটি সিনেমা প্রদর্শিত হয়েছে। মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) ছিল বাংলাদেশি সিনেমাগুলোর শেষ প্রদর্শন।

 শেষ দিনেও সিনেমাগুলো দেখতে জমা ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।

‌চারটি সিনেমার মধ্যে অন্যতম মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমা ‘জেকে ১৯৭১’, পরপর দুদিন প্রদর্শিত হয়েছে এটি। দুদিনই দর্শকদের উৎসাহ ছিল প্রচুর। কলকাতার সিনেপ্রেমীরা ভীষণ আবেগ নিয়েই সিনেমাটি উপভোগ করেছেন।  

বিষয়টি দেখে বেশ ভালো লেগেছে সিনেমাটির পরিচালক ফকরুল আরফিন খানের।

বাংলাদেশে দারুণ সব সিনেমা নির্মাণ হচ্ছে আর এসব সিনেমা যেন কলকাতায় বেশি বেশি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা যায় সে অনুরোধ রাখলেন এই বাংলাদেশি পরিচালক।

ফকরুল আরফিন খান বললেন, আমরা বিশ্বাস করি বাংলাদেশের সিনেমা দিনে দিনে আরও আসবে কলকাতায়। আমার থেকে যারা তরুণ তারা আরও ভালো সিনেমা বানাচ্ছে। আমি বিশ্বাস করি আগামী দশ বছরের মধ্যে কলকাতায় আরও বেশি বেশি করে বাংলাদেশের সিনেমা দেখতে পাবেন। আসলে বাংলাদেশ আর পশ্চিমবঙ্গের ভাষা তো আর ভিন্ন নয়, আমাদের সংস্কৃতি এক। একটা দীর্ঘদিনের গ্যাপ ছিল। ইন্টারনেট এবং সামাজিক মাধ্যমের কারণে এই শূন্যস্থানটা আমরা দ্রুত পূরণ করতে পেরেছি। আমরা খুব সহজে মোশারফ করিম, চঞ্চল চৌধুরীর মতো অভিনেতাদের পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছি। যেটা আপনারা খবর শুনতেন এই নামে ভালো অভিনেতারা আছে। তাদের অভিনয় দেখার সুযোগ সেভাবে পশ্চিমবঙ্গের লোকের ছিল না। ইন্টারনেট এবং সামাজিক মাধ্যম তা আরও সহজ করে দিয়েছে। এরমধ্য দিয়ে আমাদের মেধাবীরা পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে।

এরপরই আক্ষেপের সুরে এ নির্মাতা বলেন, আমার ‘ভুবন মাঝি’ ২০১৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের ১৮টি হলে রিলিজ হয়েছিল। এখন ‘হাওয়া’ ৩০টি হলে চলছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি বাংলাদেশের সিনেমা কলকাতার রিলিজ করার জন্য। তবে হ্যাঁ, রুপি আর টাকার মধ্যে পার্থক্য থাকায় কলকাতায় রিলিজের যে খরচ হয় সেটা আমাদের জন্য একটু কষ্টকর হয়ে যায়।  

এরপর পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে কর ছাড়ের অনুরোধ জানান তিনি।

বলেন, বাংলাদেশের সিনেমা এখানে রিলিজের জন্য একটা যদি সুব্যবস্থা করে দেওয়া হতো তাহলে ভালো হতো। বিশ্বের অনেক দেশেই সিনেমা প্রদর্শনে কর ছাড় দেয়। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি বাংলাদেশের সিনেমা কলকাতায় রিলিজে ট্যাক্স ছাড় দেন তাহলে আমরা ভীষণভাবে আনন্দিত হব এবং এগিয়ে আসব।

নিজের ‘জেকে ১৯৭১’ সিনেমাটি প্রসঙ্গে পরিচালক বলেন, এতে আসলে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে কলকাতার সম্পৃক্ততা দেখানো হয়েছে। য (ছবির চরিত্রের নাম) যিনি ফ্রান্সের যুবক, বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। কারণ কলকাতায় তখন শরণার্থী শিবিরগুলোতে শিশুরা ওষুধের অভাবে মারা যাচ্ছিল। তারা যাতে না মারা যায়, সেই জন্য প্যারিসে একটা প্লেন হাইজ্যাক করেছিলেন। এবং সেই জায়গা থেকে আজকে ২৮তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে য-কে রিপ্রেজেন্ট করা এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে রিপ্রেজেন্ট করা নিঃসন্দেহে একটা আনন্দের এবং গৌরবের ব্যাপার।

কলকাতার ২৮তম চলচ্চিত্র উৎসবের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়েছিল ১৫ ডিসেম্বর। আট দিনব্যাপী উৎসবে, মোট ৪২টি দেশের ১৭৮টি ছবি দেখানো হচ্ছে ১০টি প্রেক্ষাগৃহে। শেষ দিনেও বাংলাদেশের ছবির দেখার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা লাইন দিয়েছিলেন সিনেপ্রেমী বাঙালিরা।

কলকাতার সিনেপ্রেমী রেশমী বলেন, সিনেমা মানেই ভাবের একটা আদান-প্রদান। তবে প্রতিবেশী দেশটা সম্পর্কে খুব কম জানি। সেখানে নন্দনের মতো একটা জায়গায় এভাবে যে একটা মেলবন্ধন ঘটানো হচ্ছে। আমাদের বাংলা যে এত গুরুত্বপূর্ণ একটা ইনিসিয়েটিভ নিয়েছেন ভীষণ ভালো লাগছে।  আমরা বাংলাদেশি সিনেমা খুব এনজয় করে দেখছি। আর ভালো লাগবেই না কেনো বলুন, এক ভাষায় যখন ভিন্ন স্বাদ পাচ্ছি অনুভূতিটা আলাদা তৈরি হয়। সত্যিই খুব ভালো লাগছে।

সব মিলিয়ে উৎসবের আমেজে জমজমাট কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। আর সেখানে বাংলাদেশের প্রতিটা ছবি নিয়ে কলকাতার দর্শকদের আগ্রহ যে কারও নজর কেড়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০২২
ভিএস/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।