কলকাতা: রাতের ঝলমলে আলো, সকালের কুয়াশা আর দুপুরের মিঠে রোদ- সব মিলিয়ে রাত পোহালে বড়দিন আর কয়েকদিন পরই ইংরেজি নতুন বছর বরণের প্রস্তুতিতে সেজে উঠেছে কলকাতা। অপরদিকে বাংলাদেশেও পরপর ছুটি।
প্রতিদিন হাজার হাজার বাংলাদেশি জড়ো হচ্ছেন কলকাতার মারকিউ স্ট্রিট এবং নিউমার্কেট সংলগ্ন এলাকায়। আর তাতেই বাঙালির উৎসবে যেন কিছুটা তাল কেটেছে। ইমিগ্রেশনে যেমন ঘণ্টার পর ঘণ্টা লম্বা লাইন দিয়ে ভারতে ঢুকতে হচ্ছে, ঠিক তেমনই বেড়েছে কলকাতার হোটেলগুলোর ভাড়া। নিউমার্কেট সংলগ্ন এলাকায় অনেকেই হোটেল না পেয়ে কলকাতার অন্যপ্রান্তে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।
অনেকেই থাকছেন শহর থেকে দূরে মুকুন্দপুর অর্থাৎ হসপিটাল এলাকার আশাপাশে। অনেকেই অপেক্ষা করছেন, এই বুঝি খালি হবে মারকিউ স্ট্রিটের কোনো একটা রুম। সেই আশায় এক রাত কাটিয়ে নিচ্ছেন শিয়ালদহ স্টেশনে অথবা বাসস্টপে। আবার অনেকেই মারকিউ স্ট্রিট এলাকার ফুটপাতে! বর্তমানে এমন ছবিই ভেসে উঠছে কলকাতার ‘মিনি বাংলাদেশ’ বলে পরিচিত মারকিউ স্ট্রিট এলাকায়। আর তাতেই কিছুটা বিষন্ন উৎসব প্রিয় কলকাতামুখি বাংলাদেশিরা।
ঢাকা থেকে সপরিবারে আসা একজন বলেন, এবারে ঘোরার জন্যই আসা। ভালো লাগছে। তবে অনেক বাংলাদেশিতে ভরা। যেখানে হাঁটছি সেখানেই শুধু বাংলাদেশিরা। খেতে যাচ্ছি সেখানে বাংলাদেশি, কেনাকাটা করছি ওখানেও বাংলাদেশি। এত বাংলাদেশি আসায় এখানে হোটেলগুলোয় রুম পাওয়া যাচ্ছে না। শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) অনেক কষ্টে রাতে একটা রুম ব্যবস্থা করেছি। আর বর্ডারের কথা বলবেন না। বর্ডারে সকাল ৯টায় দাঁড়িয়েছি ভারতী ইমিগ্রেশন পার হয়েছি রাত৮টায়। এত বাংলাদেশি আসছে বড়দিনের আর নতুন বছরের কারণে। কষ্ট হয়েছে, কিন্তু ভালো লাগছে।
হাসতে হাসতে সাজ্জাদ জানান, আর বলবেন না, দাদাদের দেশ তো এখন বাংলাদেশিদের দখলে! তবে বর্ডারে খুব বাজে অবস্থা। প্রচুর বাংলাদেশির ভিড়। ভারতীয় ইমিগ্রেশনের সিস্টেমটা যদি একটু আপডেট হতো তাহলে আমরা যারা এদেশে ঘুরতে আসি, তাদের জন্য ভালো হয়। তবে কলকাতায় এসে সমস্যাটা বেড়েছে। এক হাজার রুপির রুম, তিন হাজার রুপি চাইছে। তাও সহজে মিলছে না। এক রাত আমাদের ওয়েট করতে হয়েছে।
আবার রাজু নামে একজনের অভিমত, কলকাতা আগের থেকে পাল্টে গেছে। আগে এরকম ছিল না। যতই ভিড় থাকুক তাদের রুম রেট নির্ধারিত ছিল। এখন এখানে, কক্সবাজারে যেমন ছুটির দিনগুলো হোটেলগুলো ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। এখানেও এখন একই হচ্ছে।
তবে বাঙালি মানেই মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কারও হোটেলের মান নিয়ে সমস্যা, কারোর খাবার। অনেকের মতে শপিংয়ের সেরা ডেস্টিনেশন কলকাতা। কেউ আবার বাংলাদেশের স্বাদ পাচ্ছেন কলকাতায় এসে। উত্তরাবাসী সুমন জানান, খুব যে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি এমনটা নয়। তবে অন্যান্যবারের চেয়ে রুমে ভাড়াটা বেশি। তার স্ত্রী তিথির মতে, কেনাকাটার জন্য কলকাতা বেস্ট। তবে খাবার আমাদের বাংলাদেশ বেস্ট।
আর সাফিনের মতে, বাংলা ভাষায় বিদেশ ভ্রমন হিসেবে কলকাতায় অনেক সুবিধা আছে। এখানে প্রচুর মুসলমান হোটেল আছে। বিশেষ করে আমরা যারা মুসলমান তাদের জন্য সহজ এই কলকাতা। কিন্তু চেন্নাই, দিল্লি, মুম্বাই ভারতের অনেক জায়গায় গেছি। মুসলমানের এই পরিবেশ তেমন পাওয়া যায় না। ফলে সেদিক থেকে কলকাতায় অনেক সুবিধা আছে।
ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে কলকাতায় প্রথম এসেছেন রাশেদ। তার অভিমত, দেখছি এখানে বাংলাদেশি। অনেক শপিং করছেন, ঘোরাঘুরি করছেন। বাঙালি রেস্টুরেন্টগুলোয়, বাংলাদেশি খাবার পাওয়া যায়। আমার মোটেও খারাপ লাগছে না। সবকিছু মিলিয় কলকাতায় ভালোই একটা বাংলাদেশের স্বাদ পাওয়া যাচ্ছে।
কিন্তু কেন, কলকাতা বলতে মারকিউ স্ট্রিটকেই বোঝেন বাংলাদেশিরা? এ বিষয়ে শহরের হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগী সদস্য, মনোতোষ সরকার বলেন, এর কারণ টুরিস্ট হিসেবে যা যা প্রয়োজন সব সুযোগ সুবিধা এখানে আছে। একেতো অনেক হোটেল, তারপর শপিংয়ের জন্য সামনেই নিউমার্কেট। একাধিক মানি এক্সচেঞ্জ আছে। বাঙালি খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা আছে। এবং মারকিউ স্ট্রিট থেকে খুব বেশি দূরত্বে নয় যেখানে বাংলাদেশিরা চিকিৎসা করেন। তবে সব থেকে বড় বিষয় হল, বাংলাদেশিদের জন্য এই মারকিউ স্ট্রিট সবচেয়ে নিরাপদ। ২৪ ঘণ্টা পুলিশের মনিটরিং থাকে। গোটা কলকাতায় রাত ১২টা-১টা পর্যন্ত ঘোরাফেরা করেন তারা। সে কারণে বাংলাদেশিরা বেশি পছন্দ করেন এই এ অঞ্চলটা।
কিন্তু অনেক সময় হোটেলের চেয়ে বেশি মানুষ চলে আসেন। তাতে কিছু সমস্যা সৃষ্টি হয়। এটাও আমরা দেখার চেষ্টা করছি আমাদের গেস্টদের যেন সমস্যা না হয়। তারা যেন ভালো মতো এনজয় করতে পারেন ট্রিপটা। তাদের যাতে সমস্যা না হয় সেদিকে আমাদের হোটেল অ্যাসোসিয়েশন এবং কলকাতা পুলিশ নজর রাখছে।
ফলে সবকিছু মেনে নিয়ে বছর শেষের বাকি কয়টা দিন পরিবার নিয়ে উৎসবে মেতে থাকতে চাইছেন বাংলাদেশিরা। কারণ একটাই, বাংলা ভাষায় বিদেশ ভ্রমণ বলতে প্রতিবেশী রাজ্যের রাজধানী অর্থাৎ কলকাতার বিকল্প হতে পারে না। এমনটাই মত সবার।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৩ ঘণ্টা, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২২
ভিএস/এমএমজেড