ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ভারত

সরকারের সঙ্গে দ্বন্দ্ব, ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলা হচ্ছে ডাকবাংলোর মাঠে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০২২
সরকারের সঙ্গে দ্বন্দ্ব, ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলা হচ্ছে ডাকবাংলোর মাঠে

কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গে শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলা। তবে প্রথা মেনে পৌষমেলা হচ্ছে না রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত আশ্রম শান্তিনিকেতনে।

তার বদলে শান্তিনিকেতনের আদলে পৌষমেলা হচ্ছে, মমতার সরকারের জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বোলপুর ডাকবাংলোর মাঠে। বিকল্প এ পৌষমেলা শুরু হয়েছে ৭ পৌষ (২৩ ডিসেম্বর), চলবে ১২ পৌষ  (২৮ ডিসেম্বর) পর্যন্ত।

তবে জানা গেছে, মেলা না করলেও শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ পালন করছে পৌষউৎসব। সেই উপলক্ষে ঐতিহ্য মেনে ছাতিমতলায় পৌষউৎসবের আয়োজনটুকু করা হয়েছিল। বৈদিক মন্ত্র পাঠ, রবীন্দ্র সংগীতের মধ্য দিয়ে শান্তিনিকেতনের ছাতিমতলায় হয় সাধারণ মানের উৎসব। তবে বিশ্বভারতীর পূর্বপল্লী মাঠে এবং শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের উদ্যোগে এবারও যে হবে না, তা আগেই টের পাওয়া গিয়েছিল।

পৌষমেলা না হওয়ার পাশাপাশি পৌষউৎসব নিয়েও দেখা গিয়েছিল সমস্যা।  

জানা যায়, পৌষউৎসবের আয়োজন হবে কী হবে না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের জেরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে পৌষউৎসব আয়োজন করতে তাদের কোনো অসুবিধা নেই। তিন সপ্তাহ ধরে আন্দোলনের জেরে বন্ধ ছিল সাপ্তাহিক উপাসনা। সেই বন্ধ উপাসনা গৃহ খুলেছে শুক্রবার। ওইদিন গৌর প্রাঙ্গণে ভোর সাড়ে ৫টায় শুরু হয় বৈতালিক অনুষ্ঠান। এরপর শান্তিনিকেতন গৃহে সকাল ৬টায় বাজে সানাই। সকাল সাড়ে ৭টায় ছাতিমতলায় উপাসনার মধ্য দিয়ে ঘরোয়াভাবে অতি সাধারণভাবে শান্তিনিকেতনে পালিত হয় পৌষউৎসব।

প্রসঙ্গত, করোনার পরে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের আপত্তিতে বন্ধ হয়ে যায় পৌষমেলা। ফলে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে বীরভূম জেলা প্রশাসন বোলপুর ডাকবাংলোর মাঠে শান্তিনিকেতনের আদলে আয়োজন করে বিকল্প পৌষমেলার। মূলত, ব্যবসায়িক সংগঠনের উদ্দেশেই এ আয়োজন। লোকসংস্কৃতি ও হস্তশিল্প মিলিয়ে প্রায় ১৫০০টির বেশি স্টল নিয়ে শুরু হয়েছে মেলা। সেখানে নানা রকম পণ্যের পশরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। জামা কাপড়, বিছানার চাদর, শীতবস্ত্র, ব্যাগ, অন্য জেলার শাড়ি, রোজকার দরকারি জিনিষপত্রসহ সব ধরনের নিত্য ব্যবহারের বাহারি পণ্য এবং হস্তশিল্প বিক্রি হচ্ছে এ মেলায়। পাশপাশি ভোজনরসিকদের জন্য এ মেলায় রয়েছে নানান আয়োজন। সবজি, ডিম বা মাছের ভাজাপোড়াসহ চা কফি। সব কিছুরই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বিকল্প পৌষমেলায়।

বিকল্প পৌষমেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন পশ্চিমবঙ্গের দুই মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, চন্দনাথ সিংহ ও বিধানসভার উপাধ্যক্ষ আশীষ বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিশ্বভারতীর সাবেক উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্ত, সাবেক ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সবুজকলি সেন, প্রবীণ আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর, সাংসদ শতাব্দী রায়, জেলাশাসক বিধান রায়, পুলিশ সুপার নগেন্দ্রনাথ ত্রিপাঠীসহ অন্যান্যরা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বোলপুর পুরসভার পক্ষ থেকে বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু, বিশ্বভারতীর জনসংযোগ কর্তৃপক্ষ মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায় এক প্রেস বিবৃতিতে বলেছেন, যাদের বিরুদ্ধে সিবিআই, ইডি তদন্ত করছে, সেসব দুর্নীতিগ্রস্তদের সঙ্গে এক মঞ্চে বসবেন না উপাচার্য।  

মূলত, বিশ্বভারতীর সাবেক উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্তর বিরুদ্ধে নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে সিবিআই তদন্ত চলছে। সাবেক উপাচার্য সবুজকলি সেনকে বহিষ্কার করেছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। এছাড়া বিকল্প পৌষমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিতদের মধ্যে রাজ্যের মন্ত্রী-বিধায়ক-নেতাদের অনেকের বিরুদ্ধেই সিবিআই-ইডি তদন্ত করছে।   

উপাচার্য পদে দায়িত্ব নেওয়ার পরই পশ্চিমবঙ্গের শাসকদলের সঙ্গে একাধিকবার বাগবিতণ্ডায় জড়িয়েছিলেন বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। তারপর থেকে অনেকটাই দূরত্ব তৈরি হয়েছে শাসকদলের সঙ্গে উপাচার্যের।

১৮৯১ সালে শান্তিনিকেতনে উপাসনা গৃহ প্রতিষ্ঠিত হয়। এখান থেকেই পৌষউৎসবের সূচনা হয়েছিল। ১৮৯৪ সালে পৌষমেলা শুরু হয়। দিন দিন মেলার পরিধি বৃদ্ধি পায়। পরে মেলা উঠে আসে পূর্বপল্লী মাঠে। ২০১৯ সাল পর্যন্ত শান্তিনিকেতনে শেষবার হয় ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলা। তারপর ২০২০ সালে করোনা কারণে বন্ধ হয়ে যায়। ২০২১ সাল থেকে মমতার সরকারের সঙ্গে বিশ্বভারতী উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর লাগাতার সংঘাতের জেরে মেলা বন্ধ হয়ে যায়। তবে আবার শুরু হলো পৌষমেলা। নাম দেওয়া হলো বিকল্প পৌষ মেলা।

বাংলাদেশ সময়: ০০০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০২২
ভিএস/এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।