কলকাতা: ভারতের বাংলা ওয়ার্ল্ডওয়াইডের উদ্যোগে কলকাতায় রোববার (৮ জানুয়ারি) শেষ হলো দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক বাঙালি সম্মেলন। তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলন গত ৬ জানুয়ারি শুরু হয়েছিল সল্টলেকের ইজেডসিসি মঞ্চে।
দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক বাঙালি সম্মেলন অংশ নিয়েছিলেন ভারত, বাংলাদেশ, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী বাংলা ভাষাপ্রেমী বুদ্ধিজীবীরা। সল্টলেকের ইজেডসিসির প্রাঙ্গণের ৫টি মঞ্চে একযোগে চলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও শিল্প বিষয়ে একাধিক মতবিনিময় ও সেমিনার। এর পাশাপাশি তিন দিনই ছিল নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, বাঙালিদের নিয়ে সম্মেলন। উদ্যোগটা ভালো। তবে আরও গোছানো হলে ভালো হতো। বিশ্বের বাঙালিদের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি হোক, এটা আমরাও চাই। তবে মনে রাখতে হবে বাংলাদেশ একটি দেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ ভারতের একটি অংশ। তাই দুই দেশের মধ্যে আদান-প্রদান বেশি বেশি প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের মধ্যে দেশভাগ হলেও দুই বাংলার ভাষা এক। সেই হিসেবে আমাদের মধ্যে আরও যোগাযোগ আরও হৃদ্যতা বাড়ানো প্রয়োজন এবং সেসব করতে যা যা করার প্রয়োজন সব বিষয়ে নজর দেওয়া দরকার।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার বলেন, ইউরোপ আমেরিকাসহ বিশ্বের বহু দেশ থেকে বাঙালিরা এসেছেন। প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে বিরাট দল এসেছে। শিক্ষার্থীরাও এসেছেন। তাদের সাথে নানান বিষয় মতবিনিময় ও সাংস্কৃতিক আদান প্রদান চলছে। এটা নয় যে, বছরে একটা সম্মেলন। দুই বাংলার মধ্যে সংস্কৃতিসহ বহু বিষয় সারা বছর আমাদের মধ্যে আদান-প্রদান হয়ে থাকে। এরকম সম্মলনের মধ্য দিয়ে পরস্পরের অভিজ্ঞতা এবং আবেগ দ্বারা যথেষ্ট উপকৃত হলাম।
তিনি আরও বলেন, সারা পৃথিবীর বাঙালিদের একটা যোগসূত্র তৈরি করার এই ভাবনাটাকে সাধুবাদ জানাই। রাজনৈতিকভাবে আমাদের মধ্যে সীমানা থাকলেও বাঙালি একটা অখণ্ড জাতিসত্তা। এই ধারণা ও সংস্কৃতি নিয়ে আমাদের সম্মেলন।
তিনদিনের আইন বিষয়ক সম্মলনে অংশগ্রহণ করেছিলেন সাবেক বিচারপতি চিত্ততোষ মুখার্জি, ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম, বিচারপতি ওবেদুল হাসান, বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস, বিচারপতি সোমেন সেন, বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি, বিচারপতি অশোক গাঙ্গুলি, বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ, বিচারপতি সমরেশ ব্যানার্জি, ব্যারিস্টার অনিন্দ্য মিত্র, ব্যারিস্টার জয়ন্ত মিত্র, ব্যারিস্টার বিমল চ্যাটার্জি, বিকাশ ভট্টাচার্য, চামেলী মজুমদার, ব্যারিস্টার তানিয়া আমির প্রমুখ।
চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য অধিবেশনে অংশ নিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিশিষ্ট চিকিৎসক সুকুমার মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে কামরুল হাসান খান, শিবাজি বসু, অশোকানন্দ কোনার, সুজিত কর পুরকায়স্থ, গৌতম মুখার্জি, মামুন আল মাহতাব, ডা. মাসুদা, শারনিল সাদিয়া, মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম, ইতেসামুল হক, অমিত চক্রবর্তী, গৌতম সমাদ্দার প্রমুখ।
শিক্ষা সম্পর্কিত আলোচনায় অংশ নিয়েছিলেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক পবিত্র সরকার, মৌলানা আবুল কালাম, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সৌকত মৈত্র, বাংলাদেশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মশিউর রহমান, অধ্যাপক সব্যসাচী ভট্টাচার্য, অধ্যাপক অশোক রঞ্জন ঠাকুর, অধ্যাপক মণিমালা দাস, অধ্যাপক সাবিত্রী, নন্দ চক্রবর্তী, অধ্যাপক গোপা দত্ত ভৌমিক, অধ্যাপক সুশান্ত চক্রবর্তী, অধ্যাপক সংখ্যায়ন চৌধুরী, অধ্যাপক গৌরী শঙ্কর ঘোষ, ড. দেবাশীষ চক্রবর্তী, শ্রীমতী অপনা দত্ত, শ্রীমতী ব্রততী ভট্টাচার্য প্রমুখ।
শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক ছিল একাধিক আলোচনায় নিয়েছিলেন এবাদুল করিম, শেষ ফারুক, তরণজিৎ সিং, সত্যম রায়চৌধুরী, সুব্রত দত্ত, শমিত রায়, জয়দীপ ভট্টাচার্য, সোমনাথ ভট্টাচার্য, শিবাজী বসু, সুজিত কর পুরকায়স্থ প্রমুখ।
সাহিত্য বিষয়ক অধিবেশনে অংশ নিয়েছিলেন ইংল্যান্ড থেকে সৈয়দ বদরুল হাসান, বাসবী ফ্রেজার, সামিম আজাদ।
এছাড়া প্রতিদিনই অধিবেশন শেষে অনুষ্ঠানে দুই বাংলার শিল্পীরা অংশ নেন। তাদের মধ্যে নাসির উদ্দিন ইউসুফ, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, বিজয়লক্ষ্মী বর্মণ, শঙ্করলাল ভট্টাচার্য, শামা রহমান, চন্দনা মজুমদার, ব্রততী বন্দোপাধ্যায়, কিরণচন্দ্র রায়, ইন্দ্রানী ভট্টাচার্য, স্বপ্না দে, স্বপন সোম, প্রবীর ব্রহ্মচারী, রিনা দেব, হায়দ্রাবাদের সুত্রক নাট্যগোষ্ঠী, অংশুমান ভৌমিক, আশিস গোস্বামী, সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, অঞ্জন বোস, নীলোৎপল মজুমদার প্রমুখ।
এছাড়াও তিনদিনের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের তিনটি সিনেমা প্রদর্শিত হয়। সিনেমাগুলো হলো–‘নোনা জলের কাব্য’; ‘হাসিনা: আ ডটার’স টেল’ এবং ‘গেরিলা’।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০২৩
ভিএস/এমজেএফ