কলকাতা: আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে যে হৃদ্যতা তৈরি হয়েছে, তা আজও বহমান এবং উত্তোরত্তোর বৃদ্ধি পেয়েছে। বঙ্গবন্ধু একটা চেতনা, তাকে শারীরিকভাবে হত্যা করা যায়, তার আদর্শ নয়—তিনি আমাদের হৃদয়ের মধ্যে বিরাজ করছেন।
মাহবুবউল আলম হানিফ আরও বলেন, ভারতের অবদান, বিশেষ করে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর অবদান বাংলাদেশ কখনোই ভুলবে না।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে রোববার (২৭ আগস্ট) কলকাতার রোটারি সদনে ‘১৫ আগস্ট: শোক হোক শক্তির বুনিয়াদ’ শীর্ষক শ্রদ্ধা নিবেদন ও স্মরণসভার আয়োজন করে ভারত বাংলাদেশ মৈত্রী সংঘ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন শোষিতদের নেতা। বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাঙালিদের নেতা। স্বাভাবিকভাবে কলকাতায় যারা একদা পূর্ববঙ্গীয় ছিলেন, তাদের কাছে সব সময় বঙ্গবন্ধু একটা আবেগ, আলাদা ভালোবাসা। আমরা দুই বাংলার মানুষ একই ভাষায় কথা বলি। দুই বাংলার মানুষের সাথে আত্মার সম্পর্ক, একটা রক্তের সম্পর্ক আছে। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর প্রতিটা কর্মকাণ্ড ছিল বাঙালির জন্য। স্বাভাবিকভাবেই পশ্চিমবঙ্গ বিশেষ করে কলকাতার মানুষের মধ্যে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে জানার আগ্রহ বেশি। যে কারণে এই ধরনের অনুষ্ঠানে এত মানুষের আগমন হয়।
সম্প্রতি ভারত সরকার চাল, চিনি ও পেঁয়াজসহ একাধিক নিত্যপণ্য রপ্তানিতে শুল্ক বাড়িয়েছে। সাংবাদিকদের এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, প্রতিটা দেশের রাষ্ট্রনীতি সে দেশের সরকার ঠিক করে। সে ব্যাপারে আমাদের কিছু বলার নেই। তবে যেহেতু ভারতের প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ, দুই দেশের মধ্যে পণ্য আমদানি-রপ্তানি যাতে সহজভাবে করা যায়, এ বিষয়ে ভারত সরকার বিবেচনা করলে আমরা খুশি হব।
সামনেই বাংলাদেশে নির্বাচন, নির্বাচনের আগে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, বাজারে স্থিতিশীলতা কবে ফিরবে—এমন প্রশ্নের জবাবে হানিফ বলেন, স্থিতিশীলতার বিষয়ে এই মুহূর্তে বলা খুব কঠিন। দুই বছর করোনাকালে গোটা বিশ্বজুড়ে আর্থিক মন্দা দেখা গিয়েছিল। এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। টানা তিন বছর অর্থনৈতিক মন্দায় বিশ্বে ধাক্কা লেগেছে। সেই ধাক্কা কোনো কোনো দেশ কাটিয়ে উঠতে পেরেছে, কোনো কোনো দেশ এখনো কাটি উঠতে পারেনি। বাংলাদেশ এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। আমরা আশা করছি, ২০২৪ সালের মধ্যে কাটিয়ে উঠতে পারব।
ভারতের চন্দ্রযানের সফল অবতরণ প্রসঙ্গে হানিফ বলেন, ভারতের এই সফলতা নিঃসন্দেহে আমাদের এই উপমহাদেশের কাছে অত্যন্ত গৌরবের। এই সাফল্যের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অবশ্যই একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। এরকম একজন দক্ষ প্রধানমন্ত্রী থাকলে সে দেশের অবশ্যই উন্নতি হবে। আজকে ভারত গোটা বিশ্বের মধ্যে একটা অন্যতম শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। ভারত অর্থের দিক দিয়ে এবং সমঝোতার দিক দিয়ে বিশ্বে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা চাই আমাদের প্রতিবেশী ভারতের এই সফলতার অগ্রগতি অব্যাহত থাকুক। আমি মনে করি, প্রতিবেশী দেশ যত শক্তিশালী হবে, যত বড় হবে, ভারতের প্রতিবেশী দেশ হিসেবে আমরাও এগিয়ে যেতে পারব।
স্মরণসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম বলেন, শেখ মুজিব একটা শব্দ, যা একটা জাতিকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। শেখ মুজিব মানে একটা দেশের প্রতিষ্ঠা, একটি রাষ্ট্রকে নতুন উচ্চতায় বিশ্বের দরবারে নিয়ে যাওয়া। শেখ মুজিব শুধু অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ নয়, গোটা উপমহাদেশে তার অসাম্প্রদায়িক চেতনা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি দেখিয়েছিলেন যে, উন্নত বিশ্বের সঙ্গে কীভাবে একসাথে পথ চলা যায়। আজ তার সেই স্বপ্নের চিন্তা তার সুযোগ্য কন্যা বাস্তবায়িত করছেন।
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের বিষয়ে তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে আমাদের যে রক্তের বন্ধন, তা আগামীতেও টিকে থাকবে। আমরা মনে করি, বন্ধু পরিবর্তন করা যায়, প্রতিবেশী পরিবর্তন করা যায় না। প্রতিবেশীর সঙ্গে থাকতে হয় একটা ভ্রাতৃত্বের বন্ধন নিয়ে, মধুর সম্পর্কের মধ্য দিয়ে।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট সমাজসেবী আবু নাসের বলেন, আগস্ট মাস মানেই শোকের মাস। এই মাসে আমরা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে হারিয়েছি। এই মাসেই আমরা কবি কাজী নজরুল ইসলামকে হারিয়েছি। আর এই মাসেই আমরা বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেও হারিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, শেক্সপিয়রের একটি উদ্ধৃতি দিতে চাই। শেক্সপিয়র বলেছিলেন—এই জগত সংসারে মহত্ব অর্জন করে তিনটি বৈশিষ্ট্য নিয়ে। কেউ কেউ জন্মগতভাবেই মহৎ হয়ে জন্মগ্রহণ করেন। কেউ কেউ নিজ প্রচেষ্টার বলে মহত্ব অর্জন করেন। আর কেউ কেউ মুহূর্তের লক্ষণ বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধুর মধ্যে এই তিনটে বৈশিষ্ট্যই ছিল। ফিদেল কাস্ত্রো বলেছিলেন—আমি হিমালয় দেখিনি, আমি শেখ মুজিবকে দেখেছি। শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী শেখ মুজিব সম্বন্ধে বলেছিলেন—শেখ মুজিবের সমসাময়িক তুলনা করার মতো নেতা বিশ্বে আর কেউ নেই। শেখ মুজিব হলো আমার ভাই।
অনুষ্ঠানে কলকাতাস্থ বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস বলেন, ইতিহাসের সবচেয়ে নির্মম হত্যাকাণ্ডের দিনটি হলো ১৫ আগস্ট। আমি এটুকু জোর দিয়ে বলব, অশুভ শক্তিরা ব্যর্থ, তারা শারীরিকভাবে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে পেরেছে। কিন্তু আমাদের সবার হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু রয়েছেন। শুভশক্তির জয় সব সময়ই হয়, ইতিহাস তা সব সময় সাক্ষ্য দেয়।
ভারত বাংলাদেশ মৈত্রী সংঘের সভাপতি শিশির বাজোরিয়া বলেন, বঙ্গবন্ধুকে আমরা আলাদা করে দেখি না। আমরা যারা কলকাতাবাসী বা বলতে পারেন পশ্চিমবঙ্গবাসী, আমরা সব সময় মনে করি বঙ্গবন্ধু আমাদের।
কলকাতায় ২০২০ সালে যাত্রা শুরু করে দুই দেশের মৈত্রীর নামে প্রতিষ্ঠিত ভারত বাংলাদেশ মৈত্রী সংঘ। প্রতি বছরই দুই দেশের বিশেষ দিন এবং বিশিষ্টজনদের নিয়ে একাধিক কর্মসূচির আয়োজন করে সংগঠনটি।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০২৩
ভিএস/এমজেএফ