ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

‘হেরিটেজ’ স্বীকৃতির অপেক্ষায় যশোররোডের শতবর্ষী গাছগুলি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৭
‘হেরিটেজ’ স্বীকৃতির অপেক্ষায় যশোররোডের শতবর্ষী গাছগুলি যশোররোডের শতবর্ষী গাছ/ফাইল ফটো

কলকাতা: যশোর রোডের ভারতীয় অংশে কী ধরনের কতটি গাছ কাটতে চাইছে রাজ্য এবং তার বদলে পরিপূরক বৃক্ষরোপণের কী অবস্থা তা যাচাইয়ে দু’জন আইনজীবী নিযুক্ত করেছিলেন কলকাতা হাইকোর্ট। গাছগুলিকে ‘হেরিটেজ’ ঘোষণার দাবি কতটা যুক্তিসঙ্গত তাও খতিয়ে দেখতে বলা হয় তাদের। দুই কর্মকর্তা কৌশিক দে ও বিশ্বরূপ নন্দী পরিদর্শনের পর ১৬১ পাতার রিপোর্ট জমা দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিশীথা মাত্রে এবং বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর বেঞ্চে।

সব পক্ষকে মতামত জানানোর জন্য আরও দুই সপ্তাহ সময় দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ৩১ অগাস্ট ফের যশোর রোডে কয়েক হাজার প্রাচীন গাছ রক্ষার দাবিতে মামলার শুনানি হবে।

গাছগুলির বয়স, দৈর্ঘ্য, কাণ্ডের বেড়, বিশালতা, নান্দনিকতা ও ঐতিহাসিক যে যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে তা আগেই প্রমাণিত।

একই রকম ক্ষেত্রে সিঙ্গাপুর বা আমেরিকার বিভিন্ন প্রদেশের যে বিধি-নিয়ম রয়েছে এবং ভারতের বিধি-নিয়ম, জীববৈচিত্র্য আইন ও পশ্চিমবঙ্গ বৃক্ষরক্ষা আইনের সংস্থান উল্লেখ করে কোর্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যশোর রোডের গাছগুলি ‘হেরিটেজ’ স্বীকৃতির উপযুক্ত।

১৬১ পাতার রিপোর্ট বলা হয়, যেখানে ১৯শ সালে লাগানো ৫.৮ মিটার বেড়ের রেইন ট্রি সিঙ্গাপুরে ‘হেরিটেজ’ স্বীকৃতি পেয়েছে। যশোর রোডের বহু রেইন ট্রি  ১৮শ ৪০ সালের পরে লাগানো। তাহলে এই গাছগুলি হেরিটেজ স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য হবে না কেনো। গাছগুলি যে বহু পুরনো তার উল্লেখ রয়েছে ১৯১২ সালে প্রকাশিত ও ম্যালির গেজেটিয়ারেও রয়েছে। এছাড়া গাছগুলি যে প্রাচীন, পরিদর্শনে সঙ্গী নদীয়া ও মুর্শিদাবাদের বন কর্মকর্তার বক্তব্যেও তার উল্লেখ রয়েছে। কোর্ট অফিসের কর্মকর্তারা মেপে দেখেছেন অনেক গাছের বেড় ৮ মিটার পর্যন্ত রয়েছে।

রিপোর্ট প্রসঙ্গে জনস্বার্থ মামলাকারী সংস্থার আইনজীবী রঘুনাথ চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘আমরা গাছগুলিকে হেরিটেজ ঘোষণার দাবি প্রথম থেকেই করে আসছি। এতো পুরনো গাছগুলিকে রক্ষা না করে কেটে ফেলার যে কথা সরকারপক্ষ ভাবছে, তা এক আত্মঘাতী পরিকল্পনা। গাছগুলি বাঁচলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের পক্ষে মঙ্গল। মহামান্য আদালতই সবদিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন।

কোর্ট অফিসারদের রিপোর্টে জানানো হয়, পাঁচটি রোড ওভারব্রিজের জন্য যে ৩৫৬টি গাছ আপাতত কাটার কথা বলেছে রাজ্য সরকার, সেগুলির অবস্থান বা প্রজাতিগত পরিচয় নিয়ে পূর্ত কর্মকর্তার হলফনামার তথ্যে অসঙ্গতি নেই। তবে যে গাছগুলি এরইমধ্যেই কাটা হয়েছে তারও উল্লেখ রয়েছে রিপোর্টে।
এরইমধ্যে কাটা পড়েছে এই অংশের গাছ
আবার গাছ কাটার বদলে স্থানান্তর বা প্রতিস্থাপনের নির্দেশ থাকলেও বিষয়টি যে সরকারি বিবেচনাতেই নেই এটিও উল্লেখ করেছেন কোর্ট অফিসারেরা। তারা দেখেছেন, সরকার পরিবর্ত গাছ লাগাবে বললেও আগাম জমি তৈরির কাজও হয়নি। কোর্ট অফিসারেরা লিখেছেন, বহু বিষয়ই এখনও চূড়ান্ত হয়নি সরকারি তরফে। দু’টি গাছের মধ্যে কতটা দূরত থাকবে, সেটাও চূড়ান্ত নয়। একটি গাছ কাটা হলে পাঁচটি চারা লাগাতে হবে, সে নিয়ম মানলেও যেখানে গাছ কাটা হবে সেখানেই অন্তত ২০ শতাংশ বৃক্ষরোপণের বিধি মানার কোনো সরকারি পরিকল্পনায় নেই। জানানো হয়েছে রিপোর্টে।

টাকি রোডেও সম্প্রতি ৭শ’র বেশি গাছ কাটা হয়েছে। সে জন্য সরকারকে জরুরি পরিপূরক চারা লাগানোর নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, ১৯ আগস্ট, ২০১৭
ভিএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।