ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ভারত

পশ্চিমবঙ্গ ‘বাংলা’ হতে আরও অনেক পথ বাকি

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৩৭ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০১৮
পশ্চিমবঙ্গ ‘বাংলা’ হতে আরও অনেক পথ বাকি পশ্চিমবঙ্গ থেকে ‘বাংলা’ পাস রাজ্যের বিধানসভায়।

কলকাতা: এক সময় ভারতের সরকারি খাতায় পশ্চিমবঙ্গের পোশাকি নাম ছিল ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল’। কয়েক বছর আগেই ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল’ বাংলা-হিন্দি-ইংরেজিসহ সব ভাষাতেই সরকারি খাতায় নাম হয়েছিল ‘পশ্চিমবাংলা’। এবার বাদ পড়লো ‘পশ্চিম’ শব্দটি। রাজ্যের বিধানসভায় ‘বাংলা’ রাখার বিল সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়ে রওনা দিলো দিল্লির পথে। কেন্দ্রীয় সংসদ বা লোকসভায় পাস হয়ে গেলেই পশ্চিমবঙ্গ পরিচিত হবে ‘বাংলা’ নামে। তবে কবে হবে ‘বাংলা’ তা এখনও নিশ্চিত নয়। কারণ বাধ সেধেছে বিজেপি। তাদের ‘বাংলা’তে আপত্তি। তবে সমর্থন ‘বঙ্গ’তে।

ইতিহাস বলছে, চতুর্দশ শতাব্দীতে ইলিয়াস শাহী রাজবংশের আমল থেকে ‘বাংলা’ নামের প্রচলন। সেসময় ‘বাংলা’ বলতে বর্তমান বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের ভূখণ্ডকে বোঝানো হতো।

এক সময় পূর্ব বাংলা ছিল তাই পশ্চিমবাংলাও ছিল। পূর্ব বাংলা এখন বাংলাদেশ আর ভারতে পশ্চিমবাংলা এখন পূর্ণ রাজ্য।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরই পশ্চিমবঙ্গ বা ওয়েস্ট বেঙ্গল নামটি তাৎপর্যহীন হয়ে পড়েছিল। তাহলে শুধু শুধু বাংলার সঙ্গে পশ্চিম বহন করা কেনো। এই মত সবকটি রাজনৈতিক দলসহ বুদ্ধিজীবী এবং সাধারণ রাজ্যবাসীর। রাজ্যের বিধান সভায় ‘বাংলা’র বিল পাস হলেও বিজেপি’র সমর্থন ‘বঙ্গ’তে। কারণ বিজেপির মতে বিশ্ব মানচিত্রে বাংলা শব্দটি বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত। রাজ্যের নাম বঙ্গ রাখলে বিষয়টি সুবিধাজনক হয়।
 
২০১১ সালে মমতা ভোটে জিতে আসার পরেই এই প্রস্তাব এনেছিলেন। কিন্তু এইবার নাম পরিবর্তনের বিলটি গুরুত্বের সঙ্গে পাস করালেন। তবে এই প্রস্তাব প্রথম এসেছিল বাম আমলে। ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল’-এর নাম পরিবর্তন হয়ে ‘বেঙ্গল’ এর বঙ্গানুবাদ ‘বাঙলা’ না ‘বঙ্গ’ কোনটা হবে সেই বিষয়ে সরকার তখন কিছু ঠিক করে উঠতে পারেনি। তবে মমতার সরকার চাইছে বাংলা-হিন্দি-ইংরেজিসহ সব ভাষাতেই সরকারি খাতায় রাজ্যের নাম হোক ‘বাংলা’।
 
তাহলে কি ইতিহাস বিকৃত করছে মমতা সরকার?
তথ্য বলছে, ভারতে এই প্রথম কোনো রাজ্যের নাম পরিবর্তন হচ্ছে তা নয়। যারা ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল’ বা ‘পশ্চিমবঙ্গ’ নামের সঙ্গে দেশ ভাগের স্মৃতির কথা বলছেন, তাদের যুক্তির বিপক্ষে সরকারের পাল্টা যুক্তি ছিল এক সময়ের ‘ইস্ট পাঞ্জাব’ এখন শুধু ‘পাঞ্জাব’। এছাড়া ভারতের স্বাধীনতার পর হায়দ্রাবাদ বদলে হয় অন্ধ্রপ্রদেশ, ইউনাইটেড প্রভিনসেস বদলে হয়েছে উত্তর প্রদেশ, কোচির নাম বদলে হয়েছে কেরালা এবং মধ্যভারত নাম বদলে হয়েছে মধ্যপ্রদেশ। এখানেই তালিকার শেষ নয়। ভারতের রাজ্যগুলোর নাম পরিবর্তনের নজির আরও আছে। এক সময়ের মাদ্রাজ স্টেট নাম পাল্টে বর্তমানে হয়েছে তামিলনাড়ু, উত্তরাঞ্চল হয়েছে উত্তরাখণ্ড এবং উড়িষ্যা পাল্টে ওড়িশা। এছাড়াও অন্তত ২৫টি ভারতীয় শহরের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। যার মধ্যে বোম্বে হয়েছে মুম্বাই, মাদ্রাজ হয়েছে চেন্নাই, কলিকাতা হয়েছে কলকাতা ইত্যাদি। অর্থাৎ নাম পাল্টালেই ইতিহাস পাল্টায় না। ইতিহাস তার নিজের জায়গায় থাকে।
 
নাম পাল্টানোয় কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ইংরেজি বর্ণমালা সূচি অনুযায়ী আগে বলার সুবিধা পাবে রাজ্যের মমতা সরকার?
শুধুমাত্র আগে বলার সুযোগ পাওয়া বা ইংরেজি বর্ণমালা দিয়ে সূচি তৈরি হওয়ার বিষয়টিকে নাম পরিবর্তনের কারণ হিসেবে মানতে চাইছেন না বিরোধীরা। তাদের মতে পরবর্তী সময়ে যদি ‘হিন্দি’ বর্ণমালায় সূচি তৈরি শুরু হয়, তখন কি আগে সুযোগ পাওয়ার জন্য আবার নাম পরিবর্তন করা হবে রাজ্যের? তর্কের খাতিরে ধরে নেওয়া গেলো ইংরেজি বর্ণমালায় বাংলা আগে থাকলে কেন্দ্রীয় সরকার শুনবে ঠিকই আর আগে শুনলেই কি রাজ্যের দ্রুত উন্নতি হবে? তাহলে উদাহরণ দিয়ে বলা যেতেই পারে আসাম বা বিহারের থেকে শতগুণে উন্নত মহারাষ্ট্র, পুনে বা তামিলনাড়ু। শুধুমাত্র আগে বলতে পারলেই রাজ্যের উন্নয়ন হবে এটা মেনে নেওয়া যায় না। বক্তাদের বক্তব্যের প্রাসঙ্গিকতাই বিবেচ্য।

রাজ্য নামের প্রস্তাব করলেই পাস হবে কি?
রাজ্যের নাম পরিবর্তনের শেষ সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্রীয় সরকার। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রস্তাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারতের রাষ্ট্রপতির কাছে যাবে। এরপর রাষ্ট্রপতি মনে করলে সংবিধান সংশোধন বিল আনার প্রক্রিয়া শুরু করার ক্ষেত্রে সম্মতি জানাতে পারেন। নামের প্রক্রিয়া এখানেই শেষ নয়। ভারতের লোকসভা ও রাজ্যসভায় দুই তৃতীয়াংশ সমর্থন নিয়ে প্রস্তাব পাস করাতে হবে। তারপরই নাম পরিবর্তন সম্ভব। এখন অপেক্ষা করতে হবে। ভারত সরকার নতুন নামে তাদের সহমতের শিলমোহর দেয় কি-না? তবেই ‘পশ্চিমবাংলা’ হবে বাংলা। তবে এবারে পরিবর্তন হলে বাংলা-হিন্দি-ইংরেজিসহ সব ভাষাতেই সরকারি খাতায় নাম হবে ‘বাংলা’। বেঙ্গল-বাঙ্গাল নয়।

বাংলাদেশ সময়: ১২২৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০১৮
ভিএস/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।