ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ভারত

‘বাঙালি খেদানোর নাগরিক তালিকা’ নিয়ে ক্ষোভ ঝাড়লেন মমতা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৯ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০১৮
‘বাঙালি খেদানোর নাগরিক তালিকা’ নিয়ে ক্ষোভ ঝাড়লেন মমতা সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন মমতা বন্দোপাধ্যায়। ছবি: বাংলানিউজ

বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব সীমান্তবর্তী ভারতের আসামে রাজ্য সরকারের প্রকাশিত ‘জাতীয় নাগরিক পঞ্জীকরণ’ বা ‘নাগরিক’ তালিকার চূড়ান্ত খসড়া নিয়ে তীব্র ক্ষোভ ঝেড়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। তিনি এটাকে ‘বাঙালি খেদাও’ পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছেন।

সোমবার (৩০ জুলাই) রাজ্য সচিবালয় ‘নবান্নে’ মুখ্যমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন। এর আগে আসাম সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ বিতর্কিত তালিকাটির চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশ করে

‘প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে আসামে ঢোকা অবৈধ অভিবাসীদের শনাক্ত করতে’ তৈরি তালিকায় রাজ্যের মোট ৩ কোটি ২৯ লাখ বাসিন্দার মধ্যে নাম আসে ২ কোটি ৯০ লাখ মানুষের। বাদ পড়ে যায় ৪০ লাখ বাসিন্দার নাম, যাদের বেশিরভাগই ভাষিক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু।

এই তালিকা তৈরির আলোচনার শুরু থেকেই সরব ‘বাংলার নেত্রী’ মমতা। সেই ধারাবাহিকতায় চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশে মমতা বলেন, ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। এটা দুর্ভাগ্যজনক পদক্ষেপ। আমরা এর প্রতিবাদ করছি, এই সিদ্ধান্ত মানছি না। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলবো বিষয়টি দেখার জন্য। যারা এ দেশের নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও শরণার্থী হয়ে গেলো তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। এটা পুনর্বিবেচনা করা উচিত।

আগামী ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে এই বাসিন্দাদের নাগরিক তালিকা থেকে বাদ দিয়ে তাদের ভোটবঞ্চিত করার পেছনে আসামের বিজেপি সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে বলে মনে করে তৃণমূল কংগ্রেস।

সেই প্রসঙ্গটি টেনে দলের প্রধান মমতা বলেন, আসাম নিয়ে রাজনীতি করবেন না। ভোটের কথা না ভেবে মানবিকতার কথা ভাবুন। কেন্দ্র মানুষের ভালো চাইলে এটা হতো না। আমি দিল্লি যাচ্ছি, (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে কথা বলার জন্য সময় চাইবো। কেন্দ্র এটা কোনোভাবে করতে পারে না।

তালিকাটিকে ‘বাঙালি খেদানোর’ পদক্ষেপ আখ্যা দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এটা বাঙালি খেদানোর জন্য হয়েছে। আসামের পাশের আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার (পশ্চিমবঙ্গের দুই জেলা) সীমান্তে আমাদের সচেতন থাকতে হবে। বাংলাদেশ যদি ওদের নিতে না চায়, তাহলে তারা কোথায় যাবে? আমি সরাসরি বলেছি- এই নিয়ে অন্য দলের সঙ্গে কথা বলার জন্য।  

সংকট নিরসনে পশ্চিমবঙ্গ সরকার আসামে প্রতিনিধি দল পাঠাবে জানিয়ে মমতা বলেন, দরকার হলে আমি যাবো আসাম। সমস্ত নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও এই ৪০ লাখ মানুষ যাবে কোথায়, এটা কেন্দ্রের ভাবা উচিত।  

আসামে সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আসামের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। তাদের (বাদ পড়া নাগরিক) পাশে দাঁড়াতে হবে। সততা থাকলে কেন তারা ইন্টারনেট বন্ধ করে দেবে? টিভি সংযোগ কেটে দেবে? সেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানো হচ্ছে। এর মানে কী? আমরা পুরো বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন।  

তালিকা তৈরির প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে মমতা বলেন, এটা সরকারের গেম প্ল্যান, এটা মানুষকে আঘাত করবে। এই তালিকা করার সময় আমার সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেনি, এটা খুব দুর্ভাগ্যের। আমাদের মুখ্যসচিব-ডিজির সঙ্গেও কথা বলেনি। আসামের মানুষের জন্য বিল আনা উচিত (কেন্দ্রীয়) সংসদে। দিল্লিতে এখন অধিবেশন চলছে। বিল নিয়ে এসে তাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত (কেন্দ্রীয়) সরকারের।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৪ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০১৮
ভিএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।