নরেন্দ্রনাথ মিত্রের ছোটগল্প, ‘তখন ছিল মাঘ মাস, তখনো এক পল্লীর গাছি মোতালেফ রসের কলসি নামিয়ে আনছে খেজুর গাছ ছুলে। ’ রসের নায়ক মোতালেফের বাজারে যথেষ্ট কদর ছিল গুড় ব্যবসায়ী হিসেবে।
এখন শপিংমল আর ব্র্যান্ডের দাপট। যুগের হাওয়া বুঝেই রাজ্য খাদি ও গ্রামোদ্যোগ দপ্তর পশ্চিমা কায়দায় দেশীয় গুড় প্রজন্মের সামনে হাজির করেছে। তাই টিউবে ভরা নলেন গুড় দেদার বিক্রি হচ্ছে রাজ্যের খাদি ও গ্রামীণ শিল্প মেলাগুলোয়। অনেকেই পকেটে পুড়ছে টিউবের নলেন গুড়। প্রতিটি নলেন গুড়ের টিউবের ওজন দেড়শ’ গ্রাম, দাম ৮০ রুপি। ভ্যলিডিটি অর্থাৎ গুড়ের আয়ু তিনমাস।
ইনফরমেশন টেকনোলজিতে কর্মরত বিক্রম দাস এক প্রকার ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, মাও নেই, শাশুড়িমাও নেই। তাই আর বাসায় পিঠাও হয় না। পকেটে নলেন গুড় রাখা মানে একটু স্মৃতি রোমন্থন। কলেজ পড়ুয়া অরিজিতের মতে পিঠাপুলিতে তার খুব একটা মন টানে না। তবে তরল এ গুড়ের স্বাদ মিস করা যায় না, তাই পকেটে রাখা। যখন ইচ্ছে খাওয়া যায়।
পশ্চিমবঙ্গের নিরিখে নদীয়া জেলার নলেন গুড়ের যথেষ্ট খ্যাতি রয়েছে। তবে সবচেয়ে সেরা এ তরল গুড় পাওয়া যায় নদিয়ার মাজদিয়া এলাকার প্রত্যন্ত গ্রামে। ভৌগোলিক কারণে মাজদিয়ায় প্রচুর খেজুর গাছ রয়েছে।
একসময় নৌকা করে চূর্ণি নদী দিয়ে কলকাতায় আসতো গুড়। সেখান থেকে কলকাতার মিষ্টির দোকানসহ ছড়িয়ে পড়তো গৃহস্থ বাড়িতে। তাই দিয়েই তৈরি হতো পিঠাপুলি। এখনো মাজদিয়ার নলেন গুড় আসে কলকাতায়। তবে নদী নয়, হাড়ি হাড়ি গুড় আসে লোকাল ট্রেনের মাধ্যমে, নামে শিয়লদহ স্টেশনে। বছর দুয়েক হলো টিউববন্দি করা হয়েছে নলেন গুড়। কলকাতার পাশাপাশি যাচ্ছে বিদেশেও।
রাজ্য খাদি ও গ্রামোদ্যোগ দপ্তরের চেয়ারম্যান গৌরীশঙ্কর দত্ত বলেন, মাজদিয়ায় একটি কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে। সেখানে নলেন গুড় টিউবে বন্দি হচ্ছে। ওই টিউববন্দি গুড় ছড়িয়ে পড়ছে চারিদিকে। কারণ নদীয়ার নলেন গুড়ের চাহিদা রয়েছে সর্বত্র।
আড়াই থেকে তিন মাস এ গুড় মেলে বলে জানান তিনি। বাজারে যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে টিউবের নলেন গুড়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৯
ভিএস/এফএম