ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ভারত

পর্যটক কমছে কাশ্মীরে, ভাইরাসে সজাগ থাকার পরামর্শ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৬ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০২০
পর্যটক কমছে কাশ্মীরে, ভাইরাসে সজাগ থাকার পরামর্শ

কলকাতা: সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিল হওয়া নিয়ে উত্তপ্ত কাশ্মীর। এরই মাঝে বিদায় নিয়েছে শীত। এখন বসন্ত, প্রকৃতির সঙ্গে নিজেকে সাজিয়ে নিচ্ছে জম্মু ও কাশ্মীর। 

বছরের এ সময়টা দেশ-বিদেশ থেকে হাজার হাজার পর্যটক হাজির হন ভূস্বর্গে। এটাই কাশ্মীরবাসীর ব্যবসার মৌসুম।

পাশাপাশি এ সময়টায় মুখে চওড়া হাসি ফুটে পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ট্রাভেল এজেন্টদের।

কিন্তু, সম্প্রতি ভারতে করোনা ভাইরাসের আগ্রাসন কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে সবার। কারণ প্রাণঘাতী এই ভাইরাস ঠাণ্ডায় বহাল তবিয়তে নিজের আধিপত্য বিস্তার করতে পারে। আর সে কারণে পর্যটকদের মধ্যে কাশ্মীর ভ্রমণে বিশেষ আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না।

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পর্যটন বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, প্রতিবছর এই সময়টায় চীন, থাইল্যান্ড, কোরিয়া, হংকং, আমেরিকা ও ইন্দোনেশিয়া থেকে প্রচুর পর্যটক আসেন জম্মু ও কাশ্মীরে। কিন্তু করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় পর্যটকের সংখ্যা কমছে।

গতবছর শুধুমাত্র মার্চে থ্যাইল্যান্ড থেকে ৪ হাজার ৫৭২ জন বেড়াতে এসেছিলেন জম্মু ও কাশ্মীরে। পাশাপাশি চীন, আমেরিকা ও ইন্দোনেশিয়া যথাক্রমে ৫৪৩, ৭৩১ ও ২ হাজার ৯১৮ জন পর্যটকে ভ্রমণ করেন ভূস্বর্গ। কিন্তু করোনা আতঙ্ক ছড়াতেই একধাক্কায় কাশ্মীর পর্যটক শূন্য বললেই চলে।

রাজ্যের পর্যটন দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বরে ৬ হাজার ৯৫৪ জন বিদেশি পর্যটক জম্মু ও কাশ্মীরে এসেছিলেন। কিন্তু জানুয়ারিতেই সেই সংখ্যা কমে হয়েছে ৩ হাজার ৭৯২। করোনা আক্রান্ত একাধিক দেশ থেকে আসা পর্যটকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে।  

গতমাস থেকে চীন থেকে একজনও আসেননি। এরপর ইরান ও থাইল্যান্ডের ক্ষেত্রেও সংখ্যা প্রায় একই অবস্থায়। ফলে মৌসুমের শুরুতেই ব্যবসায় ধাক্কা লেগে রাতের ঘুম ছুটেছে কলকাতার ট্রাভেল এজেন্টদের।

এ প্রসঙ্গে ট্রাভেল এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব কাশ্মীরের সেক্রেটারি ফারুক কুঠো বলেন, মানুষের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ভয় বাসা বেঁধেছে। সেই কারণে তারা কাশ্মীর বেড়ানোর সাহস পাচ্ছেন না। শুধু বিদেশি পর্যটক না, দেশি পর্যটকও ভয় পাচ্ছেন কাশ্মীরে যেতে। যদি পর্যটকের সংখ্যা এমন হারে কমতে থাকে, তাহলে কাশ্মীরের পর্যটন একবারে শেষ হয়ে যাবে।  

তবে ফারুক আশাবাদী এপ্রিল-মে মাস নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে জানান তিনি।  

এদিকে করোনা আক্রান্ত সন্দেহে দুইব্যক্তিকে বৃহস্পতিবার (০৫ মার্চ) জম্মু ও কাশ্মীরের সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ওই দু’জনের একজন ইতালি এবং অন্যজন দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক। তাদের দু’জনের রক্তের নমুনা পুনের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজিতে পাঠানো হয়েছে।

এছাড়া বিশ্বজুড়ে বাড়তে করোনা ভাইরাস, ভারতেও থাবা বসানো শুরু করেছে। এখনো পর্যন্ত ৩০ জনের করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের খবর এসেছে। এমন অবস্থায় বেলজিয়াম সফর বাতিল করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।  

করোনার কারণে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, এবার হোলির অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন না তিনি। আসন্ন রঙের উৎসবে অংশ নেবেন না রাষ্ট্রপতি ভবনেও।

এছাড়া সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে হোলিতে ভিড় এড়িয়ে চলার পরামর্শও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে দিল্লিতে। ফলে সব স্কুল ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ রাখার কথা ঘোষণা করেছে কেজরিওয়াল সরকার।

দিল্লির উপ-মুখ্যমন্ত্রী মণিশ সিশোদিয়া বলেন, সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা ঠেকাতেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবেই এই সিদ্ধান্ত। পাশাপাশি কাল থেকে রাষ্ট্রপতি ভবনের মুঘল গার্ডেনও বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন বলেন, করোনা ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার। ভারতে সব মিলিয়ে মোট ২৮ হাজার ৫২৯ জনকে করোনার কারণে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। গণহারে সংক্রমণ এড়াতে দেশের ৩১টি রাজ্যকেই সজাগ থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২১ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০২০
বিএস/এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।