কলকাতা: কালীঘাটে নিজের বাসভবন লাগোয়া অফিস থেকে শুক্রবার (৫ মার্চ) দলের প্রার্থী ঘোষণা করলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। প্রার্থী হলেন অনেকে।
কিন্তু দলের খারাপ সময়ে যারা সুপ্রিমোর সঙ্গে ছিলেন তাদের অনেকে একুশের নির্বাচনে দলের টিকিটই পেলেন না। প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর তৃণমূল অন্দরে এখন বিদ্রোহের সুর।
প্রার্থী ঘোষণার পর টিকিট না পেয়ে প্রকাশ্যেই দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিলেন সাবেক বিধায়ক আরাবুল ইসলাম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক লেখেন, ‘দলের আজকে আমার প্রয়োজন ফুরালো। ’
এরপরই উত্তেজনা ছড়ায় দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার ভাঙড়ে। জায়গায় জায়গায় গাড়ির টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করে আরাবুল সমর্থকেরা। কেন্দ্রীয় বাহিনীর হস্তক্ষেপে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে অবরোধ ওঠে।
সংবাদ মাধ্যমে কান্নাভেজা গলায় আরাবুল বলেন, ‘কঠিন সময়ে দলের হয়ে কাজ করেছি। দিদি যখন যা দায়িত্ব দিয়েছেন তাই পালন করেছি। কিন্তু এবার টিকিট পেলাম না। হয়তো আমার প্রয়োজন ফুরিয়েছে। ’
প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালে যখন রাজ্যজুড়ে বামদের আধিপত্য তুঙ্গে, তখন একক ক্ষমতায় ভাঙড়ে তৃণমূল কংগ্রেসের পতাকা উড়িয়েছিলেন আরাবুল। এবার সেই আরাবুলকেই প্রার্থী না করায় উত্তপ্ত এলাকা।
ওই জেলার আর এক কেন্দ্র সাতগাছিয়া। যেখান থেকে চারবার জিতেছেন সোনালি গুহ। মমতার ছায়াসঙ্গী হিসাবেই পরিচিত তিনি। কিন্তু এবার মমতার প্রার্থী তালিকায় স্থান না পাওয়ায় কাঁদতে কাঁদতে নেত্রীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ালেন সোনালি।
তিনি বলেন, ‘বহু আন্দোলনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লড়াইয়ের পাশে থেকেছি। এবার আর আমায় টিকিট দিল না। নারী দিবসের আগে আমায় যোগ্য সম্মান দিলেন নেত্রী। ’
নলহাদিটির বিধায়ক মইনুদ্দিন শামস। তিনিও এবার মমতার প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘কেন বহিরাগত রাজেন্দ্রপ্রসাদ সিংকে প্রার্থী করা হল?’ টিকিট না পেয়ে অন্য দলের হয়ে লড়াইয়ের ময়দানে থাকবেন বলেও হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি।
হুগলী জেলার সিঙ্গুর। যেখান থেকে মমতার উত্থান। সেখানে চারবারের বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ। এবার দলের টিকিট পাননি। বদলে ওই কেন্দ্রের প্রার্থী করা হয়েছে রবীন্দ্রনাথ বিরোধী বেচারাম মান্নাকে। তালিকা ঘোষণা হওয়া মাত্রই ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘নেত্রী বললেও বেচারামের হয় ভোটের প্রচার করবেন না তিনি। ’
বসিরহাটের তৃণমূল বিধায়ক সাবেক ভারতীয় ফুটবলার দিপেন্দু বিশ্বাস। তরুণ এবং এলাকায় তার পরিচিতি ভালো। দিদিরও ঘনিষ্ঠ ছিলেন। আচমকাই প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ তার নাম। সুপ্রিমোর কেন এই পদক্ষেপ, তা ভেবে পাচ্ছেন না দিপেন্দু নিজেই। তার কথায়, ‘আমি হার্ডওয়ার্ক করেছি। উন্নয়নের প্রচুর কাজ করেছি। কিন্তু গোল করেও খেলার সুযোগ পেলাম না। আমি আশা করেছিলাম। কিন্তু হল না। তবে তালিকা প্রকাশের আগে দল এই সিদ্ধান্ত জানালে ভাল লাগতো। এতটা খারাপ লাগত না। ’
কলকাতাবাসী অধ্যাপক ওমপ্রকাশ মিশ্র। কংগ্রেস ত্যাগ করে তৃণমুলে গেছেন। শিলিগুড়ি থেকে তৃণমূলের প্রার্থী এবার। কিন্তু তাকে ঘিরে অসন্তোষ দানা বেধেছে। শিলিগুড়ির সাবেক এক তৃণমূল কাউন্সিলরের দাবি, বহিরাগত প্রার্থীকে নিয়ে ভোটে জেতা অসম্ভব।
অপরদিকে বিজেপি শুক্রবারও প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করতে পারেনি। দলের তরফে জানা গেছে, ৭ মার্চ কলকাতায় মোদীর সভার পরেই প্রার্থী তালিকা প্রকাশ পাবে। পাশাপাশি বাম-কংগ্রেস জোটও কয়েকটি আসনে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করলেও মমতার কেন্দ্র নন্দীগ্রাম, কে হবে জোট প্রার্থী, তা জানা যায়নি। জোটের তরফে বলা হয়েছে, নন্দীগ্রাম এখন হেভিওয়েট কেন্দ্র। সব বিবেচনা করে ঠিক করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২২৩৪ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০২১
ভিএস/ইউবি