কলকাতা: এবারের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় দফার ভোট সবচেয়ে হাইভোল্টেজ। রাজ্যসহ গোটা ভারতের নজর থাকবে পূর্ব মেদিনিপুরের নন্দীগ্রামে।
এই আসন থেকেই খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রার্থী হয়েছেন। এবারই প্রথম কলকাতার বাইরে অন্য কোনো জেলা থেকে প্রার্থী হয়েছেন তিনি। অপরদিকে মমতার বিরুদ্ধে বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন তারই এক সময়ের অনুগামী শুভেন্দু অধিকারী। আবার এই দুই হেভিওয়েটের বিরুদ্ধে বাম-কংগ্রেস-আব্বাস জোট অর্থাৎ সংযুক্ত মোর্চা থেকে সিপিআইএম প্রার্থী মিনাক্ষী মুখার্জি।
নন্দীগ্রামে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য মোতায়েন করা হয়েছে দুই হাজার দুইশো আধা সামরিক সেনা সদস্য। এখানকার ৩৫৫টি বুথকেই স্পর্শকাতর বলে চিহ্নিত করেছে কমিশন। নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে মমতা ও শুভেন্দুর। এ দুই প্রার্থী যখন বুথে বুথে ঘুরবেন তখন তারা যেন যথেষ্ট নিরাপত্তা পান সেদিকে নজর দিয়েছে কমিশন। ইতোমধ্যে ভোর থেকেই নন্দীগ্রামে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। বাইরের গাড়িগুলোতে চলছে নাকা চেকিং এবং ব্যাগ তল্লাশি, যা করছেন স্বয়ং নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা।
শুধু নন্দীগ্রাম নয়, দ্বিতীয় দফার ৩০ আসনকেই বাড়তি গুরুত্ব দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কারণ গত নির্বাচনগুলোতে দেখা গেছে এইসব অঞ্চল থেকে অশান্তির সূত্রপাত ঘটে। তবে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে শেষরক্ষা হবে কি তৃণমূলের? নাকি পতন ঘটবে বিজেপির? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে রাজ্যবাসী। বিজেপি-তৃণমূল দুই দলের দাবি ২৯৪ আসনের মধ্যে ২০০ আসন নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে সরকার গঠন করবে তারা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে গত কয়েক বছরের মধ্যে রাজ্যে খুব তাড়াতাড়ি উত্থান ঘটেছে বিজেপির। ২০১১ সালে মমতার সরকার রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিরোধী দল বলতে ছিল সিপিএম এবং কংগ্রেস। তবে ২০১৪ সালে কেন্দ্রে মোদী সরকার গঠন হওয়ার পর ভারতের অন্যান্য রাজ্যে বিজেপি ঝড় বইতে শুরু করে। সেই ঝড় আছড়ে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গেও।
তবে রাজ্যে বিজেপিপন্থির সংখ্যা বাড়লেও ২০১৬ সালে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে সেভাবে দাপট দেখাতে পারেনি মোদী বাহিনী। সে বার ২৯৪টি আসনের মধ্যে ২১১টিতে জয়ী হয় মমতার দল। জোট বাঁধার কারণে সেবার কংগ্রেস ৪৪টি এবং সিপিএম ৩২টি আসন পেয়েছিল। মাত্র ৩টি আসন পেয়েছিল বিজেপি।
কিন্তু অংকটা ঘুরতে থাকে ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচন থেকে। রাজ্যের ৪২টা আসনের মধ্যে বিজেপি পায় ১৮টি আসন, যা ২৯৪টি বিধানসভা ভোটের আসন সংখ্যার নিরিখে বিরোধী দলের ভূমিকায় উঠে আসে বিজেপি। সে বার ১৬৪টি আসনে এগিয়ে ছিল তৃণমূল। বিজেপির দখলে ছিল ১২১টি আসন। কংগ্রেসের ছিল ৯টি আসন। সেবার বামেরা খাতাই খুলতে পারেনি। এর পরেও জেলাভিত্তিক প্রতিটা আসনে বিজেপির মার্জিন সংখ্যা ছিল ভালোই।
তবে এবারের নির্বাচনে রাজ্যে অনেকগুলি ফ্যাক্টর কাজ করছে। যেমন বাম-কংগ্রেস আবার জোট বেঁধেছে। সংখ্যালঘু ভোট কাটার জন্য এই জোটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পীরজাদা আব্দাস সিদ্দিকির দল ‘ইন্ডিয়ান স্যেকুলার ফ্রন্ট’। অপরদিকে তারুণ্যের ওপর ভরসা রেখেছে বামেরা। গোটা তরুণ ব্রিগেডকে পুনরায় উজ্জবীত করতে তারা সক্ষম হয়েছে। ফলে সংখ্যালঘু ও তরুণ ভোটার, বিধানসভা নির্বাচনে এবার একটা বড় ফ্যাক্টর হতে চলেছে।
অন্যদিকে বিজেপি সাম্যের কথা বললেও তাদের ভরসা রাজ্যের ৭২ শতাংশ হিন্দু ভোটার। এই ভোট ব্যাংক তাদের দিকে মুখি ফিরে চাইলে চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়াবে মমতার। তবে গত দশ বছরে মমতার হাতে অনেকগুলো ‘ইস্যু’ অস্ত্র হয়ে আছে। সেগুলো কীভাবে ব্যবহার করবে সেটাই দেখার। তবে বলাই বাহুল্য, মমতার অন্যান্য ইস্যুর মধ্যে আবেগ এবং সেন্টিমেন্ট সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজ্যবাসীর কাছে।
তবে এরসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের চ্যালেঞ্জ সুষ্ঠু নির্বাচন করে দেখানোর, যা বিগত নির্বাচনগুলোয় সেভাবে দেখেনি রাজ্যবাসী। এবারে প্রথম দফায় সুষ্ঠু নির্বাচন করে দেখিয়েছে কমিশন। আর পরিষ্কার ভোট হলে কিছুটা হলেও চাপে থাকতে পারে মমতা বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেজ্ঞরা। তবে বিশেজ্ঞরা এও মনে করছেন, এবারের নির্বাচন কোনো দলের পক্ষেই সহজ হবে না। ফলে জয় যে কোন দলের কাছে সহজে ধরা দেবে না, তা ভালো করেই বুঝতে পারেছ তৃণমূল-বিজেপি-সংযুক্ত মোর্চা।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫২ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০২১
ভিএস/এমজেএফ