কলকাতা: সমগ্র ভারতের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গেও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে করোনা। শনাক্তের সংখ্যা একদিনে রাজ্যে ১১ হাজার ৯৪৮ জন।
বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) মৃত্যুতেও নতুন রেকর্ড করেছে রাজ্যে। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত ৫৬ জন। ২৬ এবং ২৯ এপ্রিল রাজ্যে বাকী আছে আরও দুই দফার ভোট।
এমন পরিস্থিতিতেও নির্বাচন কমিশন নির্বাক থাকার কারণে এদিন কলকাতা হাইকোর্টের তীব্র ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয় কমিশনকে। কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিবিএন রাধাকৃষ্ণনের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, ‘করোনা মহামারির মধ্যে এভাবে শুধু সার্কুলার দিয়ে নিজের দায় এড়াতে পারে না নির্বাচন কমিশন। কমিশনের হাতে চূড়ান্ত ক্ষমতা রয়েছে। যা প্রয়োগ করা হচ্ছে না। সেই ক্ষমতার প্রয়োগের প্রয়োজন। কমিশনের কর্তা এবং কুইক রেসপন্স টিমকে (কিউআরটি) কাজে লাগানো হচ্ছে না’।
এরপরই বৃহস্পতিবার রাতে বড় সিদ্ধান্ত ঘোষণা করল নির্বাচন কমিশন। কমিশনের পক্ষ জানানো হয়েছে, বাকি থাকা দুই দফার ভোটের আগে কোনো জনসভা, রোড-শো বা মিছিল করতে পারবে না রাজনৈতিক দলগুলো। আগে থেকে যেসব জনসভা এবং রোড শোয়ের অনুমতি নেওয়া ছিল, সেগুলো সব বাতিল করা হলো।
ক্রোধে ফুঁসতে করেছে রাজ্যবাসীও। টালিগঞ্জের অশোক দাস বলেন, অনেক প্রচার, জনসভা হয়েছে, আরও কী বলার বাকি আছে। এবার মহামারির কথা ভেবে ক্ষান্ত হোক রাজনৈতিক দলগুলো।
বেহালারর বাসিন্দা সন্দীপ সাহার মতে, আর কত প্রাণ গেলে এনারা থামবেন। একটা রাজনৈতিক দলগুলো করোনাবিধি কথা মানছেন না। কার প্রচারে কত লোক টানবে সেই শক্তি পরীক্ষা চলছে।
যাদবপুরের বাসিন্দা অনামিকা জানান, প্রচারে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভরিয়ে তুলছে এনারা। কিন্তু রাজ্যে করোনা যে মহামারির আকার ধারণ করছে কীভাবে সামাল দেবে, সে নিয়ে একটা কথা নেই।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক মেডিক্যাল কলেজের এক ডাক্তার বলেন, নেতা-মন্ত্রীরাই রাজ্যের অবিভাবক। একজন প্রার্থীর ব্যানারে করোনা বিধি মানার কোনো কথাই নেই।
এদিন সন্ধ্যায় শুক্রবার বঙ্গসফর বাতিল করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এরপরই মুখ্যমন্ত্রী টুইট করে জানান, ২৩ এপ্রিল থেকে সব নির্বাচনী জনসভা, রাজনৈতিক কর্মসূচি তিনি বাতিল করছেন।
এরই মধ্যে গোটা ভারতে করোনা প্রতিষেধক এবং অক্সিজেনের অভাব দেখা দিয়েছে। কোনো হাসপাতালে চার ঘণ্টা তো কোনো হাসপাতালে দু’ঘণ্টার মতো অক্সিজেন মজুত আছে।
অক্সিজেনের অভাবে ভারতের একাধিক রাজ্যে করোনা রোগীর মৃত্যুর খবর সামনে আসছে। অতটা আশঙ্কাজনক না হলেও পশ্চিমবঙ্গেও পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। হাসপাতালগুলোয় বেড পাওয়া যাচ্ছে না। ধীরে ধীরে অক্সিজেনের অভাব দেখা দিচ্ছে।
তথ্য বলছে, বিদেশে আগে যা অক্সিজেন যেতো তার থেকে দ্বিগুণ পরিমাণে যাচ্ছে। এ বছর জানুয়ারি থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত বিদেশে অক্সিজেন গেছে ৯ হাজার মেট্রিক টন। এ নিয়েও কেন্দ্রকে সুপ্রিম কোর্টের তীব্র ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয়েছে।
ক্ষিপ্ত হয়ে ভারতের প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদে, বিচারপতি এলএন রাও এবং এসআর ভাটের সমন্বয়ে গঠিত একটি বেঞ্চ জানান, ‘অতিদ্রুত কেন্দ্র সরকার বিষয়টা হস্তক্ষেপ করুক। চুরি করুক, ধার করুক, ভিক্ষা করুক, যাই করুক একজনেরও যেনো অক্সিজেনের অভাবে প্রাণ না যায়’।
এমন পরিস্থিতিকে মোদী সরকার এদিন ফের উচ্চ পর্য়ায়েরে বৈঠক ডাকে। পরিবর্তন করা হয় আন্তঃরাজ্য নিয়ম। সেখানে ঠিক হয় পশ্চিমবঙ্গসহ যেকটি রাজ্য তরল অক্সিজেন তৈরি করে, তারা গোটা ভারতে সরকারি অনুমতি ছাড়া অক্সিজেন সাপ্লাই করুক। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশানকে নজর রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অক্সিজেন ব্যবহার হয় স্টিল, লোহার মতো ইন্ডাস্ট্রিগুলোকে সহযোগিতা করতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০২১
ওএইচ/