কলকাতা: ভারতের পাঁচ রাজ্যে বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) বিধানসভা নির্বাচনের গণনা শেষ হয়েছে। ফলাফল- উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, গোয়া এবং মনিপুর নিজেদের দখলে রাখল বিজেপি।
তবে এই নির্বাচনে ছিল পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসও। চার রাজ্যই কেউই পশ্চিমবঙ্গের শাসক দলের সাথে হাত মেলায়নি। একমাত্র সমর্থন পায় গোয়াতে। সেখানে একসময়ের বিজেপি শরিক মহারাষ্ট্র গোমন্তক পার্টির (এমজিপি) পার্টির সাথে জোট বাঁধে মমতার দল।
এরপরই মমতার দল ঝাঁপিয়ে পড়েছিল গোয়া রাজ্যটি দিকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দায়িত্ব দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাঁধে। এরপরই গোয়ায় ভোটের প্রচারের জন্য বারবার কলকাতা থেকে পানজিমে ছুটে গিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। ছোট্ট রাজ্যের লড়াইতে প্রচার করেছিলেন মমতাও। গোয়ায় তৃণমূলের প্রচারের নামকরণও করেছিলেন নেত্রী নিজেই। গোয়ায় তৃণমূলের প্রচারের স্লোগান ছিল ‘গোয়েঞ্চি নবি সকাল’ অর্থাৎ ‘গোয়ার নতুন প্রভাত’।
৩৬ বছর বয়সী মমতার ভাতিজা অভিষেকের রাজনীতিতে প্রবেশ খুব বেশিদিনের নয়। মমতার হাত ধরে ২০১২ সালে প্রথম রাজনীতিতে আসা এবং সে বাড়ই তৃণমূলের সর্বভারতীয় যুব সভাপতি হন তিনি। ২০১৪ সালে প্রথম জয়ী হন সংসদ সদস্য হিসেবে। এরপর অবশ্য তাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি।
২০১৯ সালে তৃণমূলের খারাপ সময় আসে। ওই সালের লোকসভা ভোটে পশ্চিমবঙ্গের ৪২ আসনের মধ্যে ১৮ আসন পায় বিজেপি। এরপর একে একে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদানের হিড়িক পড়ে। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছায় আগামীতে মমতার দল থাকবে কিনা তাই প্রশ্ন চিহ্ন এসে দাঁড়ায়। সেই সময় মমতার একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে অভিষেক হাল ধরেন দলের। তার তরুণ অভিজ্ঞতায় ২০২১ সালের বাংলার বিধানসভা ভোটে তৃণমূল বিপুল জনাদেশ পায়। তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এরপরই দলনেত্রী অভিষেকের দায়িত্ব বদল করে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক পদে নিযুক্ত করেন। সেই সময় এনার্জেটিক অভিষেক ঘোষণা দেন, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে প্রবেশ করবে তার দল। পাশাপাশি এক অলিখিত বার্তা ছড়িয়ে পড়ে যে, মমতাই ভারতের ভাবী প্রধানমন্ত্রী। সেইমতো ব্লু প্রিন্ট তৈরি করতে থাকে অভিষেক এবং তার দল।
সেই পরিকল্পনার প্রথম ধাপে তৃণমূলের জন্য সহজ এবং প্রান্তিক রাজ্য বেছে নিয়েছিলেন অভিষেক। শর্ত দু’টি। এক, বেছে নেওয়া রাজ্যগুলোতে ক্ষমতায় থাকতে হবে বিজেপিকে। দুই, ২০২৪ সালের লোকসভা ভোট মাথায় রেখে আকারে ছোট রাজ্যকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। যাতে অল্প সময়ে সাংগঠনিক কাজ সামলাতে অসুবিধা না হয়। সেই হিসেবেই দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়ের সঙ্গে আরবসাগরের তীরের গোয়া রাজ্যটিকেও বেছে নেন অভিষেক। পাশপাশি ২০২৪ সালকে পাখির চোখ করে এবং মোদীবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে এক ছাতায় আনতে ঘনঘন ভারত ও দিল্লি সফর শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভোট ছিল গোয়ায়। তবে তার কদিন আগে অভিষেকের সঙ্গে দ্বন্দ্ব শুরু হয় দলের বলিষ্ঠ নেতাদের। অভিষেক নাকি তার ঘনিষ্ঠদের বলেছিলেন, গোয়ার ভোট শেষ হলেই দলের দায়িত্ব থেকে নিস্তার নেবেন। যদিও তিনি প্রকাশ্যে এ নিয়ে কোনও কথা বলেননি। পদও ছাড়েননি। জল্পনা যাই হোক, অভিষেক গোয়ায় তার দায়িত্ব পালন করে গিয়েছেন। বারবার গোয়া ছুটে গিয়েছেন। গোয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত তৃণমূলের নেতাদের নিয়ে বৈঠকও করেছেন। জোট শরিকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগও রেখেছিলেন। নিজে সভা করেছেন। এমনকি, মন্দিরে মন্দিরে গিয়ে পুজোও করেছেন।
এ পর্যন্ত সমীকরণটা ঠিকঠাক চলছিল। তবে পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের ফল বের হতেই দেখা গেল গোয়ার এমজিপি ও তৃণমূল জোট, প্রথমে চার আসনে এগিয়ে থাকলেও ফলাফল তৃণমূল শূন্য এবং এমজিপি পায় দুই আসন। এই অবদিও পশ্চিমবঙ্গের শাসক দলের কাছে আশ্বাস ছিল তারা না পারলেও তাদের জোট শরিক তো পেয়েছে। কিন্তু রাত গড়াতেই গেম চেঞ্জ হয়ে যায়। এমজিপি দুই আসন নিয়ে ভিড়ে যায় বিজেপির সাথে। ফলে গোয়ায় তৃণমূলের কোনো অস্তিত্ব থাকলো না।
গতরাত পর্যন্ত তৃণমূলের এ নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া না গেলেও ১১ মার্চ গোয়া থেকে ফিরে কলকাতার বিমানবন্দরে অভিষেক জানিয়েছেন, বিধানসভা নির্বাচনে গোয়ায় তৃণমূল একটিও আসন না পেলেও দল লড়াইয়ের ময়দান ছেড়ে যাবে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৯ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২১
ভিএস