কলকাতা: চিরাচরিত প্রথা মেনে রোববার ঘণ্টা বাজিয়ে শেষ হলো ৪৫তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা। পাশাপাশি মঞ্চ থেকে ঘোষণা হলো আগামীবারের ‘থিম কান্ট্রি’ স্পেনের নাম।
শেষ খবর অবদি এবারে বইমেলায় ২৩ কোটি রুপির বেশি বই বিক্রি হয়েছে। এমনকি এবারে ডিজিটাইজেশনের পাশাপাশি অনলাইনে বিক্রি হয়েছে বই। অর্থাৎ সম্পূর্ণ বইমেলা বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের বাঙালিরা দেখতে পেয়েছেন এবং কিনতে পেরেছেন বই।
এ বিষয়ে গিল্ডকর্তা ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় বলেন, আমরা দেখেছি যতবার বাংলাদেশ কলকাতা বইমেলার থিম কান্ট্রি হয়েছে, ততবার আমাদের সেল বেড়েছে এবং বইমেলায় নতুনত্ব এসেছে। বাংলাদেশ আমাদের কাছে পয়া।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ প্রথম থিম কান্ট্রি হয় ১৯৯৯ সালে। এরপর ২০১৩ এবং ২০২২; প্রত্যেকবারই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়। ১৯৯৯ সালে কবি শামসুর রাহমান কলকাতায় এসেছিলেন। ২০১৩ সালে এসেছিলেন আনিসুজ্জামান এবং এবার সেলিনা হোসেন। তিনজন প্রথিতযশার হাত ধরে কলকাতা বইমেলার সূচনা এবং তিনবারই বইমেলায় অভিনবত্ব এসেছে।
পাঠকদের জনপ্রিয়তায় এবারের বইমেলার সেরার শিরোপা পেয়েছে বাংলাদেশ প্যভিলিয়ন। ভারতের সবচেয়ে বৃহত্তম এই বইমেলায় কলকাতাবাসীর কাছে বড় ইউএসপি হলো—একই ভাষায়, বিদেশি বইয়ের স্বাদ। সাধারণত, মেলায় বাংলাদেশের বইয়ের জনপ্রিয়তা প্রতিবারই তুঙ্গে থাকে। সারাবছর শহরবাসী অপেক্ষা করে থাকেন এই সময়টার জন্য। পাশাপাশি কলকাতা বইমেলা বড় অংশটা জমিয়ে রাখেন পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার বাসিন্দারা। কারণ, এই বইমেলাতেই এক বাংলার বই আরেক বাংলায় পাওয়া যায়।
যদিও কলকাতায় শুধু বাংলাদেশের বইয়ের পসরা নিয়ে 'বাংলাদেশ বইমেলা’ হয়ে থাকে, তবে করোনা কারণে গত দু'বছর হয়নি সেই বইমেলা। ফলে বাড়তি মনোযোগ পেয়েছে কলকাতা বইমেলার বাংলাদেশ প্যাভেলিয়ন। আর সেই উন্মাদনার জন্য কলকাতা বইমেলার আয়োজক কমিটি পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ডের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ প্যাভেলিয়নের হাতে তুলে দিয়েছে সম্মাননা।
এবারে থিম কান্ট্রি ‘বাংলাদেশ’ এর পাশাপাশি বিদেশি প্রকাশকদের স্টলে হাজির ছিল ‘পুতিন’-এর রাশিয়া। এক ছাতার তলায় ছিল ‘ইউক্রেন’ হামলার নিন্দার সরব আমেরিকা, ইংল্যান্ড, জাপানের মতো দেশের প্রকাশকরাও। এবারে মোট ২০টি দেশ অংশগ্রহণ করেছে বইমেলায়।
৪৫তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলার বাংলাদেশ প্যাভেলিয়ন সাজোনো হয়েছিল ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণকে উপজীব্য করে। প্যাভেলিয়নে ঢুকতেই ছিল বিশাল মাপের বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি। গোটা প্যাভেলিয়নের বাইরে সেই ঐতিহাসিক ভাষণের ছবি কাঠে খোদাই করে বসানো হয়েছে। প্যাভেলিয়নে অংশগ্রহণ করেছিল ১২টি সরকারি ও ২৯টি বেসরকারি প্রকাশনা সংস্থা। এবারে সবচেয়ে বেশি চাহিদা ছিল হুমায়ূন আহমেদ, নাসরিন জাহান, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও সাদাত হোসাইনের বইয়ের।
অরপদিকে, থিম কান্ট্রি হওয়ার পাশাপাশি মেলার তিনটি প্রবেশদ্বার সাজানো হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর তিনটি বইকে উপজীব্য করে। সেগুলি হলো—অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা এবং আমার দেখা নয়া চীন। এসব বইয়ের বিপুল চাহিদা ছিল। বাংলাদেশ প্যাভেলিয়নের প্রকাশকদের মতে বিক্রি হয়েছে আশানুরূপ। গতবারের চেয়ে ৪৫ শতাংশ বই বিক্রি বেড়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩০৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০২১
ভিএস/এমজেএফ