কলকাতা: কলকাতার প্রাণকেন্দ্র নন্দনে গত শনিবার শুরু হয়েছিল ৪র্থ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব। ৫ দিনের সে উৎসবের পর্দা নামল বুধবার (২ নভেম্বর)।
হাওড়া থেকে এসেছেন প্রিয়াংকা, তিনি জানান, অনেকগুলো সিনেমা দেখেছি। আজ ‘নোনা জলের কাব্য’ দেখতে এসেছি। ইউটিউবের বদৌলতে অনেক সিনেমা দেখি কিন্তু, কলকাতার প্রেক্ষাগৃহে সারা বছর বাংলাদেশের সিনেমা যদি চলতো তাহলে আমাদের মতো যারা সিনেমাপ্রেমী মানুষ তারা দুই বাংলার ছবি দেখতে পারতো।
গড়িয়াবাসি সৌগতের কথায়, ‘হাওয়া’ যদি সাধারণ হলে টিকিট কেটে দেখতাম তাহলে অনেক ভালো হতো। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইন দিতে হতো না। দুপুর ১টার সময় লাইন দিয়েছি সিনেমা শুরু হবে ছটায়। নেহাত ভালো সিনেমা তাই আমরা যারা লাইন দিয়ে এসেছি কষ্টটা মিটে যাবে।
কলকাতাবাসী দীপক জানান, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসবটা ৫ দিনের পরিবর্তে কম করে ৭ দিন ভালো হতো। জীবিকা সামলে লাইন দিয়ে ছবি দেখার হ্যাপাটা কম হতো। হাওয়া আমাদের সব কিছু কেড়ে নিয়েছে।
এবারের উৎসবে অন্যান্য ছবির পাশপাশি, কলকাতায় উৎসাহ ছিল মেজবাউর রহমান সুমনের ‘হাওয়া’ নিয়ে। বাধ্য হয়েই উদ্যোক্তাদের ৫ দিনে, ছ'বার দেখাতে হয়েছিল চঞ্চল চৌধুরী অভিনীত হাওয়া। এ বিষয়ে কলকাতার বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের প্রেস সচিব রঞ্জন সেন বলেন, বাংলাদেশ সরকার, বাংলাদেশ উপ হাইকমিশন তরফ থেকে কলকাতা, কলকাতাবাসীকে ধন্যবাদ জানাই, কারণ এই উৎসবে তারা বিপুলভাবে সাড়া দিয়েছেন, সিনেমাগুলো দেখেছেন। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নিয়ে তারা যে আগ্রহদের দেখিয়েছেন তার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা অতিরিক্ত কিছু শো বাড়ানো হয়েছে। আগামী চলচিত্র উৎসবের সময়সীমা যাতে বাড়ানো যায় আর ব্যাপারে বাংলাদেশের মাননীয় তথ্যমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ প্রাথমিক নিশ্চয়তা দিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, বছরভর বাংলাদেশি সিনেমাগুলো যাতে দেখানো যায় সে ব্যাপারে আইনি জটিলতা কাটিয়ে দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছেন।
পাশপাশি বলেন, চাহিদার জন্য আসন্ন কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে ‘হাওয়া’ ছবিটি দেখানোর ব্যাপারে নন্দন কর্তৃপক্ষ প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু করেছে। যদিও বিষয়টি দু'দেশের সরকারি পর্যায়ের অনুমতি দরকার। সেক্ষেত্রে এই বাংলাদেশি চলচ্চিত্র উৎসবে যারা ‘হাওয়া’ ছবিটি দেখতে পারেননি, তাদের স্বাদ মেটানোর সুযোগ থাকছে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে।
মোট ৩৭টি বাংলাদেশি সিনেমা নিয়ে সাজানো হয়েছিল এবারের উৎসব। এসব ছবি দেখানো হয়েছিল নন্দনের তিনটি প্রক্ষাগৃহে। সবকটি হলেই বাংলাদেশের ছবি দেখার উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো, যা নিয়ে আগামী বছর পরিকল্পনায়, পরিবর্তন আনতে পারেন উদ্যোক্তারা। তবে লাইন দিয়েও অনেকেই বাংলাদেশের সিনেমা দেখতে পারেননি। কলকাতার পুলিশের কথা, আসন সংখ্যার থেকে দর্শক বেড়ে যাওয়ায় এই সমস্যা।
তবে বাঙালির কাছে বাংলা ছবির গুরুত্ব সব সময় বেশি। আর এই কটা দিন বাংলাদেশের ছবি কিছুটা ভিন্ন স্বাদ এনে দিয়েছিল কলকাতাবাসীর হৃদয় এবং মনে। আর সেই ভিন্নতায় অল্পেতে সন্তুষ্ট নন তারা। শেষ দিনে এমনই চিত্র ফুটে উঠল কলকাতার প্রাণকেন্দ্র নন্দন থেকে।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ০২, ২০২২
ভিএস