কলকাতা: স্বাধীন ভারতের প্রথম ভোটার শ্যামসরণ নেগি মারা গেছেন। শনিবার (৫ নভেম্বর) দেশটির হিমাচল প্রদেশ রাজ্যের কিন্নরে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
স্থানীয় প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, উপযুক্ত সম্মান ও পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদার সঙ্গে শ্যামসরণ নেগির শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। নেগির ভোট দেওয়ার উৎসাহ ছিল দেখার মতো। নানা সময়ে ভারতের নির্বাচন কমিশনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হয়ে ভারতের তরুণ প্রজন্মকে ভোটদানে উৎসাহ দিয়েছিলেন তিনি।
জানা যায়, হিমাচল প্রদেশের বিধানসভা ভোটের ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর’ ছিলেন তিনি। গত বুধবার কিন্নরের ডেপুটি কমিশনার আমির সাদিক নিজে গিয়ে শ্যামসরণ নেগির বাড়িতে গিয়ে তার ভোট সংগ্রহ করেন। বেশ কিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন শ্যামসরণ। বুধবার ভোট দেওয়ার সময়েও তার শরীর অত্যন্ত খারাপ ছিল। এক প্রকার শয্যাশায়ী হয়েই শেষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছিলেন তিনি।
১৯১৭ সালের ১ জুলাই হিমাচল প্রদেশে কলপা গ্রামে তার জন্ম হয়। গ্রামের স্কুলশিক্ষক হিসেবে জীবনের দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন তিনি। ১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৫১ সালে স্বাধীন ভারতে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই বছর ২৫ অক্টোবর প্রথম ভোট দেন শ্যামসরণ নেগি। সেই সময় ভারতের অধিকাংশ এলাকায় ভোট হয়েছিল ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। কিন্তু হিমাচলের কিছু পাহাড়ি এলাকা তখন বরফে ঢাকা থাকবে বলে অনেক আগে সেখানে নির্বাচন হয়েছিল।
এরপর ১৯৫১ সাল থেকে ভারতের প্রতিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন শ্যামসরণ নেগি। ভোট দেওয়াকে তিনি নাগরিক কর্তব্য বলে মনে করতেন, কখনও এ কর্তব্যের অন্যথা হতে দেননি। ২০১৭ সালে হিমাচল প্রদেশের বিধানসভা ভোটে তিনি বলেছিলেন, জানি মৃত্যুর সময় চলে এসেছে। কিন্তু মরার আগে ভোটটা দিয়ে যেতে চাই। তখন তার বয়স ছিল ১০১ বছর।
হিমাচল প্রদেশের ১৪টি বিধানসভা ভোটেই গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের রেকর্ড গড়েছেন এ বৃদ্ধ। তার জীবনীশক্তি ও ভোটাধিকার প্রয়োগের আগ্রহকে কুর্নিশ জানিয়েছে দেশবাসী। নেগির মৃত্যুতে পরিবারের প্রতি সমাবেদনা জানিয়েছে বিজেপি ও কংগ্রেস- ভারতের সব রাজনৈতিক দল।
নির্বাচন কমিশনের তরফে জানানো হয়, গণতন্ত্রের ওপর ব্যাপক আস্থা ছিল নেগির। শুধুমাত্র স্বাধীন ভারতের প্রথম ভোটার নন, নেগি এমন একজন মানুষ, যার গণতন্ত্রের ওপর আস্থা দেখে মুগ্ধ হতে হত। শ্যামসরণ নেগির মৃতুতে আমরা শোকস্তব্ধ, জাতির প্রতি তার অবদানের জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।
নেগির প্রয়াণে গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন হিমাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী জয়রাম ঠাকুর। তিনি জানিয়েছেন, দেশের প্রবীণতম ভোটার হিসেবে মৃত্যুর আগে নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। মৃত্যুর ডাকে সাড়া দিলেন তিনি। রেখে গেলেন ভারতের প্রবীণতম ভোটার হিসেবে রেকর্ড।
বাংলাদেশ সময়: ০০৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০২২
ভিএস/আরবি