ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

পশ্চিমবঙ্গে থেমেও থামছে না ‘কামড় কাণ্ড’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০২২
পশ্চিমবঙ্গে থেমেও থামছে না ‘কামড় কাণ্ড’ ফাইল ছবি

কলকাতা (পশ্চিমবঙ্গ, ভারত): শিক্ষক নিয়োগের দাবিতে উত্তাল কলকাতা। প্রতিদিন রাজপথে চলছে আন্দোলন চাকরিপ্রত্যাশীদের।

কিন্তু সেই আন্দোলোন হটাতে প্রাকাশ্যে ইভা থাপা নামে এক নারী পুলিশ কর্মী কামড় দিয়ে বসেন চাকরিপ্রত্যাশী অরুণিমা পালের হাতে। তখন যন্ত্রণায় কেঁদে ফেলেন অরুণিমা। গ্রেপ্তার হন তিনি, আর সেই নারী পুলিশ ভর্তি হন হাসপাতালে, যা নিয়ে উত্তাল কলকাতার রাজনীতি, সমালোচনার ঝড় নানা মহলে।

মমতার দলের একাংশ পুলিশের বিপক্ষে প্রশ্ন তুলে বিষয়টিকে দুঃখজনক বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন। তবে এই আবহেই অভিযুক্ত পুলিশকর্মী ইভা থাপার আচরণ নিয়ে মুখ খুলেছেন পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার (১১ নভেম্বর) কামড় কাণ্ড নিয়ে তিনি পুলিশকে সমর্থন করে বলেছেন, বিষয়টি বিচারাধীন। এনিয়ে আর আমি কী বলব? কী প্ররোচনা তৈরি হয়েছিল দেখতে হবে। যদি কাউকে হঠাৎ এমনভাবে উত্তেজিত করে দেওয়া হয়, আর তিনি যদি সেই উত্তেজনা প্রশমনে কোনো কাজ করে বসেন, সেটা অপরাধ নয়।

যা নিয়ে আবার সরব রাজ্যবাসী। সাধারণ নাগরিকদের মতে, প্রকাশ্যে সবকিছু দেখা গেছে। যা নিয়ে শাসক দলের একাংশ দুঃখ প্রকাশ করেছেন। স্বয়ং পুলিশমন্ত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে কিছু বলছেন না। সেখানে বিধানসভার অধ্যক্ষ কী করে এই মত দেন? তিনি এড়িয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু মুখ খুললেন সেই পুলিশ কর্মীর হয়ে?  

গত বুধবার (৯ নভেম্বর) ২০১৪-র শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা কলকাতায় বিক্ষোভ করছিলেন। সেখানেই পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় চাকরিপ্রত্যাশীদের। একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় এক নারী পুলিশ ছুটে গিয়ে এক চাকরিপ্রার্থীর হাত চেপে মুখটা নিচু করে দিচ্ছেন। এরপরই একটি ফুটেজ ভাইরাল হয়। সেখানে দেখা যায়, চাকরিপ্রার্থী অরুণিমা পালের বাম হাতে দাঁতের দাগ। নারী পুলিশ ইভা থাপা এই কাজ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন জখম চাকরিপ্রার্থীর।

এরপরই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, নিন্দার ঝড় বয়ে যায় সব মহলে। পাল্টা পুলিশের পক্ষ থেকেও জানানো হয়, ইভা থাপাকে কামড়ে বিদ্ধ করা হয়েছিল। রাগ সামলাতে না পেড়ে ইভাও কামড়ে দিয়েছিলেন।

এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার (১১ নভেম্বর) তৃণমূল বিধায়ক অজিত মাইতি বলেন, দিনের পর দিন সরকারকে অপদস্থ করার চেষ্টা করছে। পুলিশকে কামড়ে দিলে তার বিনিময়ে পুলিশ কামড়ে দেবে না তো কী রসগোল্লা ছুঁড়বে? এটা ভেবে দেখবেন। আজ এ রকম একটা চক্রান্ত সারা বাংলাজুড়ে চলছে। আমাদের সবাইকে এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।

তবে, সহমত নন শাসক দলের সাংসদ সৌগত রায়। তার অভিমত, আন্দোলনকারীকে কনস্টেবলের কামড় কলঙ্কিত করেছে পুলিশ বাহিনীকে। এটা দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা, না হলেই ভালো হতো। এ নিয়ে বিভ্রান্তিকর রিপোর্টও আছে। সেই পুলিশ কনস্টেবল বলছে তাকে কামড়ে দিয়েছে। তবে কারোরই কামড়ে দেওয়া উচিত নয়। এমনিতে পুলিশ সেদিন চাকরিপ্রার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করেনি। পুলিশ যে সংযম দেখিয়েছিল, একটা ছোট্ট ঘটনায় সেটা কলঙ্কিত হয়েছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক, নিশ্চয়ই পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।

তবে সেদিন একরাত পুলিশ লকআপে থাকার পর অরুণিমাসহ ৩০ জনকে হাজির করা হয় আদালতে। মুহূর্তে উত্তাল হয়ে ওঠে কলকাতার আদালত কক্ষ। চাকরিপ্রার্থীদের আইনজীবী আদালতে বলেন, পুলিশ যাকে কামড়ে দিল তিনি লক আপে। অথচ যিনি কামড়েছেন তিনি হাসপাতালে শুয়ে আছেন। কোন যুক্তিতে পুলিশ তাদের হেফাজত রেখেছে। এরপর জামিনে মুক্তি পান অরুণিমারা। কিন্তু ভুলতে পারছেন না ঘটনার দিনটি।

এদিন বাড়ি ফেরার পথে তিনি বলেন, আমি ব্যক্তি হিসেবে ব্যথা পেয়েছি। কিন্তু কামড়টা শুধু আমাকে নয়, এ কামড় ২০১৪ সালে যারা পাশ করেছি কিন্তু কোনো চাকরি পাইনি তাদের হাতে এই কামড়টা পড়েছে। সমাজের ওপর কামড় পড়েছে। আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব।

বিজেপির যুবনেত্রী তনুজা চক্রবর্তী বলেন, লজ্জাজনক ঘটনা। যা ঢেকে রাখার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার কাজ করেছে। কিন্তু এভাবে চলতে পারে না। মুখ্যমন্ত্রী পুলিশমন্ত্রীও বটে। ওনার পুলিশ ইভা থাপা অরুণিমাকে কামড়ে দিল। এটা কোনো ভদ্র সভ্য সমাজে হয় না। অরুনিমার পাশে আমরা আগেও ছিলাম, তবে শুধু অরুনিমা নয় যারা বিক্ষোভ করছেন, দেখাচ্ছেন, যারা নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন তারা এরপর কোথায় যাবেন? আমরা সমস্ত বিজেপি কর্মী তাদের পাশে আগেও ছিলাম, এখনো আছি। আগামী দিনেও আইনতভাবে এবং মেডিকেল সবরকম সহযোগিতায় পাশে থাকব আমরা।

শুধু রাজ্যের বাম বা বিজেপি নেতা-কর্মীরা নন, শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতিতে সরব হয়েছেন সাধারণ রাজ্যবাসীও। আর তাই তারা প্রশ্ন করছেন, যে দল ‘বদলা নয়, বদল চাই’ বলে বাম আমলের পতন ঘটিয়েছিল; পরিবর্তনের ১১ বছর পর তাদের দশা এমন কেন হচ্ছে? অচিরেই কালো মেঘ দেখতে পাচ্ছেন রাজ্যবাসী।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৯ ঘণ্টা, ১১ নভেম্বর, ২০২২
ভিএস/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।