ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

টেলিযোগাযোগ দিবস

সামাজিক উন্নয়নে আইসিটি নির্ভরতার প্রত্যয়

ইসমাইল হোসেন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩২৭ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৬
সামাজিক উন্নয়নে আইসিটি নির্ভরতার প্রত্যয়

ঢাকা: ‘সামাজিক উন্নয়নে প্রয়োজন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিনির্ভর বাণিজ্যিক উদ্যোগ’ শীর্ষক স্লোগান নিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও ১৭ মে (সোমবার) পালিত হতে যাচ্ছে ‘বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবস-২০১৬’।

 

 
দিবসটি উপলক্ষে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ।

তাদের উদ্যোগে শামিল হবে দেশের ছয়টি মোবাইল ফোন অপারেটর।
 
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিবসটি উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন।
 
দিবস উদযাপন কমিটির মিডিয়া ও পাবলিসিটি উপ-কমিটির আহ্বায়ক ও টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) গিয়াস উদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৯৩টি দেশে দিবসটি পালিত হচ্ছে।
 
গিয়াস উদ্দিন জানান, আইসিটি প্রয়োগ করে দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় সম্পর্কে আর্ন্তজাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলোকে সচেতন করাই উদ্দেশ্য, যেন সমগ্র বিশ্ব অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে পারে।
 
‘বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় দিবসটির প্রতিপাদ্য তাৎপর্যপূর্ণ ও যুক্তিযুক্ত। কারণ টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা সম্প্রসারণ ও উন্মুক্তকরণের মাধ্যমে টেকসই আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা সম্ভব। ’

১৮৫৬ সালের ১৭ মে আর্ন্তজাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (আইটিইউ) প্রতিষ্ঠার পর জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠন আইটিইউ’র সদস্যভূক্ত হয়েছে ১৯৩টি দেশ।
 
প্রথম আন্তর্জাতিক টেলিগ্রাফ সম্মেলন অনুষ্ঠানের নিদর্শনস্বরূপ ১৯৬৯ সালের ১৭ মে থেকে প্রতিবছর বিশ্ব টেলিযোগাযোগ দিবস পালিত হয়ে আসছে। পরবর্তী সময়ে ২০০৬ সালের আইটিইউ সম্মেলনে ১৭ মে বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়।
 
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সর্বশেষ মার্চ মাসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে ৬টি মোবাইল ফোন অপারেটরের মোট গ্রাহক সংখ্যা ১৩ কোটি ৮ লাখ ৮১ হাজার। ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা ৬ কোটি ১২ লাখ ৮৮ হাজার।
 
কর্মসূচি
দিবসটি উপলক্ষে দু’দিনব্যাপী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার।
 
সোমবার (১৭ মে) সকাল ১০টায় জাতীয় সংসদ ভবন সংলগ্ন মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ থেকে এয়ারপোর্ট হয়ে বিটিআরসি ভবন পর্যন্ত মনোজ্ঞ ও সু-সজ্জিত রোড শো এবং ৠালির আয়োজন করা হয়েছে।
 
ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইমরান আহমেদ এর উদ্বোধন করবেন। টেলিযোগাযোগ সচিব ফয়জুর রহমান চৌধুরী, বিটিআরসি চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ এবং মোবাইল ফোন অপারেটর প্রতিনিধিরা এতে উপস্থিত থাকবেন।
 
এরপর মঙ্গলবার (১৮ মে) বেলা আড়াইটায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। সেখানে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ উপস্থিত থাকবেন বলে আশ‍া করছেন দিবস উদযাপন কমিটির মিডিয়া উপ-কমিটির আহ্বায়ক।
 
এছাড়াও বিটিসিএলের উদ্যোগে দিবসের প্রতিপাদ্য তুলে ধরে সচেতনতামূলক পোস্টার ও ব্যানার প্রদর্শন এবং ঢাকার বাইরের বিভাগীয় শহর ও গোপালগঞ্জে ৠালি অনুষ্ঠিত হবে।
 
পাশাপাশি টেলিটকের উদ্যোগে পোস্টার, ব্যানার ফেস্টুন এবং এসএমএসের মাধ্যমে দিবসটি সম্পর্কে অবহিত করা হচ্ছে।
 
রাষ্ট্রপতির বাণী
দিবসটি উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন ও অগ্রগতির অন্যতম হাতিয়ার। তথ্যপ্রযুক্তির অভাবনীয় বিস্তার এ খাতের গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। মূলত টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা ভৌগোলিক সীমারেখা অতিক্রম করে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিশ্ববাসীকে এক কাতারে শামিল করেছে।
 
তথ্যপ্রযুক্তি এবং টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার সুফল বাংলাদেশের সব অঞ্চলের জনগণের মধ্যে পৌঁছে দিতে বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে ‘রূপকল্প ২০২১’ ঘোষণা করেছে, যা ইতোমধ্যে অনেকাংশেই বাস্তবায়িত হয়েছে।
 
সরকার তথ্যপ্রযুক্তি সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা, বিভাগ ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ে সকল ক্ষেত্রে এর ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ অব্যাহত রেখেছে। মোবাইল ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে জনগণ তাদের মৌলিক নাগরিক সেবা এখন তথ্যপ্রযুক্তির বদৌলতে ঘরে বসেই পাচ্ছেন। তা সত্ত্বেও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা আরো জনবান্ধব করতে আমাদের অনেক দূর যেতে হবে।
 
তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তিকে আর্থ-সামাজিক কর্মকাণ্ডের সকল ক্ষেত্রে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারলে সমাজ দ্রুত উন্নতির পথে এগিয়ে যাবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
 
টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সকলকে অধিকতর অবদান রাখার আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি।
 
প্রধানমন্ত্রীর বাণী
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, আমাদের সরকার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি ব্যাপকভাবে উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও বেসরকারি ব্যবসা সম্প্রসারণের সুযোগ তৈরি করেছে, যা দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে একটি বড় শক্তি।
 
গত প্রায় সাড়ে সাত বছরে আমাদের সরকার টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তির সুফল দেশের প্রতিটি প্রান্তে পৌঁছে দিতে যোগাযোগ প্রযুক্তির অবকাঠামো উন্নয়ন, প্রায়োগিক উৎকর্ষ সাধন, প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার নিশ্চিত করাসহ এ খাতে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে।
 
ইন্টারনেট ডেনসিটি বৃদ্ধি, সাবমেরিন ক্যাবলের ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি, নতুন সাবমেরিন ক্যাবল স্থাপনসহ টেলিযোগাযোগ খাতের সকল সেবা আধুনিক ও যুগোপযোগী করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তিবান্ধব নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। দেশের ৯৯ ভাগ এলাকা এখন মোবাইল নেটওয়ার্কের আওতায় এসেছে। মোবাইল ফোন গ্রাহকরা উন্নত টেলিসেবা পাচ্ছেন। দেশে থ্রিজি প্রযুক্তির মোবাইল নেটওয়ার্ক চালু করা হয়েছে। ফোরজি প্রযুক্তিও অচিরেই চালু করা হবে। টেলিডেনসিটি শতকরা ৮৪.৯ ভাগে উন্নীত হয়েছে। এখন দেশে মোবাইল সিম গ্রাহক ১৩ কোটির ওপরে এবং ইন্টারনেট গ্রাহক ৫ কোটি ৭ লাখ ৭ হাজার।
 
তিনি বলেন, আমরা দেশের সকল উপজেলায় অপটিক্যাল ফাইবার কানেকটিভিটি, সকল জেলায় ‘জেলা তথ্য বাতায়ন’ এবং দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে ‘ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠা করেছি। ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে পারস্পরিক যোগাযোগকে দ্রুত ও সহজতর করা হয়েছে। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নের ফলে সরকারি সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা-বাণিজ্য, সামাজিক যোগাযোগসহ প্রতিটি খাতে অমিত সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। তরুণ প্রজন্মের জন্য নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন আর স্বপ্ন নয়, একটি বাস্তবতা।
 
দিবসটি পালনের মাধ্যমে দেশের সর্বস্তরের জনগণ টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তির বিভিন্ন দিক সম্পর্কে আরও অবহিত হবেন এবং এর সুফল ভোগ করবেন বলে আশা করেন প্রধানমন্ত্রী।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৩০৭ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০১৬
এমআইএইচ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।