ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০৯ জুলাই ২০২৪, ০১ মহররম ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

‘দেখা থেকে লেখা’ হতে পারে ব্রেকিং নিউজও

মাজেদুল নয়ন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৫ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১৭
‘দেখা থেকে লেখা’ হতে পারে ব্রেকিং নিউজও বাঁয়ে ওয়াশিংটন পোস্টের সেই রিপোর্টের স্ক্রিনশট, ডানে ওয়ার্কশপে কথা বলছেন সহযোগী অধ্যাপক জেনেট ই স্টিল

ঢাকা: ইরাক যুদ্ধে ওয়াশিংটন পোস্টের সব রিপোর্টই ছিল আমেরিকান জাতীয়তাবাদী চেতনায় ‘অন্ধ’। যেখানে সত্য পরিস্থিতি জানা সম্ভব হতো না, কারণ সবগুলো রিপোর্টই হতো আমেরিকার পাঠক ও রাষ্ট্রের প্রেক্ষাপট বিবেচনায়। 

বাগদাদে তখন যুদ্ধ তুঙ্গে ইরাকি বাহিনী ও আমেরিকান বাহিনীর মধ্যে। নাজাফের দক্ষিণাঞ্চলে যুদ্ধের খবর প্রচার হয়নি সরকারিভাবে।

ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক অ্যান্থনি শাহদিদ নাজাফের এক মসজিদে বোমা হামলার চিত্র তুলে ধরে একটি প্রতিবেদন করেন। যেখানে তিনি ১৪ বছরের শিশু আরকান দায়ীফের নিহত হওয়ার বিষয়টি মানবিকভাবে তুলে ধরেন। বোমা হামলার বিষয়ে অ্যান্থনি উল্লেখ করেন, ‘তিনি অনেকের সঙ্গে কথা বলেছেন, তবে নিশ্চিত হতে পারেননি এই বোমা হামলা কারা করেছে’।

সিঙ্গাপুরে এশিয়ান জার্নালিজম ফেলোশিপের (এজেএফ) ওয়ার্কশপে দ্য জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক জেনেট ই স্টিল এই প্রসঙ্গে বলেন, রিপোর্টের এই অংশ পড়ে বোঝা যায় যে বোমা হামলা হয়েছে। আর তখন কারা সেখানে বোমা হামলা চালাচ্ছিল তা সবাই আসলে বুঝতে পারে।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের প্রথম থেকেই এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেন স্পটে ‘দেখা থেকে লেখা’র ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। তার নির্দেশিত উপায়ে ‘দেখা থেকে লেখা’ রিপোর্ট প্রশংসিতও হয়েছে সর্বস্তরে।  

যদিও বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে এখনও ‘দেখা থেকে লেখা’র সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারেননি সাংবাদিকরা। বরং অনেকেই সংবাদের উৎস এবং নাম, এমনকি নিশ্চয়তার সূত্র খুঁজে বেড়ান। ওয়ার্কশপে অংশ নেওয়া ফেলোশিপের সাংবাদিকরাএক্ষেত্রে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের এডিটর ইন চিফের দৃষ্টিভঙ্গির একটি উদাহরণ স্মরণ করা যায়। ২০১২ সালের শেষার্ধ্বে খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন কাভার করতে যাওয়ার সময় এডিটর-ইন-চিফ বলেন, ‘যা দেখবে তাই লিখবে’।  

এই সেদিন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভি চলে গেলে মাঠও অর্ধেক খালি হয়ে যায়। আমি দেখে তাই লিখি। সমালোচনা হয় রিপোর্ট নিয়ে। পল্টনে বিএনপি কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে এক নারী পুলিশ সদস্যের আহত হওয়ার খবর প্রকাশ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতার শিক্ষকরাও সমালোচনার ঝড় তোলেন ফেসবুকে।  

ফিরে আসি অ্যান্থনি শাহদিদের রিপোর্টে। রিপোর্টে কোনো দাপ্তরিক বরাত নেওয়া হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রকে দেওয়া মানুষের অভিশাপ ঠিক কার মুখ থেকে বলা হয়েছে, সেটিও উল্লেখ করা হয়নি। মানুষের সমষ্টিগত ক্ষোভকে ‘কোট’ করে কয়েক কথায় উল্লেখ করেছেন অ্যান্থনি।  

সিঙ্গাপুরের লি কুয়ান ইউ স্কুল অব পাবলিক পলিসি বিভাগে এশিয়ান জার্নালিজম ফেলোশিপের (এজেএফ) ওয়ার্কশপে দ্য জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক জেনেট ই স্টিল বলছিলেন ‘দেখা থেকে লেখা’র বিষয়টি নিয়ে।  

তিনি বলেন, পরিস্থিতি বোঝাতে সবসময় কারও মন্তব্য নেওয়ার প্রয়োজন হয় না। নিজের দেখা থেকে লেখাও হতে পারে ব্রেকিং নিউজ। বরং অন্য কোনো রিপোর্ট করা যেতে পারে মন্তব্য নিয়ে। সেক্ষেত্রে বিশ্বজুড়ে এখনো অ্যান্থনি শাহদিদের রিপোর্টকে ‘আদর্শ’ হিসেবে দেখা হয়।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৯ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০১৭
এমএন/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।