ফ্রান্সে তৈরিকৃত স্যাটেলাইটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের কেপ ক্যানাভেরাল থেকে এ বছরের ডিসেম্বরে উৎক্ষেপণ করার কথা ছিল বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট।
দীর্ঘ সময় পূর্ণশক্তি ধরে রাখা ইতিহাসের প্রথম ‘প্রাণঘাতী’ সামুদ্রিক ঝড় ‘ইরমা’ ১০ সেপ্টেম্বর ফ্লোরিডায় আঘাত হানে।
ফ্লোরিডার লঞ্চ প্যাড কেপ কার্নিভাল থেকে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের কথা রয়েছে বলে জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. মেজবাহুজ্জামান বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের নির্মাণ কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে, ডিসেম্বরে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের সব প্রস্তুতি নেওয়া ছিল।
তিনি বলেন, ফ্রান্সের থ্যালাস এলিনিয়া স্পেসের ফ্যাক্টরিতে স্যাটেলাইট নির্মাণের কাজ চলছে। নির্মাণ, পরীক্ষা ও পর্যালোচনা শেষে বিশেষ কার্গো বিমানে যুক্তরাষ্ট্রের লঞ্চ সাইট কেপ কার্নিভালে পাঠানো হবে। উৎক্ষেপণের এক মাস আগে থেকে স্পেসএক্স এর লঞ্চ ফ্যাসিলিটিতে লঞ্চ ভেহিকল ফ্যালকন-৯ এর ইন্ট্রিগ্রেশনসহ প্রয়োজনীয় পরীক্ষা শুরু হবে। উৎক্ষেপণের আগে লঞ্চ প্যাডে প্রস্তুতিতে দুই মাস সময় লাগে।
কিন্তু হ্যারিকেনের আঘাতে ফ্লোরিডার লঞ্চ প্যাড কেপ কার্নিভাল থেকে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ বন্ধ রয়েছে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক। তিনি বলেন, ওই লঞ্চ প্যাড থেকে সিডিউল অনুযায়ী স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয়। ইরমার আঘাতের কারণে লঞ্চ প্যাড থেকে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ বন্ধ রয়েছে। এজন্য দক্ষিণ কোরিয়া ও বুলগেরিয়ার ভিন্ন দু’টি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে তারিখও পিছিয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণও পিছিয়ে যেতে পারে।
গত মে মাসে ফ্রান্সে স্যাটেলাইট নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করে দেশে ফিরে সংবাদ সম্মেলনে টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম জানিয়েছিলেন, ২০১৮ সালের জুনে বাণিজ্যিক অপারেশনে যাবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট।
স্যাটেলাইট উৎক্ষেপেণের আগে শব্দের কম্পন সহনীয়তা ও শব্দহীনতার পরীক্ষা, ইনিশিয়াল পারফরমেন্স টেস্ট, ফরমাল ভ্যাকুয়াম টেস্ট, ফাইনাল পারফরমেন্স টেস্ট, ফাইনাল প্রিপারেশন টেস্টের পরে সোলার রেট ও অ্যান্টেনা তৈরি করে যুক্ত করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের গ্রাউন্ড স্টেশন স্থাপনের জন্য গাজীপুরের জয়দেবপুর ও রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় বিকল্প স্টেশন হিসেবে রাখা আছে।
টেলিযোগাযোগ বিভাগ জানায়, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার রয়েছে। এটি একটি বাণিজ্যিক স্যাটেলাইট এবং আলাদাভাবে স্পট থেকে তৈরি হওয়া নিজস্ব স্যাটেলাইট। বাংলাদেশকে সার্ভিস দেওয়ার জন্য এতে আলাদাভাবে ২০টি ট্রান্সপন্ডার রাখা হয়েছে। এই স্যাটেলাইটের মেয়াদ ১৫ বছর। স্যাটেলাইটের জন্য অরবিটাল স্লটও কেনা হয়েছে। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পর বিদেশি স্যাটেলাইটের ভাড়া বাবদ বছরে ১৪ মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে।
২০১৫ সালের ২১ অক্টোবর সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে স্যাটেলাইট সিস্টেম কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করে। প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার স্যাটেলাইট সিস্টেম কিনতে ১১ নভেম্বর থ্যালাসের সঙ্গে বিটিআরসির চুক্তি সই হয়।
স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে হংক সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশনের (এইচএসবিসি) সঙ্গে প্রায় এক হাজার ৪০০ কোটি টাকার ঋণচুক্তি করে বিটিআরসি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৭
এমআইএইচ/এমজেএফ