ঢাকা, শনিবার, ১৩ পৌষ ১৪৩১, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

তথ্যপ্রযুক্তি

শতভাগ দেশি কর্মীর হাতে তৈরি সিম্ফনি মোবাইল, লক্ষ্য রফতানি

ইসমাইল হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০২০
শতভাগ দেশি কর্মীর হাতে তৈরি সিম্ফনি মোবাইল, লক্ষ্য রফতানি

জিরাবো থেকে ফিরে: দেশের সব স্তরের ক্রেতাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকা সিম্ফনি মোবাইল ফোন প্রায় অর্ধেকটাই বাজার দখল করে রেখেছে। গুণগত মানে ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করে দেশীয় এই ব্র্যান্ড এবার মোবাইল ফোন রফতানির টার্গেট নিয়েছে।

প্রায় দেড় বছর আগে ঢাকার অদূরে সাভারের জিরাবোতে এডিসন গ্রুপের সিম্ফনি মোবাইল কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়। বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) টেলিকম বিটের সাংবাদিকদের সংগঠন টিআরএনবি সদস্যদের কারখানা পরিদর্শন শেষে এমনটাই জানিয়েছে এডিসন গ্রুপ।


 
সাধারণ ভোক্তাদের স্মার্টফোন নাগালে আনতে যেসব মোবাইল ফোন ব্র্যান্ড অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে তাদের মধ্যে অন্যতম সিম্ফনি মোবাইল, বলেন এডিসন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকারিয়া শহীদ।
 
তিনি বলেন, এক সময় মোবাইল হ্যান্ডসেট ছিল অধিকাংশ ভোক্তার ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। প্রায় ৮২ শতাংশ মানুষ মোবাইল ফোন কিনতে পারত না। তখন সিম্ফনির উদ্যোক্তাদের চিন্তা আসে কিভাবে স্বল্প দামে মানসম্পন্ন মোবাইল ফোন মানুষের হাতে তুলে দেওয়া। এই চিন্তা থেকে সিম্ফনির যাত্রা শুরু হয় ২০০৮ সালে।
 
‘সেই পরিকল্পনায় চীন থেকে মোবাইল ফোন তৈরি করে দেশে আমদানি করা হয়। ভোক্তাদের তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকায় মোবাইল তুলে দেওয়া শুরু করে সিম্ফনি। এরপর থেকেই দেশের বাজারে উত্থান শুরু হয় সিম্ফনির,’ বলেন এই ব্র্যান্ডের কর্ণধার।
 
তিনি বলেন, ২০১০-১১ সালে ফিনল্যান্ডের নকিয়া ফোনকে ছাড়িয়ে বিক্রির দিকে দেশের এক নম্বর ফোনের স্বীকৃতি পায় সিম্ফনি, যা সারা বিশ্বের মধ্যে লোকাল কোম্পানি হিসেবে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিকে ছাড়িয়ে যাওয়ার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তৈরি করে। ২০১১ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত দেশের সর্বাধিক বিক্রিত ব্র্যান্ড হিসেবে সিম্ফনি তার নেতৃত্ব ধরে রেখেছে। পাশাপাশি ২০১৩ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্র্যান্ড ফোরাম কতৃক মোবাইল ফোন ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ ব্র্যান্ডের খেতাব অর্জন করে। আর ২০১৮ সালের শেষ দিকে এসে দেশে স্মার্টফোন উত্পাদন শুরু করে সিম্ফনি।
 
কারখানাটি সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায়, দেশীয় কর্মীদের হাতে সংযোজন হচ্ছে ফিচার ফোন ও স্মার্টফোনের যন্ত্রাংশ। তবে গুণগতমানের ক্ষেত্রে কোনো আপোষ করছেন না তারা।
 
সাভারের জিরাবোতে এডিসন গ্রুপের সিম্ফনি মোবাইল কারখানাএডিসন গ্রুপের এমডি বলেন, শুরু থেকেই সিম্ফনি পণ্যের গুণগত মান ঠিক রেখে নতুন নতুন প্রযুক্তি এবং সর্বোচ্চ বিক্রয়োত্তর সেবা নিশ্চিত করার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মনে সেরা ব্র্যান্ড হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে, যা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।  
 
বাজার পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, দেশে প্রতি মাসে স্মার্টফোনের চাহিদা প্রায় সাড়ে নয় থেকে দশ লাখ। যার ৭০ শতাংশ এখন দেশেই উৎপাদন হচ্ছে। বাকি ৩০ শতাংশের মধ্যে ২৫ শতাংশই অবৈধ বাজারের মাধ্যমে অসাধু ব্যাবসায়ীরা সরবরাহ করছে এবং সরকার এখান থেকে রাজস্ব হারাচ্ছে প্রায় দুই থেকে তিন হাজার কোটি টাকা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন মোবাইল ফোনের বৈধ ব্যাবসায়ী এবং উদ্যোক্তারা।
 
এ অবস্থার মধ্যেও দেশের বাজারে মাসে এক লাখ থেকে এক লাখ ২৫ হাজারের সিম্ফনি স্মার্টফোনের চাহিদা রয়েছে। এর পুরোটা সিম্ফনি স্থানীয়ভাবে দিচ্ছে। মোট বাজার ছয় থেকে সাত লাখ বৈধ মোবাইল ফোনের বাজার আছে।
 
কর্মকর্তারা জানান, দেশে মোট মোবাইল ফোনের বাজার প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন কোটি ইউনিট, যা মূল্যে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে স্মার্টফোনের বিক্রি ৩০ শতাংশ এবং ৭০ শতাংশ হচ্ছে ফিচার ফোনের বাজার।
 
তারা বলেন, ভারত ১০ বছর ধরে দেশীয় উৎপাদনকে বিভিন্নভাবে প্রণোদনা দিচ্ছে, ফলে তাদের চাহিদার ৭০ শতাংশ মোবাইল ফোন দেশীয় উৎপাদনে দিতে পারছে। আর আমরা বাংলাদেশে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ সম্ভব করেছি মাত্র গত দুই বছরে।
 
দেশের চাহিদা পূরণ করে সিম্ফনি ২০২২ সালে মোবাইল ফোন রফতানি করবে জানিয়ে কোম্পানির এমডি জাকারিয়া বলেন, বিশেষ করে মধ্যপাচ্য ও ভারতের সেভেন সিস্টারে বিপুল পরিমাণ সম্ভাবনা আছে। বর্তমানে সিম্ফনি ভিয়েতনাম এবং শ্রীলঙ্কায় তাদের ব্যবসা প্রসার করেছে।
সাভারের জিরাবোতে এডিসন গ্রুপের সিম্ফনি মোবাইল কারখানাকর্মীদের তথ্য তুলে ধরে কোম্পানিটির সিনিয়র ডিরেক্টর মাকসুদুর রহমান বলেন, এই খাতে প্রায় দুই হাজার কর্মী কাজ করেন। তাদের অধিকাংশই পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের ছাত্র। সিম্ফনিতে প্রায় ৯৮০ কর্মী কাজ করেন। আগামী কয়েক বছরে এই সংখ্যা তিন হাজার ছাড়িয়ে যাবে।
 
এমডি জাকারিয়া বলেন, বাংলাদেশের বাজারে এখনো অনেক মানুষ থ্রি-জি ফোন ব্যাবহার করছেন। আর তাই সিম্ফনি আগে থ্রি-জি আর ফোর-জি’র মার্কেটে সিম্ফনির দখল নিশ্চিত করতে সচেস্ট হয়েছে। এখন এই কারখানা থেকে প্রতি মাসে ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার পর্যন্ত স্মার্টফোন বাজারে যাচ্ছে এবং সিম্ফনির মূল পরিকল্পনাই ছিল চীনের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে নিজস্ব কারখানা থেকেই পরিপূর্ণভাবে স্মার্টফোন বাজারজাত করা।
 
এডিসন গ্রুপের হেড অব সেলস এমএ হানিফ বলেন, বাংলাদেশের প্রায় ৭০ ভাগের বেশি মানুষ এখনো ফিচার ফোন ব্যাবহার করছেন, তাই সিম্ফনি এখন আস্তে আস্তে ফিচার ফোন উৎপাদনের দিকেও জোর দিচ্ছে। আশা করা যায় আগামী তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে সিম্ফনি ফিচার ফোন এবং স্মার্টফোন মিলিয়ে মাসে সাড়ে পাঁচ লাখ থেকে ছয় লাখ ফোন উৎপাদন করে বাজারজাত করতে পারবে।
 
গ্রুপের ডিরেক্টর (হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স) মেজর (অব.) আব্দুল মালেক মিয়াজী জানান, জিরাবোতে সিম্ফনি ফ্যাক্টরি উদ্বোধন করা হয় ২০১৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর। ওই বছরের ডিসেম্বর থেকেই সিম্ফনি মেড বাই বাংলাদেশ ফোন বাজারজাত করা শুরু করে। সিম্ফনি’র ফ্যাক্টরিতে সব মিলিয়ে এখন প্রায় সাড়ে পাঁচশ’ মানুষ কাজ করছেন। মোবাইলের এ্যাসেম্বলিং প্ল্যান্টটি প্রায় ৫৭ হাজার বর্গফুট জমির উপরে তৈরি হয়েছে।
 
এছাড়াও বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে প্রায় ৮.১৬ একর এবং আশুলিয়াতে নিজস্ব ১ লাখ ৭২ হাজার ৮০০ স্কয়ার ফিট জমির ওপরে আরো দুটি কারখানা তৈরি করছে সিম্ফনি। এই তিনটি কারখানায় এখন পর্যন্ত সিম্ফনির খরচ হয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ সময়: ১১১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০২০ 
এমআইএইচ/এমএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।