ঢাকা: ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের মতো মোবাইল ডাটা বা ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে ‘এক দেশ দেশ এক রেট’র আদলে প্যাকেজ দিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসিকে উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
বুধবার (১৩ এপ্রিল) রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এমটব (অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ) ও বিআইজিএফ (বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভরনেন্স ফোরাম) আয়োজিত টেলিকম ট্যাক্স পলিসি ও ইকোসিস্টেম নিয়ে এক পলিসি ডায়লগে তিনি এ কথা বলেন।
ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের এক দেশ এক রেটের কথা উল্লেখ করে টেলিযোগাযোগমন্ত্রী বলেন, আমরা একটি অসাধারণ কাজ করতে সক্ষম হয়েছি, যেটি বাংলাদেশে মহাসড়ক তৈরি করার ক্ষেত্রে একটা বড় ভূমিকা পালন করেছে। এক দেশ এক রেট অসাধারণ একটি মহাযজ্ঞ করার জন্য বিটিআরসিকে ধন্যবাদ দিই। আমি বিটিআরসিকে অনুরোধ করব, যেটি আপনি আইএসপি বা সংশ্লিষ্টদের দিয়ে করতে পেরেছেন, একইভাবে মোবাইল ডাটার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। আমরা যেন এ ক্ষেত্রেও এক দেশ এক রেটের মতো একটা কিছু করে দিতে পারি। যেটা মোবাইল ইন্টারনেটের পেনিট্রেশনের ক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা পালন করবে।
সম্প্রতি মোবাইল ডাটার ক্ষেত্রে মেয়াদ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, আমরা যেভাবে ডাটার কেরি ফরোয়ার্ড করেছি, ডাটার কেরি ফরোয়ার্ড হচ্ছে এটা ভালো দিক। কিন্তু এটা খুব স্পষ্ট সেটি হচ্ছে যে আমরা ১৯৬৮-৬৯ সালে বলতাম স্বৈরশাসকরা যেন দেয়ালের লিখন পড়তে পারে। আপনারাও (অপারেটর) অনুগ্রহ করে গ্রাহকদের মনের কথা পড়ার চেষ্টা করুন। আপনাদের প্রত্যেকটি গ্রাহক যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করে, তারা বলে যে আপনারা আমাকে ডাটা দিয়েছেন, এ ডেটা আমি আমার ইচ্ছামতো ব্যবহার করব। আমার প্রয়োজন ও সময়মতো। আপনি আমাকে ডাটা দিয়েছেন এবং সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন, এ সময়সীমায় নেটওয়ার্ক পেলাম না, এ দায় কার? এ দায় গ্রাহকের হতে পারে না।
রাষ্ট্রীয় অপারেটরের কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, টেলিটক অত্যন্ত দুর্বলতম প্রতিষ্ঠান, তারপরও টেলিটক গত কয়েকদিনের রেকর্ডে সর্বোচ্চ বিক্রিত প্যাকেজ হচ্ছে আনলিমিটেড ডাটা। আপনারাও দেখেন, ব্যবসা করতে গেলেও দেখবেন যে আনলিমিটেড ডাটা দিয়ে যে পরিমাণ ব্যবসা করতে পারবেন...। সাতদিনের জন্য ১০ জিবি দিলে সে দুই বিজির বেশি ব্যবহার করতে পারবে না। আপনি আট জিবি খেয়ে ফেললেন, আমার কাছে মনে হয় না এটা ব্যবসার চমৎকার নীতিমালা, এটা নিঃসন্দেহে গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করার মতো। এটা মনে করি না, কোনোভাবেই চলতে দেওয়া উচিত। এটা আপনারা দেখবেন।
আলোচনায় কলড্রপ নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেন, অপারেটররা চাপের মধ্যে থেকেও বাংলাদেশের অগ্রগতির ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে। এ ভূমিকাটা আরও ভালোভাবে পালন করতে হবে।
বহু অপারেটরের সিম নিয়ে আমি কল করতে পারিন না, কল কেটে যায়। এ যন্ত্রণাটা দিন দিন যে পরিমাণে বাড়ছে, সেই যন্ত্রণা থেকে যদি জনগণ মুক্তি না পায়...। আমি অনুরোধ করব, আপনারা কলড্রপের ক্ষতিপূরণটাও যদি না দেন তাহলে এটা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়, গ্রহণযোগ্য নয়। আপনি গ্রাহকের ক্ষতি করবেন, কিন্তু তাকে সেই ক্ষতিপূরণটা দেবেন না, এটা কোনোভাবে ব্যবসায়িক নীতি হতে পারে না, যোগ করেন মন্ত্রী।
অনুষ্ঠানটিতে সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনা করেন বিআইজিএফের চেয়ারপার্সন এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান হাসানুল হক ইনু।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব মো. খলিলুর রহমান ও বিটিআরসি চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার। বক্তব্য দেন এমটব মহাসচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এস এম ফরহাদ।
টেলিকম করনীতি ও টেলিকম ইকোসিস্টেম নিয়ে দু‘টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যথাক্রমে রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার শাহেদ আলম এবং এরিকসনের মালয়েশিয়া, বাংলাদেশ, শ্রীলংকার হেড অব নেটওয়ার্ক সল্যুশন এবং এরিকসন বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার আবদুস সালাম।
বিটিআরসি’র স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জুয়েল, রবির ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সিএফও এম. রিয়াজ রাশিদ, ফাইবার এট হোমের চিফ টেকনোলজি অফিসার সুমন আহমেদ সাবিরসহ অনেকে বক্তব্য দেন।
বাংলাদেশ সময়: ০০৩৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৪, ২০২২
এমআইএইচ/এসআই