বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি গৌতম আদানির প্রায় আড়াই হাজার কোটি ডলারের ব্যক্তিগত ধনসম্পদ একদিনেই উধাও হয়ে গেছে।
গত তিন বছরে তার বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দাম দশগুণ বেড়ে যাওয়ায় ৬০ বছর বয়সী এই ভারতীয় ব্যবসায়ী এশিয়ার সবচেয়ে ধনী এবং বিশ্বের তৃতীয় ধনী ব্যক্তিতে পরিণত হন।
কিন্তু চলতি সপ্তাহেই নিউইয়র্কভিত্তিক প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ রিসার্চের বিতর্কিত এক রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর গৌতম আদানির মালিকানাধীন বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের মূল্যে ধস নামে।
বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে পাওয়ার জন্য আদানি গ্রুপ এখন যুক্তরাষ্ট্রের ওই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দিয়েছে।
কিন্তু কে এই গৌতম আদানি? কেমন করে তিনি এতো ধনসম্পদের মালিক হলেন, এবং কেনই বা তার বিশাল বাণিজ্যিক সাম্রাজ্য এরকম ঝড়ের মুখে পড়ল?
ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটের ব্যবসায়ী গৌতম আদানি স্কুলে লেখাপড়া শেষ করেননি। পিতার গার্মেন্টস ব্যবসায় যোগ না দিয়ে তিনি হীরার ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নেন। পরে তিনি তার ভাইয়ের প্লাস্টিক কারখানা পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেন।
১৯৮৮ সালে তিনি আদানি এক্সপোর্টস নামের একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন- যা পরে আদানি এন্টারপ্রাইজেসে পরিণত হয়। তার বিভিন্ন কোম্পানির মধ্যে এটিই প্রধান প্রতিষ্ঠান।
আজকের দিনে ভারতীয় তিনটি বৃহৎ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে গৌতম আদানি এন্টারপ্রাইজেস একটি। এসব প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা রয়েছে।
গৌতম আদানির বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ভারতে সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দর পরিচালনাকারী বৃহত্তম প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সর্ববৃহৎ কোম্পানি, সিমেন্ট উৎপাদনকারী দ্বিতীয় বৃহৎ প্রতিষ্ঠান।
আদানি গ্রুপের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে যে, আদানি হলেন প্রথম প্রজন্মের ব্যবসায়ী যার চোখে- দেশ গঠনের জন্য কল্যাণকর প্রবৃদ্ধি অর্জনই মূল দর্শন। এই গ্রুপের পরিচালিত অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান ভারত সরকার বেশ ভালোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৩ সালে গোয়ায় গৌতম আদানির ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন। সে সময় বিজেপি নেতা মোদি ছিলেন গুজরাট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।
সমালোচকরা বলেন, ২০১৪ সালে ভারতে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর আদানি গ্রুপ জাহাজ চলাচল ও বিমানবন্দর পরিচালনার বেশ কয়েকটি বড় ধরনের কাজ পায়। বিরোধী দলগুলো এসব ঠিকাদারি কাজকে স্বজনপ্রীতির প্রমাণ হিসেবেও উল্লেখ করেছে।
আদানি এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, এসব কাজের টেন্ডার দেওয়া হয়েছিল। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই তার কোম্পানি এসব কাজ পেয়েছে।
ভারতে যে দ্রুত গতিতে আদানির ধনসম্পদ বেড়েছে, তা নিয়ে দেশটিতে কথাবার্তা হচ্ছে। নরেন্দ্র মোদি যখন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন, সেসময় গৌতম আদানির সম্পদের পরিমাণ ছিল ৭০০ কোটি ডলার। কিন্তু এই সম্পদ বাড়তে বাড়তে গত বছর ১৫শ কোটি ডলারে পৌঁছে।
বিনিয়োগ সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ রিসার্চ বুধবার তাদের রিপোর্টে আদানির বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে করপোরেট জগতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ধোঁকাবাজির অভিযোগ করে।
নিউইয়র্ক-ভিত্তিক এই কোম্পানির ‘শর্ট-সেলিং’- এর বিষয়ে বিশেষত্ব রয়েছে। এই পদ্ধতিতে কোনো কোম্পানির শেয়ারের মূল্য পড়ে গেলে, সুবিধা অর্জনের জন্য ওই শেয়ারের বিষয়ে আর্থিক অবস্থান নিয়ে থাকে।
হিনডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্টে মরিশাস ও ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের মতো বিভিন্ন ট্যাক্স হেভেনে বিভিন্ন কোম্পানিতে আদানি গ্রুপের মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
রিপোর্টেও এও দাবি করা হয় যে আদানি গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানির ‘উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ঋণ’ রয়েছে- যা পুরো গ্রুপটির আর্থিক ভিত্তিকে নড়বড়ে করে তুলেছে।
প্রতিবেদনে আরও অভিযোগ করা হয় যে, ভারতে লেনদেন হওয়া শেয়ারের মূল্য নিজেদের পক্ষে নির্ধারণ করার জন্য এসব অফশোর কোম্পানিগুলোকে ব্যবহার করা হয়েছে।
আদানি গ্রুপ অত্যন্ত ক্ষোভের সঙ্গে এই রিপোর্টের প্রতিবাদ জানিয়েছে। একইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগও তারা অস্বীকার করেছে। আদানি হিনডেনবার্গ রিসার্চের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। তবে হিনডেনবার্গ বলছে যে, তারা এ বিষয়ে আদালতে লড়াই করতে প্রস্তুত।
বলা হচ্ছে, এই রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর আদানি গ্রুপের সম্পদের মূল্য চার হাজার ৮০০ কোটি ডলার কমে গেছে। শুধু ভারতে নয়, এর বাইরেও রিপোর্টের প্রভাব পড়তে পারে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২৩
আরএইচ