ঢাকা, মঙ্গলবার, ৪ চৈত্র ১৪৩১, ১৮ মার্চ ২০২৫, ১৭ রমজান ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ভেনেজুয়েলায় অভিবাসী প্রত্যর্পণ বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের জবাব চেয়েছেন বিচারক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০২৫
ভেনেজুয়েলায় অভিবাসী প্রত্যর্পণ বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের জবাব চেয়েছেন বিচারক

ভেনেজুয়েলার ২৬১ অভিবাসীকে এল সালভাদরে প্রত্যর্পণ করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। অভিবাসীদের নিয়ে ‍দুটি বিমান যখন আকাশে ঠিক তখনই দেশটির একজন জেলা বিচারক বোসবার্গ প্রত্যর্পণে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।

তিনি বিমান ‍দুটিকে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেন। অথচ তাতে কর্ণপাত করেনি ট্রাম্প প্রশাসন। এ বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের জবাব চেয়েছেন বিচারক।

বিচারক কমপক্ষে দুই সপ্তাহ অভিবাসী প্রত্যর্পণ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। এ আদেশ সত্ত্বেও অভিবাসী বহিষ্কার অব্যাহত রাখার অনুমতি দিয়েছেন ট্রাম্প, যা তার প্রশাসন ও বিচার বিভাগের মধ্যে সাংবিধানিক সংঘাতের কারণ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিচারক ট্রাম্প প্রশাসনকে ১৮ মার্চের মধ্যে ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের বিমানে করে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রদানের জন্য সময়সীমা দিয়েছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, নির্বাসিত ভেনেজুয়েলানরা সন্ত্রাসী সংগঠন ট্রেন ডি আরাগুয়ার সদস্য। গত শনিবার হোয়াইট হাউস ট্রাম্পের একটি ঘোষণাপত্র প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, ১৭৯৮ সালের বিদেশি শত্রু আইন প্রয়োগ করে টিডিএ গ্যাংয়ের সদস্যদের নির্বাসিত করা হয়েছে। কারণ, তারা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অনিয়মিতভাবে যুদ্ধ পরিচালনা করছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের একজন আইনজীবী যুক্তি দিয়েছেন যে, বিমান ‍দুটি ফিরিয়ে আনার বিষয়ে বিচারকের মৌখিক রায়টি পরবর্তীতে জারি করা হয়। এবং লিখিত আদেশ দ্বারা বাতিল করা হয়েছে। মার্কিন আকাশসীমা ছেড়ে যাওয়ার পর সরকারের ফ্লাইট অব্যাহত রাখার আইনি অধিকার রয়েছে।

গত সোমবার আদালতে এক শুনানির সময় বিচারক বোসবার্গ অভিবাসী বহনকারী বিমানগুলোর ফ্লাইটের সময় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিতে বিচার বিভাগের আইনজীবী অভিষেক কাম্বলিকে বারবার চাপ দিচ্ছিলেন। তার আদেশ জারি হওয়ার পরও বিমান উড়েছিল কিনা তাও জানতে চাইছিলেন তিনি। মূলত বোসবার্গ মৌখিক আদেশ ‍দিয়েছিলেন, অভিবাসী বহনকারী যেকোনো বিমান যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনতে হবে। আদেশটি স্থানীয় সময় সন্ধ্যার দিকে জারি করা হয়। ওই সময় বিমান দুটি আকাশেই ছিল।

বিচারকের লিখিত আদেশের ১২ মিনিট পর, সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে তৃতীয় ফ্লাইটটি আকাশে ওড়ে। ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে, তৃতীয় ফ্লাইটটি বিদেশি শত্রু আইনের অধীনে নয় বরং অভিবাসন কর্তৃপক্ষের অধীনে নির্বাসিতদের বহন করেছে। তিনটি ফ্লাইটই হন্ডুরাসে যাত্রা বিরতি করে এবং বিচারকের মৌখিক ও লিখিত আদেশ জারির কয়েক ঘণ্টা পর শনিবার রাতে বা রোববার সকালে এল সালভাদরে অবতরণ করে।

বিচারক বোসবার্গ বিস্তারিত তথ্য জানতে চাইলে কাম্বলি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন তথ্য প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। কারণ এতে জাতীয় নিরাপত্তা এবং বৈদেশিক সম্পর্ক ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।

হোয়াইট হাউস জোর দিয়ে বলেছে ১৮ শতকের বিদেশি শত্রু আইনের অধীনে বহিষ্কারের ক্ষেত্রে ট্রাম্পের কর্তৃত্বের ওপর ফেডারেল আদালতের কোনো এখতিয়ার নেই। আদালতের এখতিয়ার আইন দ্বারা সীমিত।

বোসবার্গ বলেন, ট্রাম্প তার আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারতেন। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বহিষ্কার ট্রাম্প প্রশাসনের বিচারকের আদেশ অমান্য করার শামিল। পরে বোসবার্গ মঙ্গলবার দুপুরের মধ্যে সরকারকে বিদেশে ফ্লাইট ছাড়ার এবং আগমনের সময়, বহিষ্কৃত মানুষের সংখ্যা এবং সরকার কেন তথ্য প্রকাশ করতে পারবে না তার বিশদ বিবরণ প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন।

আইনজীবী লি গেলার্ট মনে করছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের পদক্ষেপ সাংবিধানিক সংকটের সূত্রপাত করতে পারে। শুনানিতে তিনি বলেন, আমি মনে করি আমরা এর খুব কাছাকাছি চলে এসেছি।

বহিষ্কৃত অভিবাসীরা ট্রেন ডি আরাগুয়ার সদস্য, ট্রাম্পের এমন দাবির ওপরও প্রশ্ন তোলেন এই আইনজীবী। তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের এটি একটি অভ্যাস যে তারা যাদের গ্রেপ্তার করেছে তাদের সম্পর্কে অতিরঞ্জিত তথ্য ‍দিয়ে আসছে।

যদিও ট্রেন ডি আরাগুয়া একটি ভয়ঙ্কর অপরাধী সংগঠন যারা দক্ষিণ আমেরিকায় মানবপাচার করে আসছে তবে তাদের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বৃহৎ আকারের অভিযানের খুব কম প্রমাণ পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০২৫
এসএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।