অন্যান্য দেশের উচ্চ শুল্কের পাল্টা জবাব দিতে নতুন শুল্ক নীতি ঘোষণা দিতে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই শুল্ক নীতির লক্ষ্য হলো নির্দিষ্ট পণ্যের ক্ষেত্রে সমান শুল্ক আরোপ করা, যেন যুক্তরাষ্ট্র কোনো বাণিজ্যিক অসুবিধার শিকার না হয়।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট সোমবার (৩১ মার্চ) নিশ্চিত করেছেন যে নতুন পারস্পরিক শুল্ক নীতিতে কোনো দেশই ছাড় পাবে না।
লেভিট জানান, ভারত মার্কিন পণ্যের ওপর ১০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করে রেখেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি বড় বাণিজ্যিক বাধা। তার বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, যুক্তরাষ্ট্রও এবার পাল্টা ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে। অর্থাৎ, ভারতীয় পণ্য আমদানির ক্ষেত্রেও ১০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হবে। তিনি আরও জানান, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ বিষয়ে অত্যন্ত দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং কোনো ছাড় দেওয়ার পক্ষে নন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ঘোষিত ‘লিবারেশন ডে ট্যারিফ’ পরিকল্পনার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যনীতিতে বড় পরিবর্তন আনতে চলেছেন।
লেভিট বলেন, আমেরিকান পণ্যের ওপর বিভিন্ন দেশ যে উচ্চ শুল্ক আরোপ করেছে, তা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘অন্যায্য বাণিজ্যনীতি’ তৈরি করেছে এবং এখনই এটি বন্ধ করার সময় এসেছে। আগামী ২ এপ্রিল, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে দিনটিকে ‘আমেরিকার মুক্তির দিন’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন, সেদিনই নতুন শুল্ক নীতির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসবে।
হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই শুল্ক ব্যবস্থা দেশভিত্তিক হবে, তবে নির্দিষ্ট কিছু শিল্প খাতেও শুল্ক আরোপ করা হবে।
লেভিট বলেন, প্রেসিডেন্ট এই নীতিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, এবং আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার পর বিস্তারিত জানা যাবে, এখন সময় এসেছে বাণিজ্যে সমতা আনার।
হোয়াইট হাউসের দাবি, আমেরিকান পণ্যের ওপর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যে পরিমাণ শুল্ক আরোপ করেছে, তা যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য প্রতিযোগিতামূলক বাজারে প্রবেশ করতে বাধা দিচ্ছে।
ক্যারোলিন লেভিট বলেন, আপনি যদি আমাদের বিরুদ্ধে আরোপিত শুল্কের হারগুলো দেখেন, তাহলে বুঝতে পারবেন বিষয়টি কতটা গুরুতর।
তিনি কয়েকটি শুল্ক হার তুলে ধরেন:
ইউরোপীয় ইউনিয়ন: আমেরিকান দুগ্ধজাত পণ্যের ওপর ৫০% শুল্ক
জাপান: আমেরিকান চালের ওপর ৭০০% শুল্ক
ভারত: আমেরিকান কৃষিজাত পণ্যের ওপর ১০০% শুল্ক
কানাডা: আমেরিকান মাখন ও পনিরের ওপর ৩০০% শুল্ক
হোয়াইট হাউসের মতে, এত বেশি শুল্কের কারণে আমেরিকান পণ্য এসব দেশের বাজারে প্রবেশ করতে পারছে না। ফলে মার্কিন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এবং কর্মীরা আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
তিনি বলেন, এটি শুধুই শুল্কের বিষয় নয়, এটি আমেরিকান কর্মীদের জীবন-জীবিকার বিষয়। বছরের পর বছর ধরে অনেক ব্যবসায়ী ও শ্রমিক এই বৈষম্যের শিকার হয়েছেন।
ট্রাম্প প্রশাসন মনে করে, নতুন শুল্ক ব্যবস্থা আমেরিকার বাণিজ্য সম্পর্কে "ঐতিহাসিক পরিবর্তন" আনবে এবং অন্যান্য দেশকে বাণিজ্যে আরও ন্যায্যতা আনতে বাধ্য করবে।
লেভিট বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে, বহু দেশ বছরের পর বছর ধরে আমেরিকাকে ঠকিয়ে আসছে। আমরাও পাল্টা ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত। আমরা চাই আমাদের শ্রমিকরা ন্যায্য প্রতিযোগিতার সুযোগ পাক।
আগামী ২ এপ্রিল ট্রাম্পের ঘোষণার পর বোঝা যাবে, এই নতুন শুল্ক ব্যবস্থা বিশ্ববাণিজ্যে কতটা প্রভাব ফেলতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০২৫
এমএম