ঢাকা, সোমবার, ২৪ চৈত্র ১৪৩১, ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

মাইক্রোসফটের হাতে ফিলিস্তিনিদের রক্ত লেগে আছে: নারী কর্মীর তীব্র প্রতিবাদ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫২ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০২৫
মাইক্রোসফটের হাতে ফিলিস্তিনিদের রক্ত লেগে আছে: নারী কর্মীর তীব্র প্রতিবাদ

বহুজাতিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফটের কর্মী ইবতিহাল আবুসাদ অভিযোগ করেছেন, গাজায় চলমান গণহত্যার পেছনে তার প্রতিষ্ঠান দায়ী। তিনি দাবি করেন, ইসরায়েল মাইক্রোসফটের কোড ব্যবহার করে গাজায় মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং নিরীহ মানুষ হত্যা করছে।

শনিবার (৫ এপ্রিল) মাইক্রোসফটের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে আবুসাদ তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, মাইক্রোসফটের হাতে ফিলিস্তিনিদের রক্ত লেগে আছে। তিনি ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) সরঞ্জাম সরবরাহের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, আপনি যুদ্ধ থেকে সুবিধা ভোগ করছেন, গণহত্যার জন্য এআই ব্যবহার বন্ধ করুন।

এই প্রতিবাদটি ঘটে যখন মাইক্রোসফটের এআই বিভাগের প্রধান নির্বাহী মুস্তফা সুলেমান প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। সুলেমানকে উদ্দেশ্য করে আবুসাদ বলেন, গণহত্যার জন্য মাইক্রোসফটের সরবরাহ করা প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে, এবং আমরা এটি জানি। মাইক্রোসফটের প্রত্যেকের হাতে রক্ত লেগে রয়েছে।

মঞ্চে প্রতিবাদ জানানোর এক পর্যায়ে, আবুসাদ ফিলিস্তিনের ঐতিহ্যবাহী ‘কেফিয়াহ স্কার্ফ’ ছুড়ে দেন, যা ফিলিস্তিনের প্রতি তার সংহতির চিহ্ন হিসেবে দেখানো হয়। এরপর, নিরাপত্তাকর্মীরা তাকে অনুষ্ঠানের স্থান থেকে বের করে দেন।

আবুসাদ নিজের প্রতিবাদ সম্পর্কে বলেন, যখন আমরা জানি, মাইক্রোসফটের কোড বোমা হামলা, নজরদারি এবং নিরপরাধ মানুষদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে, তখন তা মেনে নেওয়া অসম্ভব। আমার জন্য সবচেয়ে বড় ভয় হলো, প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে বুঝতে পারা যে আজ আমার কোড কোনো শিশু হত্যার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে।

এদিন, সুলেমান শান্তভাবে প্রতিবাদকারীকে উত্তর দেন, আপনার প্রতিবাদ আমি শুনতে পাচ্ছি, ধন্যবাদ, যা ঘটনার গুরুত্বকে আরও প্রাধান্য দেয়।

মাইক্রোসফটের এই বিতর্কিত পরিস্থিতি প্রসঙ্গে, আবুসাদ আরও বলেন, আমার জন্য সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো, ফিলিস্তিনের মানুষ মাইক্রোসফটের সরবরাহ করা প্রযুক্তির কারণে খুন হচ্ছে, আর আমরা এ অবস্থায় আনন্দ উদযাপন করছি। এটি মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।

এছাড়া, একই দিনে মাইক্রোসফটের আরেক কর্মী ভানিয়া আগারওয়াল প্রতিবাদ জানিয়ে মঞ্চে উপস্থিত গেটস, বলমার ও নাদেলার সামনে ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানান। এর ফলে, প্রতিবাদটি সরাসরি সম্প্রচারিত হওয়ায় সামাজিক মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়।

এটি প্রথম নয়, এর আগে ফেব্রুয়ারিতে গাজার গণহত্যায় মাইক্রোসফটের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে অভ্যন্তরীণ এক বৈঠকে প্রতিবাদ জানানোয় পাঁচ কর্মীকে বরখাস্ত করা হয়েছিল।

এদিকে, বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) চলতি বছর একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে জানায়, মাইক্রোসফট ও তাদের অংশীদার ওপেনএআই গোপনে ইসরায়েলি বাহিনীকে এআই প্রযুক্তি সরবরাহ করছে। এসব প্রযুক্তির সহায়তায় গাজা ও লেবাননে হামলার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হচ্ছে।

এ ঘটনা বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে এবং মাইক্রোসফটের শীর্ষ কর্মকর্তাদের প্রতি প্রশ্ন তুলেছে যে, তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন ও যুদ্ধাপরাধের সহায়তাকারী হতে পারে কী না।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০২৫
এসএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।