ঢাকা, শুক্রবার, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০৬ জুন ২০২৫, ০৯ জিলহজ ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

‘অপারেশন স্পাইডারওয়েবে’ ইউক্রেনের বিমানই ধ্বংস হয়েছে?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২:০৮, জুন ৫, ২০২৫
‘অপারেশন স্পাইডারওয়েবে’ ইউক্রেনের বিমানই ধ্বংস হয়েছে?

রাশিয়ায় গত ১ জুন ইউক্রেনের চালানো ড্রোন হামলায় বেশ কয়েকটি রাশিয়ান টুপোলেভ-৯৫ কৌশলগত বোমারু বিমান ধ্বংস হয়। মজার বিষয় হল, ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর রাশিয়া এই বোমারু বিমানগুলোর বেশ কয়েকটি ইউক্রেন এবং কাজাখস্তান থেকে অধিগ্রহণ করে।

'অপারেশন স্পাইডারওয়েব' নামের ওই অভিযানে ১১৭টি ফার্স্ট পারসন ভিউ ড্রোন দিয়ে হামলা চালায় ইউক্রেন। ড্রোনগুলো আগেই বিশেষ ট্রাকে করে রাশিয়ায় পাচার করা হয়। ট্রাকগুলো হামলার শিকার রুশ বিমান ঘাঁটির কাছে নেওয়া হয়। বেলায়া, ডায়াগিলেভ, ওলেনিয়া এবং ইভানোভো এই চারটি সামরিক বিমান ঘাঁটিকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল, নিয়মিতভাবে ইউক্রেনীয় শহরগুলোতে বিমান হামলা চালাতে ব্যবহৃত রাশিয়ার দূরপাল্লার বোমারু বিমানগুলোর ক্ষতি করা বা ধ্বংস করা।

হামলায় রাশিয়ার ৪১টি বিমান ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয় বলে ইউক্রেনের দাবি। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম টুপোলেভ-৯৫, টুইপোলেভ ২২এম৩ এবং টুপোলেভ-১৬০ কৌশলগত বোমারু বিমান। একটি এ-৫০ মেইনস্টে এয়ারবর্ন আর্লি ওয়ার্নিং অ্যান্ড কন্ট্রোল সিস্টেম বিমানও ধ্বংস হয়েছে বলে ধারণা। সব মিলিয়ে রাশিয়ার ৭ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয় বলে ইউক্রেন প্রচার করছে।

বেশ কয়েকটি স্বাধীন ওপেন-সোর্স ইন্টেলিজেন্স বিশ্লেষক স্যাটেলাইট চিত্র এবং ড্রোন ফুটেজ বিশ্লেষণ করে কমপক্ষে ১৩টি বোমারু বিমানের ক্ষতির বিষয়টি নিশ্চিত করেন। রাশিয়ার আরও বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে কিছু ইউক্রেনীয় সমর্থক সামরিক ব্লগার প্রচার করছেন। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে মুখ খুললেও তাদের প্রচার করা তথ্যও স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

এমন হামলা রাশিয়ার জন্য এটিই প্রথম নয়। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে সোভিয়েত আমলের কিছু ড্রোন সংস্কার করে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী দুটি রাশিয়ান বিমান ঘাঁটিতে হামলা চালায়। ওই ঘটনা এবারের মতো বড় ছিল না। তখন কমপক্ষে একটি টুপোলেভ-৯৫ বিয়ার বিমান ধ্বংস হয়। ২০২৩ সালে রাশিয়ার নভগোরোদ অঞ্চলের সোলটসি বিমানবন্দরে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী হামলা চালায়। কোয়াডকপ্টার ড্রোন দিয়ে একটি টুপোলেভ-২২এম৩ বোমারু বিমান তারা ধ্বংস করে।

কিন্তু এবার বেশি সংখ্যক টিইউ-৯৫ বিমান ধ্বংস হয়েছে। এই ধরনের বিমান রাশিয়ান দূরপাল্লার কৌশলগত বিমান চলাচলের মূল ভিত্তি। তাই রুশ বিমান বাহিনীকে শূন্যস্থান পূরণ করতেই হবে।

সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর রাশিয়া অল্প সংখ্যক কৌশলগত বোমারু বিমান পায়। আরও কিছু সোভিয়েত রাষ্ট্র উত্তরাধিকারসূত্রে সামরিক সরঞ্জাম, যুদ্ধাস্ত্র বা প্রযুক্তি পায়, যা শেষ পর্যন্ত তাদের ছেড়ে দিতে হয়। ১৯৯৪ সালের ৫ ডিসেম্বর ইউক্রেন তার বিশাল পারমাণবিক অস্ত্রের মজুদ ত্যাগ করে। বিনিময়ে দেশটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং রাশিয়াকে তার আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষার দায়িত্ব দেয়। ১৯৯৬ সালের জুলাইয়ের মধ্যে দেশটির পারমাণবিক ওয়ারহেডগুলো রাশিয়ার কাছে হস্তান্তর করা হয়। ওই কাজে সহায়তা করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে প্রায় আধা বিলিয়ন ডলার দেয়।

সোভিয়েত ইউনিয়ন আমলের সমাপ্তির পর ইউক্রেন প্রায় ১০২টি কৌশলগত বোমারু বিমানও উত্তরাধিকারসূত্রে পায়। সেগুলোর মধ্যে ছিল ২৩টি টিইউ-৯৫এমএস, ১৯টি টিইউ-১৬০ এবং ৬০টিরও বেশি টিইউ-২২এম৩। অর্থনৈতিক সমস্যা, খুচরা যন্ত্রাংশের অভাব এবং ভূ-রাজনৈতিক চাপের কারণে ইউক্রেন ওই কৌশলগত বোমারু বিমানগুলো রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিচালনা করতে পারছিল না। তাই বিমানগুলো শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার কাছে হস্তান্তর করা হয়। তখন ইউক্রেনের প্রয়োজন ছিল গ্যাস আর রাশিয়ার প্রয়োজন ছিল বোমারু বিমান। সেই সময় দেশটির কৌশলগত বিমান তৈরির সম্ভাবনা ছিল না। ঘাটতি পূরণের জন্য দেশটি অন্য সাবেক সোভিয়েত রাষ্ট্রগুলো থেকে বোমারু বিমান কেনার সিদ্ধান্ত নেয়।

১৯৯৯ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে, প্রাকৃতিক গ্যাসের ঋণের আংশিক শোধ দিতে রাশিয়ার কাছে টিইউ-৯৫, টিইউ-৯৬ এবং টিইউ-১৬০এর পাশাপাশি ৫৭৫টি কেএইচ-৫৫ ক্ষেপণাস্ত্র স্থানান্তর করে ইউক্রেন।

কাজাখস্তানের হাতেও কৌশলগত বোমারু বিমান সোভিয়েত উত্তরাধিকারসূত্রে আসে। দেশটির হাতে ২৭টি টিইউ-৯৫এমএস-১৬ এবং ১৩টি টিইউ-৯৫এমএস-৬ ছিল। ইউক্রেনের সংবাদমাধ্যমগুলো প্রচার করে থাকে, এক যৌথ বিমান মহড়ায় কাজাখস্তানের বিমানগুলো পুরনো বিমান টিইউ-৯৫কে দিয়ে বদলে দেয় রাশিয়া। কাজাখস্তান বিষয়টি যখন টের পায়, তখন দেশটির আর কিছু করার ছিল না। এসব তথ্য স্বাধীনভাবে যাচাই করা কঠিন।

সূত্র: ইউরেশিয়া টাইমস

এমএইচডি/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।