ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ আষাঢ় ১৪৩২, ১৭ জুন ২০২৫, ২০ জিলহজ ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কী, কতদূর যেতে পারে?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১:১৮, জুন ১৭, ২০২৫
ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কী, কতদূর যেতে পারে?

ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছে। শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া এই সংঘাতে দুই দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ইসরায়েলের একতরফা আগ্রাসনের জবাবে ইরান একযোগে শতশত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে।

ইসরায়েলে ছোড়া শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের অনেকগুলোই ইসরায়েল প্রতিহত করতে পারলেও কিছু ক্ষেপণাস্ত্র তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে মধ্য তেল আবিবসহ বিভিন্ন এলাকায় আঘাত হানে। এতে প্রাণহানি ও বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটে।

ইরানের ঠিক কতটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে তা নির্দিষ্টভাবে জানা না গেলেও এটি মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম বৃহৎ ও আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার বলে ধারণা করা হয়।

ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কীভাবে কাজ করে?

ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হলো এমন এক ধরনের দূরপাল্লার অস্ত্র যা প্রচলিত বিস্ফোরক কিংবা পারমাণবিক ওয়ারহেড (অস্ত্র) বহন করতে পারে। এটি একটি বাঁকা পথে (ব্যালিস্টিক ট্রাজেক্টরি) উড়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে।

শক্তিশালী রকেট ইঞ্জিনের সাহায্যে এ ক্ষেপণাস্ত্র প্রথমে আকাশের ওপরের স্তর বা মহাকাশ পর্যন্ত উঠে যায়। এরপর ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে গেলে এটি পূর্বনির্ধারিত পথে মাধ্যাকর্ষণের কারণে তীব্র গতিতে নিচের দিকে নেমে আসে এবং লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করে।

ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কতদূর যেতে পারে?

ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কয়েকশ কিলোমিটার থেকে শুরু করে ১০ হাজার কিলোমিটারের বেশি দূরত্ব পর্যন্ত অতিক্রম করতে পারে।

পাল্লা অনুযায়ী ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রকে পাঁচটি ভাগে ভাগ করা হয়:

ব্যাটলফিল্ড রেঞ্জ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (বিআরবিএম)– ২০০ কিলোমিটারের নিচে

স্বল্পপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (এসআরবিএম)– এক হাজার কিলোমিটারের নিচে

মাঝারি/মধ্যমপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (এমআরবিএম/আইআরবিএম)- এক হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার

দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (এলআরবিএম)– সাড়ে তিন হাজার থেকে সাড়ে পাঁচ হাজার কিলোমিটার

আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম)– সাড়ে পাঁচ হাজার কিলোমিটারের বেশি

ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কত গতিতে চলতে পারে?

এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো অত্যন্ত উচ্চগতিতে চলে, যার ফলে হাজার হাজার কিলোমিটার পথ অল্প কয়েক মিনিটেই অতিক্রম করতে পারে।

গতি পরিমাপের একক হলো ম্যাক, যা শব্দের গতির সমান। উদাহরণস্বরূপ, ম্যাক ৫ মানে শব্দের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি গতি।

স্বল্পপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সাধারণত সুপারসনিক গতিতে চলে (ম্যাক ১-এর বেশি, অর্থাৎ ঘণ্টায় প্রায় এক হাজার ২২৫ কিলোমিটার)।

দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রগুলো সাধারণত হাইপারসনিক গতিতে চলে– (ম্যাক ৫ বা তারও বেশি অর্থাৎ ঘণ্টায় ছয় হাজার ১২৫ কিলোমিটারের বেশি)।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলে পৌঁছাতে কত সময় লাগে?

ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার দূরত্ব প্রায় এক হাজার ৩০০ থেকে এক হাজার ৫০০ কিলোমিটার (প্রায় ৮০০ থেকে ৯৩০ মাইল)।

ম্যাক ৫ গতিতে চলা একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইরান থেকে ইসরায়েলে পৌঁছাতে সময় নেয় আনুমানিক ১২ মিনিট। তবে সময় কিছুটা কমবেশি হতে পারে ক্ষেপণাস্ত্রের ধরন ও উৎক্ষেপণের স্থান অনুযায়ী।

ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করা কঠিন কেন?

এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ভয়ংকর হয়ে ওঠে এর তিনটি কারণে— অনেক দূর থেকে ছোড়া যায়, গতিবেগ অত্যন্ত বেশি, থামানো বা প্রতিরোধ করা কঠিন।

এগুলো আকাশের অনেক উঁচু দিয়ে দ্রুতগতিতে ছুটে আসে, যার ফলে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যথেষ্ট প্রতিক্রিয়া দেখানোর পর্যাপ্ত সময় পায় না।

পুনরায় বায়ুমণ্ডলে ঢোকার সময় ক্ষেপণাস্ত্র আরও বেশি গতি অর্জন করে এবং খাড়াভাবে নিচে পড়ে, ফলে প্রতিরোধ করা আরও কঠিন হয়ে পড়ে।

কিছু ক্ষেপণাস্ত্র আবার ভুয়া বস্তু (ডিকয়) ছাড়ে বা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে বিভ্রান্ত করার কৌশল নেয়। ফলে রাডার ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ধোঁকা দেওয়া সহজ হয়।

ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের পার্থক্য কী?

শুধু ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নয়, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরান ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রও ব্যবহার করেছে।

ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিচু দিয়ে ধীরে ধীরে উড়ে চলে, অনেকটা চালকহীন বিমানের মতো। এর ফলে সহজে রাডারে ধরা পড়ে না এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এড়াতে সক্ষম হয়।

যদিও এগুলো ধীরগতির, তাই থামানোর সময় বেশি পাওয়া যায়, কিন্তু নিচু ও ঘুরে চলার ক্ষমতার কারণে এগুলোকে শনাক্ত ও ধ্বংস করা কঠিন হয়ে পড়ে।

ইরান থেকে ছোড়া ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েল পৌঁছাতে সময় নেয় প্রায় ১২ মিনিট। ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র পৌঁছাতে সময় নেয় প্রায় দুই ঘণ্টা। ড্রোন পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় নয় ঘণ্টা।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডারে কী আছে?

গত তিন দশকে ইরান নিজস্ব প্রযুক্তিতে নানা ধরনের ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে।

এসব ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে অনেকগুলো দূরপাল্লার, উচ্চগতি সম্পন্ন এবং পারমাণবিক ওয়ারহেড বহনে সক্ষম বলে ধারণা করা হয়।

ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডারে কী আছে?

ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডারও অত্যন্ত আধুনিক এবং যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতায় গড়ে উঠেছে। তাদের অনেক ক্ষেপণাস্ত্র পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম এবং কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরেও আঘাত হানতে পারে।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কী?

ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষার প্রধান ভরসা আয়রন ডোম। এই ব্যবস্থায় রাডার থাকে, যা শত্রুর ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করে, তাদের গতি ও দিক নির্ণয় করে এবং সেগুলো ধ্বংস করে।

মাঝারি ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধে ইসরায়েলের আরও দুটি প্রধান ব্যবস্থা রয়েছে। একটি হলো ডেভিড’স স্লিং, যা ৪০ থেকে ৩০০ কিলোমিটার পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে পারে। আরেকটি হলো অ্যারো সিস্টেম, যেটি দুই হাজার ৪০০ কিলোমিটার  পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করতে সক্ষম।

আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।