ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২, ২৬ জুন ২০২৫, ০০ মহররম ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচন: ইতিহাস গড়ার পথে জোহরান মামদানি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩:১৪, জুন ২৫, ২০২৫
নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচন: ইতিহাস গড়ার পথে জোহরান মামদানি

নিউইয়র্ক সিটির ক্রমবর্ধমান ব্যয় সংকটের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রচার চালিয়ে আসা রাজ্যের অ্যাসেম্বলি সদস্য জোহরান মামদানি নগরের মেয়র নির্বাচনে ডেমোক্রেট দলের প্রার্থী বাছাইয়ে নাটকীয় জয়ের পথে রয়েছেন।  

অভিবাসী অধ্যুষিত কুইন্স থেকে শুরু করে ব্রাউনস্টোন ব্রুকলিন পর্যন্ত বিস্তৃত বৈচিত্র্যময় ভোটার জোট তাকে এগিয়ে দিয়েছে।

ফলাফল এখনো চূড়ান্ত না হলেও ৩৩ বছর বয়সী এই ডেমোক্র্যাটিক সোশালিস্ট নিজেকে ইতিমধ্যে বিজয়ী ঘোষণা করেছেন, আর তার প্রতিদ্বন্দ্বী, সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমো পরাজয় মেনে নিয়েছেন।

মাত্র কয়েক মাস আগেও জোহরান ছিলেন নিউ ইয়র্কবাসীর কাছে এক অচেনা নাম, একজন তরুণ রাজনীতিক যার পরিচিতি ছিল সীমিত। কিন্তু আজ তিনি ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মনোনয়ন পেতে চলেছেন, পরাজিত করেছেন আরও পরিচিত, অভিজ্ঞ এবং পুরোনো রাজনৈতিক ঘাঁটি গড়ে তোলা প্রার্থীদের।

তার প্রচারণার মূল প্রতিপাদ্য ছিল নিউ ইয়র্কের শ্রমজীবী মানুষের দুর্ভোগ, বিশেষ করে বাসস্থান ও শিশু পরিচর্যার চড়া ব্যয়।

জোহরান মামদানি যদি নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হন, তবে তিনি হবেন নিউ ইয়র্ক সিটির প্রথম মুসলিম মেয়র। তার এই পরিচয় শহরের প্রায় ১০ লাখ মুসলমানের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ছড়িয়েছে। প্রচারপর্বে তিনি নিয়মিত মসজিদ পরিদর্শন করেছেন এবং ইসলাম ধর্ম ও নিজের বিশ্বাসকে তুলে ধরেছেন।

প্রচারণায় তিনি একবার বলেছিলেন, পাবলিক স্পেসে একজন মুসলিম হিসেবে দাঁড়ানো মানেই আমাদের মাঝে যেটুকু নিরাপত্তা আছে তা ত্যাগ করা।

ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে তিনি বরাবরই সরব। ২০২৩ সালে মামদানি এমন একটি বিল প্রস্তাব করেন, যার মাধ্যমে ইসরায়েলি বসতিতে সম্পৃক্ত নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক কিছু চ্যারিটিকে কর-ছাড় সুবিধা বাতিল করার দাবি জানানো হয়, যদিও রাজ্য অ্যাসেম্বলির নেতৃত্ব একে বাতিল করে।

তিনি গাজার ঘটনাবলীতে ইসরায়েলের ভূমিকার কড়া সমালোচক এবং বিডিএস (বয়কট,ডিভেস্টমেন্ট, সেংশনস) আন্দোলনের সমর্থক। এমনকি তিনি বলেছেন, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর গ্রেপ্তার হওয়া উচিত।

তবে এইসব অবস্থানের মাঝেও মামদানি পরিষ্কার করেছেন নিউ ইয়র্কে কোনো ধরনের ইহুদিবিদ্বেষের স্থান নেই। তিনি বলেছেন, নির্বাচিত হলে ঘৃণাজনিত অপরাধ প্রতিরোধে আরও বাজেট বরাদ্দ করবেন। তার বক্তব্যে বারবার উঠে এসেছে, জায়নবাদের সমালোচনা মানেই ইহুদিবিদ্বেষ নয়।

নির্বাচনী প্রচারে এ বিষয়গুলো একটি স্পষ্ট বিভাজনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, বিশেষ করে শেষ সময়ে যখন একটি পডকাস্টে তিনি "গ্লোবালাইজ দ্য ইনতিফাদা" স্লোগান সম্পর্কে সরাসরি কোনো আপত্তি জানাননি বা একে অস্বস্তিকর বলেননি। এই স্লোগানটিকে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে দেখা হলেও অনেক ইহুদি ভোটার একে সহিংসতার ডাক বলে বিবেচনা করেন।

এই বিতর্ক সত্ত্বেও মামদানির সমর্থন বেড়েছে মূলত শ্রমজীবী, অভিবাসী এবং তরুণ ভোটারদের কাছ থেকে, যারা নিউ ইয়র্ক সিটির সামাজিক ন্যায় ও ব্যবহুল জীবনব্যবস্থার জন্য পরিবর্তন চায়।

নিউ ইয়র্ক এখন তাকিয়ে আছে সম্ভাব্য এক ইতিহাসের দিকে, যেখানে একজন তরুণ মুসলিম, অভিবাসীবংশোদ্ভূত রাজনীতিক, দেশের অন্যতম শহরের নেতৃত্বে আসতে পারেন।

সূত্র: নিউ ইয়র্ক টাইমস 

এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।