ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে ইতিহাসের অন্যতম সাহসী মানবিক মিশন গ্লোবাল সমুদ ফ্লোটিলা। ৪৪টি জাহাজের এই বহরে আছেন শত শত আন্তর্জাতিক কর্মী।
বুধবার (১ অক্টোবর) আয়োজকরা নিশ্চিত করেছেন, বহরটি এখন মিশরের উত্তর উপকূল অতিক্রম করছে। গন্তব্য থেকে তারা মাত্র ১২১ নটিক্যাল মাইল (প্রায় ২২৫ কিলোমিটার) দূরে অবস্থান করছে। মানবিক সহায়তা ও আন্তর্জাতিক কর্মীদের বহন করা এই বহরকে আটকাতে ইসরায়েলি নৌবাহিনী প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কেননা, দখলদাররা আগেই জানিয়েছে, তারা গ্লোবাল সমুদ ফ্লোটিলাকে যেকোনো মূল্যে আটকাবে।
ফ্লোটিলার মাঘরেব বহরের মুখপাত্র ওয়ায়েল নাওয়ার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলেন, আমরা গাজার আরও কাছে পৌঁছে গেছি। আগের ফ্লোটিলাগুলোয় যেখানে হামলা হয়েছিল, আমরা সেই এলাকায় ঢুকতে যাচ্ছি। আমাদের জাহাজের ওপর ড্রোনের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে, ইন্টারনেট ও রেডিও জ্যামিংও বাড়ছে। আজ রাতে বা আগামীকাল যেকোনো সময় হতে আমাদের আটকে দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হতে পারে।
তুর্কি কর্মী মুহাম্মদ সালিহ জানিয়েছেন, ফ্লোটিলা থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে একটি ইসরায়েলি নৌযান শনাক্ত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর খবর, দখলদার বাহিনী তাদের শায়েতেত ১৩ নামে নৌ-কমান্ডো ইউনিট মোতায়েনের প্রস্তুতি নিয়েছে। ইসরায়েলি সেনারা বহর দখল নিতে ‘ন্যূনতম ক্ষতি’ করা হবে বলে জানিয়েছে। তবে আগের ফ্লোটিলা যেরকম হামলা হয়েছে, তাতে ইসরায়েলিদের এমন দাবি মিথ্যা বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।
গ্লোবাল সমুদ ফ্লোটিলার আয়োজকরা এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, তারা আশঙ্কা করছেন দখলদার বাহিনী তাদের ওপরেও যুদ্ধাপরাধ চালাবে। কিন্তু তারা পিছিয়ে যাবেন না।
এর আগে অবশ্য মানবিক এ বহর হামলার শিকার হয়। গত ২৪ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক জলসীমায় তাদের ওপর একের পর এক ড্রোন হামলা চালানো হয়। ১৩ দফা বিস্ফোরণ, ফ্ল্যাশব্যাং, রাসায়নিক গুঁড়া ও সিগন্যাল জ্যামিং করে বহরে থাকা স্বেচ্ছাসেবীদের ভয় দেখানো হয়েছে। তিউনিসিয়ার কাছে একই ধরনের আক্রমণ হয়েছে। আগামী ১ অক্টোবর বহরে যোগ দেবে বিশেষ একটি জাহাজ, যেখানে থাকবেন শতাধিক সাংবাদিক ও চিকিৎসক।
এদিকে গ্লোবাল সমুদ ফ্লোটিলার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্পেন তাদের একটি নৌযান পাঠিয়েছে। ইতালি দুটি যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছিল। তবে বুধবার মধ্যরাত থেকে তারা আর সহায়তা করবে না। ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলছেন, বহরটির উচিৎ থেমে যাওয়া। এর কারণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর এ কথার কারণে ইতালীয় নৌ-বহর ফ্লোটিলার সুরক্ষা থেকে সরে যাচ্ছে।
তবে, ইতালির প্রতিরক্ষামন্ত্রী গুইদো ক্রোসেত্তোও জানিয়েছেন, ফ্লোটিলাকে খোলা সমুদ্রে আটকানো হতে পারে এবং অংশগ্রহণকারীদের গ্রেপ্তার করা হতে পারে। তিনি বলেন, মানবিক বহরের ওপর হামলা আমাদের সহ্য হবে না। আমরা আমাদের নাগরিকদের রক্ষায় দায়বদ্ধ।
ফ্লোটিলা সদস্যদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পোপ লিও। ভ্যাটিকান থেকে বের হওয়ার সময় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, সব দিক থেকেই প্রার্থনা করা হচ্ছে, যেন সহিংসতা না ঘটে, মানুষকে যেন সম্মান করা হয়। এটিই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
সূত্র: গার্ডিয়ান, আনাদোলু এজেন্সি, আল জাজিরা
এমজে