ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

অর্থনৈতিক সংকটের মুখে সৌদি আরব

রাজিউল হাসান, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২২০ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১৫
অর্থনৈতিক সংকটের মুখে সৌদি আরব সালমান বিন আব্দুলআজিজ আল সৌদ

ঢাকা: সাম্প্রতিক সময়ে অন্যতম বড় খবর, ২০১৫ সালের শেষ নাগাদ ঋণপত্র বিক্রি থেকে ২৭ বিলিয়ন ডলারেরও (২ লাখ ১০ হাজার ২২৪ কোটি টাকা) বেশি আয় করতে চায় সৌদি আরব। সমালোচকরা বলছেন, এমন পরিকল্পনা দেশটির অর্থনৈতিক দৈন্যদশার চিত্রই ফুটিয়ে তুলেছে।

সৌদি সরকারের উচ্চাভিলাষকেই অর্থনীতির এমন ধসের কারণ হিসেবে দেখছেন তারা।

মধ্যপ্রাচ্য সবসময়ই বিশ্ব রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ একটি অঞ্চল। আর এই অঞ্চলে বর্তমানে নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে রয়েছে সৌদি আরব, ইরান ও ইসরায়েল। তবে এতোদিন এ প্রতিযোগিতায় বেশ পিছিয়ে ছিলো ইরান। কিন্তু পরমাণু চুক্তির ফলে দেশটির ওপর থেকে আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। এরই মধ্যে তেহরান তার বাৎসরিক অপরিশোধিত তেল উৎপাদন দ্বিগুণে উন্নীত করার ঘোষণা দিয়েছে। এর ফলে একদিকে তেলের বাজারে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীর আর্বিভাব, অন্যদিকে ক্রমবর্ধমান মার্কিন শেল তেলের বাজার সৌদি আরবকে চিন্তিত করে তুলেছে।

এদিকে, সৌদি আরবের অর্থনীতির ৯০ শতাংশের জোগান আসে তেল রপ্তানির মাধ্যমে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানের ভয়ে ও মধ্যপ্রাচ্যের নেতৃত্বে শীর্ষে থাকার তাগিদে দেশটি ক্রমাগত সামরিক অস্ত্রের আমদানি করে চলেছে। সেই সঙ্গে বাড়াচ্ছে সামরিক জনবল। ক্ষমতা প্রদর্শনে ইয়েমেনে পরিচালনা করছে অভিযান। তারওপর নতুন শক্তিরূপে দেখা দেওয়া জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) মোকাবেলায়ও দেশটিকে জাতীয় নিরাপত্তায় ব্যয় বাড়াতে হয়েছে।

সৌদি আরবের অভ্যন্তরের চিত্র আরও ভয়াবহ। দেশের ভেতরে বর্তমানে সরকারের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথা বেকার সমস্যা। এক হিসাবে জানা যায়, দেশটিতে ১৬ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের মধ্যে বেকারত্বের হার ২৯ শতাংশ। তাই বলে সেখানে কর্মসংস্থানের অভাব নেই। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) ‘ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুক’-এর তথ্য অনুযায়ী, সৌদি আরবে ৬০ লাখেরও বেশি বিদেশি শ্রমিক বর্তমানে কর্মরত।

বিশ্লেষকরা শিক্ষায় অনগ্রসরতা ও পর্যাপ্ত প্রযুক্তিজ্ঞানের অভাবকে দেশটির তরুণ জনগোষ্ঠীর এই পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন। সামাজিক অস্থিরতার আশঙ্কায় এই অদক্ষ জনগোষ্ঠীকে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা করছে রিয়াদ। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, সমস্যার মূলে নজর না দিয়ে হঠাৎ এমন উদ্যোগ খুব একটা ভালো ফল বয়ে আনবে না দেশটির জন্য।

এদিকে, সৌদি আরবে কোনো আয়কর ব্যবস্থা না থাকায় ও পেট্রোলের দাম অত্যন্ত কম হওয়ায় অভ্যন্তরীণ আয়ও খুব একটা বেশি নয়। তারওপর এই বিপুল সংখ্যক কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সরকারের ব্যয় বেড়ে যাবে অনেক।

আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবে দেশটি চলতি বছর ২০ শতাংশ বাজেট ঘাটতির মুখে পড়বে।

এদিকে, মার্কিন সস্তা শেল তেল সৌদি আরবের তেল বাণিজ্যকে চ্যালেঞ্জ করে বসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই প্রতিযোগিতায় জয়ী হতে দেশটিকে অপরিশোধিত তেলের দাম অবশ্যই কম রাখতে হবে বলে বিশ্লেষকদের মত। কিন্তু  বর্তমানে সৌদি আরবের অর্থনীতি এমন এক অবস্থানে দাঁড়িয়ে রয়েছে যে, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ১০৬ ডলার (৮, ২৫০ টাকা প্রায়) করে হলে তার জিডিপিতে কোনো ঘাটতি থাকবে না। কিন্তু বর্তমানে ব্যারেল প্রতি অপরিশোধিত তেলের দাম ৫০ ডলারের (৩,৮০০ টাকা) কিছু কম বা বেশি করে থাকছে।

সমালোচকরা বলছেন, বিপদ থেকে বাঁচতেই সৌদি আরব ঋণপত্রের দিকে নজর দিয়েছে। এ উদ্দেশ্যে বছরের অবশিষ্ট সময়ে প্রতি মাসে পাঁচ, সাত ও দশ বছর মেয়াদি ৫.৩ বিলিয়ন ডলার (৪১ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা) করে ঋণপত্র ছাড়ার পরিকল্পনা করছে রিয়াদ।

প্রসঙ্গত, ঋণপত্র হচ্ছে নির্দিষ্ট সময়ে জন্য এক ধরনের বিনিয়োগ ব্যবস্থা, যেখানে নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে ঋণদাতাকে কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষর করা দলিল হস্তান্তর করা হয়। বিভিন্নখাতে খরচের অর্থ জোগানে কোনো দেশের সরকার বা কোনো এলাকার স্থানীয় প্রশাসন এ ঋণপত্র ছেড়ে থাকে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও এটি ছাড়া হয়ে থাকে। বিভিন্ন মেয়াদের হতে পারে এ ঋণপত্র। এই ব্যবস্থায় নির্দিষ্ট সময় পর মুনাফাসহ ঋণদাতাকে তার অর্থ ফেরত দেয় কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশ সময়: ০২২১ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১৫/আপডেট: ১৬০০ ঘণ্টা
আরএইচ/জেডএম


বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।