ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

এবার সাগরে পারমাণবিক পোসেইডন ড্রোন নামাচ্ছে রাশিয়া

টিটু আহমেদ, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৯
এবার সাগরে পারমাণবিক পোসেইডন ড্রোন নামাচ্ছে রাশিয়া সাগরে পারমাণবিক অস্ত্রবাহী ড্রোন, ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: অস্ত্রের দাপট নব উদ্যমে এগিয়ে নিচ্ছে বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি রাশিয়া। দেশটি তাদের অস্ত্রাগারে সবচেয়ে শক্তিশালী অত্যাধুনিক প্রযুক্তির হাইপারসনিক কিনঝাল ক্ষেপণাস্ত্র যোগ করেই থেমে থাকেনি: এবার পোসেইডন নামের এক পারমাণবিক অস্ত্রবাহী ড্রোন নামাচ্ছে সাগরে। একটি দুটি নয়, বরং গুনে গুনে ৩২টি ড্রোন নামাচ্ছে পুতিনের দেশ।

‘তোপোলেভ টিইউ-২২২এম৩ বোমা’ অত্যধিক দ্রুতগতির সঙ্গে বহনে সক্ষম কিনঝালে আকাশপথে পারমাণবিক হামলায় অন্যদের থেকে অনেক গুণ শক্ত অবস্থানে যাওয়াসহ স্থলপথেও অনেক এগিয়ে গেছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তবে জলপথেও পিছিয়ে ছিলেন না তিনি।

তারপরও ভয়াবহ যুদ্ধের জন্য নৌবাহিনীকে দিয়ে নামাতে চাইছেন ৩২টি পারমাণবিক পোসেইডন ড্রোন। আর বড় ধরনের এই অস্ত্রের মহড়াটি শুরু হলে প্রধান পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রসহ গোটা বিশ্বের মনোযোগের কেন্দ্র হয়ে উঠবে। এই মহড়া যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্রদের জন্য হয়ে উঠতে পারে বড় মাথাব্যথার কারণ।

শনিবার (১২ জানুয়ারি) রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, এবার সাগরে প্রতিরক্ষাব্যুহ গড়ে তুলবে রুশ নৌবাহিনী। এজন্য ৩০টিরও বেশি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পারমাণবিক পোসেইডন ড্রোন নিয়ে ঘাঁটি বাঁধতে যাচ্ছে তারা।

সংবাদমাধ্যম বলছে, পোসেইডন বহনকারী দুইটি সাবমেরিন দেশটির নৌবাহিনীর উত্তরাঞ্চলীয় যুদ্ধজাহাজের বহর বা নর্দার্ন ফ্লিট থেকে পুরোদমে কাজ চালাতে সক্ষম হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া আরও দুইটি সাবমেরিন প্রশান্ত মহাসাগরীয় ফ্লিট বা প্যাসিফিক ফ্লিটের সঙ্গে যোগ দেবে।

সূত্র বলছে, বড় ধরনের প্রতিটি সাবমেরিনে সর্বোচ্চ আটটি করে পোসেইডন থাকবে। এ হিসেবে চারটি সাবমেরিনে ভাগ হবে ৩২টি পোসেইডন। আর যুদ্ধের জন্য যেদিকে যাওয়া হবে, সেদিকেই অন্তত একটি সাবমেরিন বা আটটি পোসেইডনের হামলা হবে। প্রয়োজনে ১৬টি পোসেইডন ড্রোন দুই সাবমেরিনে একসঙ্গে কাজ করতে পারবে।

জানা গেছে, দেশটির সেভমাস শিপইয়ার্ডে বিশেষ উদ্দেশে বানানো হয়েছে পারমাণবিক সক্ষমতাসম্পন্ন সাবমেরিন ‘খাবারোভোস্ক’। আর এই খাবারোভোস্ক এখন বহন করবে অর্গানিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ও পাশাপাশি পারমাণবিক সক্ষমতাসম্পন্ন আটটি ড্রোন। কেননা, চারটি সাবমেরিনের মধ্যে খাবারোভোস্ক একটি।

এছাড়া বিশেষ উদ্দেশে বানানো কয়েক সাবমেরিন এবং রুশ নৌবাহিনীর ক্রুজার অপারেশনে ব্যবহৃত ৯৪৯এ প্রকল্পের পারমাণবিক ক্ষমতাসম্পন্ন ডুবোজাহাজ ‘যথাযথ আপগ্রেডের পর’ পোসেইডন দিয়ে নামানো হবে।

এর আগে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পোসেইডনের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছিল এবং তাতে তারা  বলেছিল, সমুদ্রে ৩০০ ফুটব্যাপী প্রচণ্ড সৃষ্টিকারী রাশিয়ার ‘ডুমস্ডে মেশিন’ বা মহাপ্রলয়-যন্ত্র। ‌এই প্রলয়ঙ্করী ড্রোনটির কেতাবি নাম পোসেইডন। এটি সম্ভবত এখন পর্যন্ত তৈরি করা সবচেয়ে শক্তিশালী পারমাণবিক অস্ত্র।

গত বছেরর ১ মার্চ রাশিয়ার পার্লামেন্টে জাতির উদ্দেশে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন উল্লেখ করেছিলেন, প্রথমবারের মতো পারমাণবিক সক্ষমতাসম্পন্ন ডুবোজাহাজ (নাম দেওয়া হয়নি তখন) তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে রাশিয়া। যা গতানুগতিক এবং পারমাণবিক ওয়ারহেডস উভয়ই বহনে সক্ষম। এছাড়া এটি শত্রুর অবকাঠামো সুবিধা, বিমানঘাঁটি, উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকাসহ অন্যান্য টার্গেট মুহূর্তেই ধ্বংস করে দিতে সক্ষম।

এছাড়া দেশটির ফেডেরাল অ্যাসেম্বলিতে ভাষণে পুতিন বলেছিলেন, ডুবোজাহাজটি অত্যধিক গতির সঙ্গে গভীর থেকে গভীরতম দূরত্ব অতিক্রম করতে সক্ষম হবে।

এদিকে, রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, পোসেইডন ড্রোন তাদের অস্ত্রাগারে যোগ হবে। যেগুলো পারমাণিক ক্ষমতাসম্পন্ন সাবমেরিন দিয়ে চালানো হবে এবং তথাকথিত মহাসাগরীয় বহুমুখী পদ্ধতি বাস্তবায়ন করবে। এছাড়া ওয়েবসাইটে ভিডিও প্রকাশ করে ভোটের মাধ্যমে এই ড্রোনের নাম নির্ধারণ করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্র এও জানিয়েছে, রাশিয়ার অস্ত্রাগারে নামা পোসেইডনগুলোর প্রতিটি সর্বোচ্চ দুই মেগাটন ক্ষমতার পারমাণবিক ওয়ারহেডসহ বিভিন্ন যুদ্ধসামগ্রী বহন করে শত্রু নৌবাহিনীর ভিত্তিকে ধ্বংস করে দিতে সক্ষম।

তাছাড়া ভিডিওটি দেখে এর ওপর ভিত্তি করে প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক এইচআই সাটন ব্যাখ্যা করেছিলেন, একেকটি পোসেইডন প্রায় দুই মিটার (৬.৫ ফুট) প্রশস্ত এবং ২০ মিটার (৬৬ ফুট) দীর্ঘ হতে পারে।

তবে তখন ওই ভিডিটি দেখে এর বৈধতা ও বাস্তবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন মার্কিন পরমাণু অস্ত্র বিশেষজ্ঞরা। তারা মন্তব্য করেছিলেন, এমন কোনো কিছু আদৌ আছে কী-না, এ নিয়ে তারা সন্দিহান।

কিন্তু আমেরিকান বিজ্ঞানীদের ফেডারেশন নিউক্লিয়ার ইনফরমেশন প্রজেক্টের ডিরেক্টর হ্যান্স ক্রিসটেন্স বলেছিলেন,  এই মারণাস্ত্রটি এককথায় ভয়ঙ্কর এবং প্রাণঘাতী একটি পারমাণবিক অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে।

অপরদিকে, ২০১৮ সালের মার্চে সর্বপ্রথম বিশ্বের সর্বাধুনিক হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র কিনঝালের সফল পরীক্ষা চালায় রাশিয়া। তখন পুতিন বলেছিলেন, হাইপারসনিক ক্ষেপাণাস্ত্র প্রতিযোগিতায় রাশিয়া অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে ১৫ বছর এগিয়ে থাকবে। সেইসঙ্গে রাশিয়া এটি নিয়ে ১০টি অত্যাধুনিক মরণাস্ত্র তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। তার মধ্যে কিনঝালটি ‘তোপোলেভ টিইউ-২২২এম৩ বোম্বার’ বহন করে অত্যধিক দ্রুতগতির সঙ্গে। যা বিশ্বের ইতিহাসে সর্বাধিক দ্রুতগতির ক্ষেপণাস্ত্র। এটির গতি শব্দের চেয়ে আট গুণ বেশি। ক্ষেপণাস্ত্রটি মুহূর্তেই গতি পাল্টে প্রতিপক্ষের রাডারের চোখ ফাঁকি দিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।

কেনো রাশিয়া অস্ত্রক্ষেত্রে এভাবে অত্যধুনিক প্রযুক্তির দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে? কী ধ্বংসযজ্ঞের উদ্দেশ্য তাদের? বিষয়টি পুরো স্পষ্ট নয়, তবু ভয়াবহ কোনো যুদ্ধতো হবেই, এমন ধারণা-প্রশ্ন নিয়ে বলতে পারেন গোটা বিশ্ব এখন উদ্বিগ্ন। এ থেকে বাদ পড়ার কথা নয় ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেশও।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৯
টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।