সর্বশেষ ইরান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি ভেঙে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়ায় তেহরান-ওয়াশিংটন উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে।
এই উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে উদ্বেগ বাড়ছে দু’দেশের সাধারণ নাগরিকদের।
সম্প্রতি কানাডার সংবাদমাধ্যম সিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কথা বলছিলেন তুলসি। ডেমোক্রেটিক পার্টির এ রাজনীতিক হাওয়াইয়ের একটি আসন থেকে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের সদস্য। তিনি রিপালিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমালোচনা করে বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে যেনো ইরানের সঙ্গে যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তেই নিয়ে যাচ্ছেন।
ইরানকে পরমাণু বোমা তৈরি থেকে বিরত রাখার লক্ষ্যে ২০১৫ সালে ছয় পরাশক্তি (যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি) মিলে তেহরানের সঙ্গে চুক্তি করে। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর সেই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করেন তিনি। একইসঙ্গে আগের মতোই তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখেন।
ওই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে আসাটাও ট্রাম্পের ভুল সিদ্ধান্ত বলে উল্লেখ করেন তুলসি। তিনি বলেন, যদিও সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়ে করা এ চুক্তির শর্ত আরও কঠিন হওয়া প্রয়োজন ছিলো। তবে চুক্তি না থাকার চেয়ে কম শক্তিশালী চুক্তিই ভালো। এ চুক্তিতে কিছু ভুল ছিলো, তা ঠিক। তবে অন্ততপক্ষে দু’দেশের মধ্যে যুদ্ধ ঠেকাতে কাজ করতো। এখন ট্রাম্প প্রশাসন যে ভয়ঙ্কর কাজটি করছে তা হলো- যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানের সঙ্গে যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের এ মনোনয়নপ্রত্যাশী বলেন, সম্প্রতি ইরানের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার সময় ওই অঞ্চলে মার্কিন সেনা পাঠিয়েছেন ট্রাম্প। ফলে দু’দেশের উত্তেজনা আরও বেড়েছে। কারণ অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন যুদ্ধেরই ইঙ্গিত দেয়।
ইরাক যুদ্ধের সময় মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধাঞ্চলে হাওয়াই সেনাবাহিনীর মেডিক্যাল টিমের সঙ্গে কাজ করেছেন তুলসি। এতো কাছ থেকে যুদ্ধ দেখার অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি বলেন, যদি ইরান এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যুদ্ধ বাঁধে, তাহলে সেটি ইরাক যুদ্ধের চেয়েও আরও বিপর্যয়কর হবে।
ইরানের দক্ষিণে ওমান উপসাগরে দুইবার একাধিক তেলবাহী জাহাজে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে তেহরান-ওয়াশিংটনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ব্যাপক উত্তেজনা চলছিল। জাহাজে হামলার ঘটনায় দুইবারই ইরানকে দোষারোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আর প্রতিবারই ইরান তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
এরমধ্যে গত ২০ জুন নিজেদের ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশের দায়ে মার্কিন একটি গোয়েন্দা ড্রোন ভূপাতিত করে ইরান। প্রথমে ড্রোন ভূপাতিত হওয়ার বিষয়টি স্বীকার না করলেও পরে এক বিবৃতিতে তা স্বীকার করে ড্রোনটি আন্তর্জাতিক সীমারেখার মধ্যেই ছিলো বলে উল্টো দাবি করে যুক্তরাষ্ট্র। আর এরপরই দু’দেশের মধ্যকার চলমান উত্তেজনা আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
ড্রোনটি ভূপাতিত করার জের ধরে ইরানে হামলার অনুমোদন দিয়েও শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন বলে দাবি করেন ট্রাম্প। তবে জুনের শেষের দিকে ইরানের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়ে ট্রাম্প ওই অঞ্চলে যুদ্ধবিমানবাহী রণতরী ইউএসএস আব্রাহাম লিংকন, অতিরিক্ত সৈন্য ও বি-৫২ যুদ্ধবিমান পাঠান।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৭ ঘণ্টা, জুলাই ০৭, ২০১৯
এসএ/এইচএ/