২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ভয়ানক নির্যাতনের মুখে পড়ে রাখাইন থেকে সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেন সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলমান। যে সহিংসতাকে জাতিসংঘ মিয়ানমারের ‘গণহত্যা অভিপ্রায়’ বলে বর্ণনা করে আন্তার্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে।
কিন্তু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে গবেষণা করে অস্ট্রেলিয়ান স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইনস্টিটিউট (এএসপিআই) বলছে, মিয়ানমার রাখাইনে নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টির বিষয়টি গুরুত্ব দেয়নি। তারা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে পদক্ষেপ নিচ্ছে কি-না, এমন কিছু প্রশ্ন উঠেছে স্যাটেলাইটের ছবি দেখে। তারা বিষয়টিকে ‘অতি সামান্য’ গুরুত্ব দিয়েছে। একইসঙ্গে ছবিতে এও দেখা যাচ্ছে, নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টির বদলে এখনও ধ্বংস চলছে রাজ্যটির গ্রামগুলোতে।
মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) এএসপিআইয়ের প্রকাশিত রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, মিয়ানমার বারবার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়ন করছে না। কেননা, স্যাটেলাইটের ছবি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, রোহিঙ্গাদের পুরানো অশ্রয়স্থলে কোনো নির্মাণ কাজ হয়নি। বরং কয়েকটি এলাকায় রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর ভাঙা অব্যাহত।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপদ ও সম্মানজনকভাবে রাখাইনে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ব্যাপক প্রস্তুতির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত রাখাইনে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন এলাকার স্যাটেলাইটের ছবি বিশ্লেষণ করে প্রায় সাত মাসব্যাপীর গবেষণাটি করেছে এএসপিআই। ২০১৭ সালের আগস্টের সহিংসতায় পুড়ে গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ও ধ্বংস হয়েছে- জাতিসংঘের অপারেশনাল স্যাটেলাইট অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামের (ইউএনওস্যাট) শনাক্ত করা এমন ৩৯২টি রোহিঙ্গা আবাসস্থল নিয়ে এ গবেষণা করা হয়েছে। ফলাফলে দেখা গেছে, এসব আবাসস্থলের মধ্যে ৩২০টির বেশিতে পুনরায় মেরামতের কোনো চিহ্নই নেই।
এছাড়া ইউএনওস্যাটের তথ্যের পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ান এ সংস্থাটিও অন্তত ৫৮টি আবাসস্থল এলাকা শনাক্ত করেছে। যেগুলো ২০১৮ সালে নতুন করে ধ্বংস করা হয়। একইসঙ্গে ২০১৯ সালেও কিছু আবাসস্থল ধ্বংস করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি।
এএসপিআইয়ের রিপোর্টটির লেখক নাথান রোসার বলেছেন, আমাদের স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লেষণে পাওয়া গেছে, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে রাখাইনের কিছু এলাকা ধ্বংস করা হয়েছে। এমনকি কিছু এলাকায় এখনও ধ্বংস অব্যাহত আছে বলে স্পষ্ট তথ্য উঠে এসেছে। এ কারণে মিয়ানমার নিজেদের রোহিঙ্গা মুসলমানদের ফিরিয়ে নেবে কি-না, এমনকি নেওয়ার ব্যাপারে তাদের কোনো ইচ্ছা আছে কি-না, সে প্রশ্ন উঠেছে এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে।
রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তি হয়। একইবছরের ৬ জুন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমার ও জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর মধ্যেও আরেকটি সমঝোতা চুক্তি হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন চলে গেলেও চুক্তির আওতায় এখনও কোনো রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফিরেননি। একইসঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে এটিও বলা হচ্ছে যে- রাখাইনে রোহিঙ্গাদের নিরাপদে বসবাসের মতো পরিবেশ নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৫, ২০১৯
টিএ