ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

করোনা সংক্রমণের এক বছর, মৃত্যু ১৩ লক্ষাধিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০২০
করোনা সংক্রমণের এক বছর, মৃত্যু ১৩ লক্ষাধিক ছবি: সংগৃহীত

২০১৯ সালের ১৭ নভেম্বর চিনের হুবেই প্রদেশের উহানে শুরু হয় করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ। যা দ্রুতই বৈশ্বিক মহামারিতে রূপ নিয়ে গত এক বছর সারা বিশ্বকে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে।

এক বছর আগে ওইদিন আক্রান্ত ছিল একজন। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে সেই আক্রান্তের সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৫ কোটিতে। মৃত্যুর সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১৩ লাখ।  

মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) এ মহামারির এক বছর পূর্ণ হলো।

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মিডিয়ার তথ্যমতে, ওই দিন ৫৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তির দেহে প্রথম করোনা শনাক্ত হয়। ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে সেই সংখ্যাটা ২৭ জনে পৌঁছায়। ২০ ডিসেম্বরে সংখ্যাটা দাঁড়ায় ৬০ জনে। চলতি বছর অর্থাৎ ২০২০ সালের ১ জানুয়ারিতে চিনে আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছায় ৩৮১-তে। উহানকে করোনার হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করার পরই ২৩ জানুয়ারি সেখানে লকডাউন জারি করা হয়।

ভয়াবহ এই সংক্রমণ ছড়িয়েছে, এই ইঙ্গিতটা আগেই দিয়েছিলেন লি ওয়েনলিয়াং নামে চিনেরই এক চিকিৎসক। অভিযোগ, তাতে কর্ণপাত করেনি প্রশাসন। উহানে যখন সংক্রমণ প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল, সঙ্গে মৃত্যুও, চিন প্রশাসন তখন ঘোষণা করে নতুন একটি ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়েছে। ততদিনে উহানে মৃত্যুমিছিল শুরু হয়ে গিয়েছে।

চিনের অন্য প্রদেশগুলো থেকেও সংক্রমণের খবর আসতে শুরু করে। দিশেহারা চিন তখন একে একে বিভিন্ন প্রদেশে লকডাউনের পথে নামে। কিন্তু তাতেও সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব হয়নি। বছরের শুরুতেই করোনা সংক্রমণের শীর্ষে পৌঁছে যায় চিন। বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তেও থাবা বসাতে শুরু করে এই ভাইরাস। ১০ ফেব্রুয়ারিতে গোটা বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যাটা পৌঁছায় ৪২ হাজার ৮০০। গত ০১ মার্চের মধ্যে এক লাখ ছাড়িয়ে গিয়েছিল সংক্রমণ। দৈনিক আক্রান্তও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছিল। পাল্লা দিয়ে বাড়ছিল মৃত্যুর সংখ্যাও। ২৬ মার্চ ৫ লাখ ছাড়িয়ে যায় আক্রান্তের সংখ্যা। ততদিন দৈনিক আক্রান্ত ৬০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। প্রতিদিন মৃত্যু হচ্ছিল প্রায় ৩ হাজার মানুষের।

একে একে ইউরোপ, এশিয়া এবং আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ে সংক্রমণ। ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, ইংল্যান্ড, স্পেন, রশিয়া করোনার হটস্পট হয়ে ওঠে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) করোনাকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা করে। তার পর যত সময় গড়িয়েছে সংক্রমণ তত তীব্র আকার ধারণ করেছে।  

বছরের মাঝামাঝি সময়ে দেখা যায়, যে চিন থেকে করোনার সূত্রপাত, সেই চিনই মহামারিকে ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছে। তত দিনে ইউরোপ এবং আমেরিকায় করোনার পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়। ভারত, বাংলাদেশ, ইরান, মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশসহ এশিয়ার অন্য দেশগুলোতেও সংক্রমণ চরম পর্যায়ে পৌঁছায়। একপর্যায়ে আমেরিকা সংক্রমণ এবং মৃত্যুর নিরিখে বিশ্বে শীর্ষ স্থানে পৌঁছে যায়। এখনও এই শীর্ষস্থানেই রয়েছে আমেরিকা। এর পর সংক্রমণের দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে ভারত। ভারতের পরেই রয়েছে ব্রাজিল, ফ্রান্স এবং রাশিয়া। লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, যে চিন থেকেই এই মহামারি শুরু, সেই চিন সংক্রমণ বর্তমানে শীর্ষস্থান থেকে ৬০ নম্বর স্থানে নেমে এসেছে। মৃত্যুর দিক থেকে ৩৬তম স্থানে রয়েছে দেশটি।

এই করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর পাশাপাশি গোটা বিশ্বের অর্থনীতিকে একেবারে বিপর্যয়ের মধ্যে নিয়ে ফেলে দিয়েছে। মানুষের স্বাভাবিক জীবন-যাপনের ওপর প্রভাব পড়েছে।  

অর্থনীতির পাশাপাশি শিক্ষা, কর্মসংস্থান সব কিছুই এলোমেলো করে দিয়েছে করোনা। কোটি কোটি মানুষ বেকারত্ব বরণ করেছে। থমকে দাঁড়িয়েছে শিক্ষা ব্যবস্থা। গোটা বিশ্ব করোনার বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছে। করোনার কবল থেকে মুক্তির জন্য বিভিন্ন দেশে টিকা তৈরির কাজও চলছে। কিন্তু কবে এই মহামারি থেকে মুক্তি মিলবে, এখন সেদিকেই তাকিয়ে গোটা বিশ্ব। এর মধ্যেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গ আঘাত করেছে এবং সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে চলেছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০২০
এসকে/এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।