পশ্চিম এশিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর দুবাইয়ে গড়ে তোলা হয়েছে ‘মিউজিয়াম অব দ্য ফিউচার’নামের একটি জাদুঘর। একে বিশ্বের সুন্দরতম স্থাপত্য বলে অভিহিত করা হচ্ছে।
সাত তলা উপবৃত্তাকার ভবনটি ৩০ হাজার বর্গ মিটারজুড়ে বিস্তৃত ও ৭৭ মিটার উঁচু। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরে পৃথিবীর উচ্চতম ভবন বুর্জ খলিফার পাশেই এই নবনির্মিত ভবনটি।
রোবটের মাধ্যমে বিশেষভাবে তৈরি করা ১০২৪টি অংশ দিয়ে এই ভবনটি গঠিত। এই অংশগুলোর প্রতিটিই একেকটি স্বতন্ত্র শিল্পকলার নমুনা। উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে মূলত স্টেনলেস স্টিল। কিন্তু ইস্পাত ছাড়াও ব্যবহার করা হয়েছে চারটি স্তর নিয়ে গঠিত এমন একটি সংকর ধাতু, যা ১৬টিরও বেশি ধাপের মধ্য দিয়ে উৎপাদিত হয়।
নির্মাতারা জানান, নতুন জাদুঘরটি ‘ভবিষ্যতবাদী চিন্তাবিদ, উদ্ভাবক এবং জনসাধারণকে একত্রিত করার একটি প্রতিশ্রুতি’ স্বরূপ। এটি একই সঙ্গে বিজ্ঞান চেতনাকে লালন করে এবং ভবিষ্যতে পৃথিবীর চেহারা কেমন হতে পারে, তার পথ দেখায়।
দুবাই প্রশাসনের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এটি এমন একটি জাদুঘর, যা মানব সভ্যতার ভবিষ্যতের জন্য অনুপ্রেরণামূলক দৃষ্টিভঙ্গির একটি স্থায়ী প্রদর্শনী। তাদের আশা, এটি ভবিষ্যতে অনুপ্রেরণা, উদ্ভাবন ও মানব উন্নয়নের বাধা-বিপত্তিগুলোর সমাধান ও সুযোগগুলোর বিকাশের জন্য বিশ্বের অন্যতম প্রধান কেন্দ্রে রূপান্তরিত হবে।
এক জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রিসভা বিষয়ক মন্ত্রী এবং দুবাই ফিউচার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মহাম্মদ আল জেরজউই জানান, ‘মিউজিয়াম অফ দ্য ফিউচার’ কার্যত একটি ‘জীবন্ত জাদুঘর’। কারণ এটি ক্রমাগত অভিযোজিত এবং রূপান্তরিত হয়। ক্রমাগত পরিবর্তিত হয় এখানে আয়োজিত প্রদর্শনীগুলোও।
‘কিল্লা ডিজাইন’ নামের সংস্থার শন কিল্লা এই ভবনটির মুখ্য স্থপতি। বৃহৎ উপবৃত্তাকার এই ভবনটিকে দুবাইয়ের স্থাপত্য এবং সংস্কৃতির মূর্ত প্রতীক হিসেবে কল্পনা করা হচ্ছে। এটি আধুনিক কম্পিউটারকে ব্যবহার করে গড়া নকশা এবং প্রযুক্তির সর্বোচ্চ পর্যায়ের নিদর্শন।
ভবনের সম্মুখভাগটি তৈরি করতে সময় লেগেছে ১৮ মাসেরও বেশি। ১০২৪টি প্যানেল বেছে নেওয়ার কারণ হলো, এটি ১০২৪টি চরিত্র নিয়ে গঠিত এক কিলোবাইটকে নির্দেশ করে।
গোটা ভবনের আলোকবর্তিকার দৈর্ঘ্য প্রায় ১৪ কিলোমিটার। দুবাইয়ের শাসক শেখ মহাম্মদ বিন রশিদ আল মাখতুমের তিনটি উদ্ধৃতি এই ভবনের দেওয়ালে নকশার মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে।
উদ্ধৃতির একটিতে লেখা রয়েছে, ‘আমরা শত শত বছর বাঁচতে পারি না, তবে আমাদের সৃজনশীলতার সৃষ্টিগুলো আমাদের চলে যাওয়ার পরও থেকে যেতে পারে’।
জাদুঘরে রয়েছে ‘ফিউচার হিরোজ’ নামের একটি বিভাগ, যা তরুণ প্রজন্মের মনকে নিজেদের এবং চারপাশের বিশ্বকে নতুন করে আবিষ্কার করতে উৎসাহিত করবে।
সবার উপরে রয়েছে মহাকাশের থিমযুক্ত ‘ওএসএস হোপ এক্সপেরিয়েন্টাল ডিসপ্লে’। এখানে ২০৭১ সালে একটি বিশাল মহাকাশ স্টেশনের ভিতরের জীবন কেমন হতে পারে তা চিত্রিত হয়েছে। ‘ওএসএস হোপ’ আদপে ভবিষ্যতের একটি আশা জোগায় দর্শনার্থীদের মনে।
সূত্র: নিউ ইয়র্ক পোস্ট ও আনন্দবাজার
বাংলাদেশ সময়: ২০২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২২
জেএইচটি