ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

আল্লাহর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ার ইবাদত ইতিকাফ

মুফতি মুতিউর রহমান, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৭ ঘণ্টা, জুলাই ৮, ২০১৫
আল্লাহর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ার ইবাদত ইতিকাফ

মহান আল্লাহতায়ালার বিশেষ রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের বারিধারায় বিধৌত হয়ে পাপের পঙ্কিলতা থেকে পরিচ্ছন্ন ও শুদ্ধ হওয়ার মাস রমজান। পবিত্র রমজানের প্রতি দিবারাত্রিতে প্রতি প্রহরে পাপ থেকে আবিলতামুক্ত হওয়ার মহৎ ও মহা আয়োজন করে দিয়েছেন দয়াময় রাব্বুল আলামীন।

সে মহান লক্ষ্যের চূড়ান্ত স্তর নাজাত জাহান্নাম থেকে মুক্তি, যা হয়ে থাকে রমজানের শেষ দশকে বিশেষভাবে।

ইতিকাফ হচ্ছে সে লক্ষ্যে সফল হওয়ার সুশৃঙ্খল আয়োজন। রমজানের পবিত্রতম দিনগুলোতে পাপমুক্তি ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির মহা নেয়ামত অর্জিত হয় শেষ দশকের ইতিকাফের মাধ্যমে।

ইবনে কায়্যিম (রহ.) বলেন, ইতিকাফের উদ্দেশ্য হচ্ছে, মহান আল্লাহর সঙ্গে আত্মার সুসম্পর্ক গড়ে তোলা। সব ব্যস্ততামুক্ত হয়ে আল্লাহর ধ্যান মগ্ন হওয়া। পার্থিব সব ধরনের সংশ্রব ত্যাগ করে একমাত্র আল্লাহর সান্নিধ্যে এসে তার সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন। এখলাস, খাঁটি নিয়ত ও আন্তরিকতাপূর্ণ ইতিকাফ অবশ্যই সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত- এতে এতটুকু সন্দেহ নেই। কারণ, ইতিকাফে জগতের তাব‍ৎ মায়াজাল ছিন্ন করে নিজেকে মহান আল্লাহর হাতে সমর্পণ করতে হয়। একমাত্র তারই ধ্যানে মগ্ন হতে হয়। তার দুয়ারে পড়ে থাকতে হয়।

ইতিকাফের গুরুত্ব, তাত্পর্য ও ফজিলত অপরিসীম। ইতিকাফ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, আমি ইব্রাহীম ও ইসমাইলকে তাওয়াফকারী, ইতিকাফকারী ও রুকু-সিজদাকারীর জন্য আমার ঘর (বাইতুল্লাহ) পবিত্র রাখতে আদেশ করেছিলাম। -সূরা আল বাকারা : ১২৫

ইতিকাফের অশেষ সওয়াব ও ফজিলত সম্পর্কে হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে-  ইতিকাফকারী সব গোনাহ থেকে বেঁচে থাকে। সফল সত্কর্মশীল যত ধরনের সত্কর্ম করে থাকে, ইতিকাফকারীর জন্য সেসবের অনুরূপ সওয়াব লেখা হয়। (যদিও সে ইতিকাফের কারণে অনেক নেক কাজই করতে পারে না। )

ইতিকাফ অর্থ অবস্থান করা। সওয়াবের নিয়তে মসজিদে অবস্থান করাকে ইসলামের পরিভাষায় ইতিকাফ বলে। ইতিকাফ তিন প্রকার, ওয়াজিব, সুন্নত ও নফল। ইতিকাফের মানত করলে তা ওয়াজিব হয়। রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ সুন্নতে মুয়াক্কাদা আলাল কিফায়া। কিছু লোক আদায় করলে সবাই দায়মুক্ত হবে। যে কোনো সময় অল্প-অধিক যতটুকু সময়ের জন্যই হোক ইচ্ছেমত মসজিদে প্রবেশের সময় ইতিকাফের নিয়ত করলে সেটা নফল ইতিকাফ হয়ে থাকে। এর কোনো নির্ধারিত সময়কাল নেই। যে কোনো সময় মসজিদে প্রবেশকালে নফল ইতিকাফের নিয়ত করে নিলে মসজিদে অবস্থানের জন্য নফল ইতিকাফের সওয়াব পাওয়া যাবে।

হজরত মুহাম্মদ (সা.) সব সময়ই পবিত্র রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। ওফাত পর্যন্ত তিনি এ ইতিকাফ করে গেছেন। ওফাতের পর তার সহধর্মিণীরা ইতিকাফ করতেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, হজরত রাসূল (সা.) প্রতি রমজানেই দশ দিন ইতিকাফ করতেন। কিন্তু ওফাতের বছর তিনি বিশ দিন ইতিকাফ করেন।

রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফের একটি মহান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে শবেকদরের অনুসন্ধান। কেবল ২৭ রমজান রাতেই শবেকদর হওয়াটা সুনিশ্চিত নয়। শেষ দশকের বেজোড় পাঁচটি রাতে যে কোনোটিতেই শবেকদর হতে পারে। একজন মানুষ যতক্ষণ ইতিকাফে থাকেন ততক্ষণ তার পূর্ণ সময়টাই ইবাদত হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে। যারা ইতিকাফে থাকেন সাধারণত তারা ইবাদতের প্রতি অধিক মনোযোগীও হয়ে থাকেন। ফলে যে রাতেই শবেকদর হোক শেষ দশকে ইতিকাফকারীরা তার ফজিলত পেয়েই যান। শবেকদরের খোঁজেই হজরত রাসূল (সা.) ইতিকাফ করতেন বলে হাদিসে উল্লেখও পাওয়া যায়।

ইতিকাফের একটি বিশেষ উপকারিতা হচ্ছে- মসজিদে অবস্থানের ফলে সব গোনাহ থেকে আত্মরক্ষা করা। হাদিসেও রয়েছে যে, ইতিকাফকারী গোনাহ থেকে বিরত থাকে। ইতিকাফ যেন গোনাহ ও পাপ থেকে আত্মরক্ষার মজবুত বর্ম। পুরুষদের মতো মহিলারাও ইতিকাফ করতে পারেন। বাসায় বাড়িতে নামাজের নির্ধারিত স্থানই তাদের ইতিকাফস্থল। হজরত রাসূল (সা.)-এর সহধর্মিণীরা নিজ নিজ হুজরায় (কামরা) ইতিকাফ করতেন। রমজানে অধিক নেক আমল করা যত না গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, পাপকার্য থেকে বেঁচে থাকা তার চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর সে উদ্দেশ্য সফলে ইতিকাফ মুখ্য ভূমিকা রাখে। শবেকদর প্রাপ্তি রমজানের প্রভূত রহমত বরকত মাগফিরাত ও নাজাত এবং অশেষ সওয়াব লাভ এবং পাপ থেকে আত্মরক্ষার লক্ষ্যে হজরত রাসূল (সা.) সাহাবায়ে কেরামসহ যুগে যুগে পীর-আউলিয়া তাদের মুরিদ, ভক্ত অনুরক্ত সর্বোপরি পরহেজগার ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইতিকাফ করেছেন আশা ও আগ্রহ নিয়ে। অফুরান সওয়াব অবারিত রহমত লাভের সুবর্ণ সুযোগটি আমাদেরও কাজে লাগানো দরকার।

বাংলাদেশ সময়: ১২১৭ ঘন্টা, জুলাই ০৮, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।