ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

‘সূরা আনআমের আলোচ্য বিষয়’

অসার বিতর্ক, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের গালিগালাজ ও হত্যা নিষিদ্ধ

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১৫
অসার বিতর্ক, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের গালিগালাজ ও হত্যা নিষিদ্ধ

সূরা আনআম মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এই সূরার মোট আয়াত সংখ্যা ১৬৫টি।

পবিত্র কোরআনে কারিমের রীতি অনুযায়ী মক্কি সূরায় সাধারণত ইসলামের মৌলিক বিষয়সমূহের আলোচনা থাকে। সূরা আনআমও এর ব্যতিক্রম নয়। এ সূরায় ইসলামি বিধি-বিধানের কিছু মূল বিষয় আলোচিত হয়েছে।

সূরা আনআম পবিত্র কোরআনে কারিমের ষষ্ঠ সূরা। এই সূরা এমন সময় মক্কায় নাজিল হয়েছিল যখন মক্কার মুশরেকরা ইসলামের আহ্বান উপেক্ষা করে ও তা প্রতিরোধের জন্য ব্যাপক কঠোরতার পথ অবলম্বন করেছিল।

সূরা আনআমে মূলত ইসলামের তিনটি প্রধান মূলনীতি তথা একত্ববাদ বা তাওহিদ, নবুওয়ত ও পরকালসহ অন্যান্য বিশ্বাসের ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে একত্ববাদ প্রসঙ্গে। আল্লাহতায়ালা যে এক ও অদ্বিতীয় তার নানা প্রমাণ তুলে ধরা হয়েছে এই সূরায়। বলা হয়েছে, আল্লাহতায়ালা বিশ্ব-জগতের একচ্ছত্র মালিক সৃষ্টিকর্তা, মালিক ও পরিচালক। যাবতীয় শিরক ও মূর্তি পূজার বিরুদ্ধে লড়াই এ সূরার অন্যতম লক্ষ্য।

পুরো সূরা আনআম পবিত্র কাবা ঘরের কাছে বিশ্বনবী (সা.)-এর কাছে এক বারে নাজিল হয়েছিল।

এই সূরায় খোদাদ্রোহীদের ও সত্য অস্বীকারকারীদের পরিণতি কি হয়েছে, তা দেখার জন্য আল্লাহতায়ালা মানুষকে বিভিন্ন স্থান ভ্রমণ করার ও এ নিয়ে চিন্তাভাবনার পরামর্শ দিয়েছেন। সূরা আনআমের ১১ নম্বর আয়াতে শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে লক্ষ্য করে আল্লাহতায়ালা বলছেন, ‘বলে দিন, তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমণ কর, অতঃপর দেখ, মিথ্যারোপকারীদের তথা আল্লাহর নিদর্শন অস্বীকারকারীদের পরিণাম কি হয়েছে?’ বস্তুত অতীতের বিভিন্ন জাতিগুলোর নানা নিদর্শন দেখার মাধ্যমে মানুষ সত্যকে ভালোভাবে বুঝতে পারে, তার চিন্তার জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারে- তাই মানুষকে বিভিন্ন স্থান ভ্রমণের কথা বলা হয়েছে। সে হিসেবে ইসলাম মনে করে, শুধু আমোদ-আহলাদ আর চোখের পরিতৃপ্তির জন্য ভ্রমণ নয়, ভ্রমণ হতে হবে শিক্ষা অর্জনের উদ্দেশ্যে।

সূরার নাম আনআম রাখার কারণ হলো, এই সূরায় বিভিন্ন চতুষ্পদ জন্তু ও গৃহপালিত পশু সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। সূরার ১৩৭ নম্বর আয়াত থেকে ১৪৫ নম্বর আয়াতে চতুষ্পদ জন্তু ও গৃহপালিত পশু সম্পর্কে কাফেরদের নানা ভুল ধারণা এবং কুসংস্কারের বিষয়সমূহ তুলে ধরা হয়েছে।

এই সূরায় আল্লাহতায়ালা পর্ববর্তী জাতিগুলোর শিক্ষামূলক ঘটনা, ইহুদিদের অসার অবাস্তব প্রশ্ন ও তার জবাব, বিশ্বনবী (সা.)-কে ধৈর্যধারণের উপদেশ বিষয়ে বিভিন্ন হুকুম নাজিল করেছেন। সেই সঙ্গে কাফেররা ঈমান আনবে, নবী (সা.)-এর এমন প্রত্যাশার জবাব দেয়া হয়েছে। এ সূরায় আরও বলা হয়েছে আল্লাহতায়ালা অবিশ্বাসীদের বিভিন্ন নেয়ামত দিয়ে অবকাশ দেন, তবে তারা আল্লাহর দৃষ্টিসীমার বাইরে নয়।

সূরা আনআমে অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ঐশী বিধি-বিধানের রদ-বদলের বিষয়টি নবীর অজানা, সেই সঙ্গে অদৃশ্যের জ্ঞানও। এসব শুধু আল্লাহতায়ালাই ভালো জানেন, এটা তার নিয়ন্ত্রণাধীন বিষয়। এছাড়া ধর্মীয় বিষয়ে ধনী-দরিদ্ররা সমান। এখানে কোনো ভেদাভেদ নেই। আল্লাহর কাছে মানুষের গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তি হলো ইবাদত-বন্দেগি। এরই ভিত্তিতে তার স্থান নির্বাচিত হয়। উল্লেখিত বিষয়সমূহ হলো, সূরা আনআমের প্রধান প্রধান আলোচ্য বিষয়।

এ ছাড়া সূরা আনআমে কিয়ামতের দিন কাফেরদের অনুতাপের বিষয়টি আলোচিত হয়েছে। তারা কিয়ামতের দিন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ না করে কী কী ভুল করেছে সেটা মনে করে বিভিন্ন শব্দে আফসোস করতে থাকবে। সূরা আনআমে মৃত্যুর ফেরেশতার মাধ্যমে কীভাবে রুহ কবজ করা হবে সেই বিবরণও দেয়া হয়েছে।

সূরা আনআমে মুসলমানদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে সব ধরনের অসার বিতর্ক থেকে দূরে থাকতে, কাফেরদের গালিগালাজ না করতে, আল্লাহর নাম না নিয়ে জবাই করার পশুর গোশত না খেতে, অপচয় না করতে, অবৈধভাবে কাউকে হত্যা না করতে ও অন্যের সম্পদ আত্মসাত না করতে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৬ ঘন্টা, আগস্ট ১০, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।