ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ইসলাম

‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস’

মুমিন নারী-পুরুষ একে অপরের অভিভাবক, বন্ধু ও সাহায্যকারী

মুফতি এনায়েতুল্লাহ, বিভাগীয় সম্পাদক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৫
মুমিন নারী-পুরুষ একে অপরের অভিভাবক, বন্ধু ও সাহায্যকারী

আজ ২৫ নভেম্বর, বুধবার। আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস।

নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতা প্রতিরোধের আহবান নিয়ে দিবসটি পালিত হয়। নারী নির্যাতন দূরীকরণে সচেতনতা বাড়াতে দিবসটি পালনের গুরুত্ব অনেক বেশি।

শিশু ও নারী নির্যাতনের ঘটনা আজকাল এমন আকার ধারণ করেছে, যা সত্যিই দুঃখজনক ও জঘন্যতম। তাই বিষয়টি প্রতিরোধের জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ইসলামের বিধি-বিধান বেশ গুরুত্বপূর্ণ। চিরতরে নারী নির্যাতন বন্ধ করতে হলে, ইসলামকে বাদ দিয়ে তা করা যাবে না।

ইসলাম মনে করে, নারী ও পুরুষ অখণ্ড মানব সমাজের দু’টি অপরিহার্য অঙ্গ। পুরুষ মানব সমাজের একটি অংশের প্রতিনিধিত্ব করলে, আরেকটি অংশের প্রতিনিধিত্ব করেন নারী। নারীকে উপেক্ষা করে মানবতার জন্য যে কর্মসূচী তৈরি হবে তা হবে অসম্পূর্ণ।

ইসলাম এমন কোনো সমাজের কথা বলেনি, যা কেবল পুরুষ নিয়ে গঠিত, যেখানে নারীর প্রয়োজন অনুভূত হয় না। প্রকৃতপক্ষে প্রতিটি সমাজেই নারী ও পুরুষ সমানভাবে পরস্পরের মুখাপেক্ষী। তাই ইসলাম শুরু থেকেই সর্বতোভাবে নারী-নির্যাতনের বিপক্ষে সোচ্চার।

এ লক্ষে ইসলাম নারীর শিক্ষা অর্জনের অধিকার, সম্পত্তির অধিকার, স্বাধীন চিন্তা ও মত প্রকাশের অধিকার ইত্যাদির নিশ্চয়তা বিধান করেছে। ইসলাম শরিয়তের সীমার মধ্যে থেকে অর্থনৈতিক ব্যাপারে শ্রম-সাধনা করারও অনুমতি দিয়েছে নারীকে।

ইসলাম নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলেছে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে। সেই সঙ্গে নারী পাচার, নারীকে বেশ্যাবৃত্তিতে নিয়োগ, যৌন হয়রানি, গর্ভবতী নারীদের নির্যাতন, সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত করা, বিয়ের দেন মোহর না দেয়া, মেয়েশিশুকে শ্রমে বাধ্য করা, নারী শ্রমের সঠিক মুল্যায়ন না করা, নারীকে পণ্য হিসেবে ব্যবহার করা, নারীর ধর্মীয় অধিকার হরণ করা ও তালাকের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে ইসলাম অত্যন্ত কঠোর। ইসলাম স্পষ্টভাষায় এসব কাজের তীব্র বিরোধীতা করে এমন জঘণ্য কাজের জন্য জন্য আলাদা আলাদা শাস্তির কথাও বলেছে।

ইসলাম শুধু নারীর মান মর্যাদা ও ইজ্জত-আবরুর হেফাজতই করেনি, বরং নারী যাতে কোনোক্রমেই দৈহিক কিংবা মানসিকভাবে অত্যাচারিত ও নির্যাতিত না হযয়- তেমন দিক-নির্দেশনা দিয়েছে এবং তদনুযায়ী নিয়ম-পদ্ধতি ও বিধান জারী করেছে।

ইসলাম নারীর সার্বিক নিরাপত্তা বিধান করেছে। রাস্তায়, কর্মস্থলে ও যত্রতত্র নারীদেরকে হয়রানি করা তো দূরের কথা বরং ইসলাম নারীদের সৌন্দর্যের প্রতি দৃষ্টি না দিয়ে অবনত রাখার নির্দেশ দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মুমিনদেরকে বল, তারা যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং নিজদের লজ্জাস্থান হেফাজত করে। এটা তাদের জন্য পবিত্রতম। ’ -সূরা আন নূর: ৩০

ইসলাম ব্যভিচার, দেহব্যবসা, নগ্নতা, বেহায়াপনা, অশ্লীলতা ও দেহপ্রদর্শনীকে নিষিদ্ধ করেছে। নারীকে যে কোনো ছুতোয় দৈহিকভাবে কিংবা মানসিকভাবে নির্যাতন করা ইসলামি শরিয়তে বৈধ নয়। স্বয়ং হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজের জীবনে তার কোনো স্ত্রী কিংবা কন্যার গায়ে হাত তোলেননি। বরং নিষেধ করেছেন। এর পরও যদি কেউ নারী নির্যাতন করে থাকে, তাহলে আখেরাতে তাকে এজন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। এ ব্যাপারে বর্ণিত পবিত্র কোরআনের আয়াত ও হাদিসের সংখ্যা অনেক।

নারীকে রক্ষায় ইসলামের এমন ব্যাপক কর্মযজ্ঞ, কর্মসূচি, বিধি-বিধানের চর্চা বা অালোচনা না থাকায় অনেকের মনে এ ধারণা বদ্ধমূল হয়ে অাছে যে, ইসলাম নারীকে গৃহবন্দী করে রেখেছে। ইসলাম নারীকে ঠকিয়েছে। আসলে বিষয়টি তেমন নয়।

ইসলাম যেমন নারীকে দিয়েছে সকল ন্যায্য অধিকার, তেমনি তাকে হেফাজতের ব্যবস্থা করেছে সকল প্রকার নির্যাতন থেকে। কেননা ইসলামি বিধান তো ওই মহান সত্ত্বার কাছ থেকে অবতারিত- যিনি নারীর স্রষ্টা। সুতরাং নারী-নির্যাতনমুক্ত সমাজ বিনির্মাণ করতে হলে ধর্মীয় অনুশাসন অনুসরণের কোনো বিকল্প নেই। যদি প্রকৃতই ইসলাম মেনে চলা হয়, তাহলে নারীর নির্যাতিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই; থাকতে পারে না।

নারীদের কাছে ইসলাম এটাই প্রত্যাশা করে যে, তারা শালীন ও সম্ভ্রমশীল পোশাক পরিধান করবেন। তাদেরকে এই উপদেশও দেয়া হয়েছে যে, তারা যেন এমনভাবে চলা-ফেরা না করেন, যার দরুন অবাঞ্ছিত লোকেরা তাদের দিকে কুদৃষ্টি দিতে পারে।

ইসলাম নিঃসন্দেহে পর্দাপ্রথার মাধ্যমে নারী জাতিকে মর্যাদা ও সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করেছে এবং তাকে এমন এক নিরাপত্তা দান করেছে, যার ফলে একজন নারী অধিকতর স্বাচ্ছন্দে তার কাজকর্মসমূহ সমাধা করতে পারে। পর্দা মুসলিম নারীকে প্রশান্তি দান করেছে। তাকে সম্মানের আসনে সমাসীন করেছে।

দেখুন, ইসলাম মনে করে- একজন মুসলিম নারী তার প্রতিভা ও মননশীলতার বিকাশের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ স্বাধীন। এ জন্য তাকে কোনোরূপ শারীরিক সৌন্দর্যের ওপর নির্ভর করতে হয় না, তাকে পণ্য হিসেবে বিবেচিত হতে হয় না। এর চেয়ে পরম সুখের কথা আর কী হতে পারে?

আজকে মেয়েদের আসল কাজ কী তা নিয়ে কথা উঠছে। তারা কি ঘরে বসে থাকবে- এমন প্রশ্ন উঠছে। কোনো মেয়ে যদি তার স্বাধীন সিদ্ধান্তে ঘরে থাকতে চায়, তবে তার সেটা করার অধিকার আছে। পুরুষের ক্ষেত্রেও বিষয়টি প্রযোজ্য। কিন্তু আল্লাহতায়ালা কোথাও বলেননি যে, নারীদের ঘরেই বসে থাকতে হবে, বাইরের কাজ নারীরা করতে পারবে না।

সূরা তওবার ৭১ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, নারী পুরুষের দায়িত্ব ছয়টি। ওই আয়াতে বলা হয়েছে, ‘মুমিন পুরুষ এবং মুমিন নারী একে অপরের অভিভাবক, একে অপরের বন্ধু, একে অপরের সাহায্যকারী। ’ সেই বন্ধুকে, সহযোগীকে আপনি কোন ক্ষমতাবলে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখবেন? তার গায়ে হাত তুলবেন? তার প্রতি অবিচার করবেন? তাকে ঠকাবেন? এমন কাজী বন্ধুত্বের দাবী?

সংক্ষেপে বলা চলে, বর্ণিত আয়াতখানাই হলো- নারীর প্রতি ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গির রাজতোরণ। এর অন্যথা ভাবার কোনো অবকাশ নেই। আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবসে বিষয়টি সবাইকে ভেবে দেখার আহবান রইল।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৫
এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।